
প্রশাসেনর প্রভাব খটিয়ে ওয়ারিশ সনদ জাল জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রামে মোশফিকা কাদের হেলেন নামে এক নারীকে তার পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের সাবেক এক ডিআইজির বিরুদ্ধে।
এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে পুলিশ হেডকোটারে দুই দফা অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী নারী মোশফিকা কাদের। অভিযোগের ভিক্তিতে বিষয়টি তদন্ত করছে চট্টগ্রাম সিআইডি।
লিখিত অভিযোগে তিনি জানান, আমার পিতা মরহুম এসএম ফজলুল কাদের, মাতা খালেদা বেগম,স্বামী সহিদুল ইসলাম। আমরা ৭ বোন এবং সর্ব কনিষ্ঠ ১ ভাই, যার জন্মের মাধ্যমে মা-বাবার একটা ছেলে সন্তানের আশা পুরণ হয়। আমি ৮ ভাই বোনের মধ্যে পঞ্চম। একমাত্র ভাই এস এম ইশতিয়াক আহমেদের অবস্থান অষ্টম। পিতার মৃত্যুর পর সেই একমাত্র ছেলে সন্তান যখন উচ্ছন্নে গিয়ে বাবার তাজ্য হয়, সম্পত্তি বিক্রিকে জীবিকার একমাত্র অবলম্বন হিসাবে বেছে নেয়।
আর মা, বোনদের ইমোশনাল ব্লেকমেইল করে মাদকাসক্তিতে ডুবে নিমগ্ন থাকে। সেইসাথে অহরহ তার নির্লজ্জ, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও বিভীষিকময় ভুমিকা কিভাবে আমাকে, আমার স্বামী এবং সন্তানদের নানাভাবে পীড়িত ও ভোগান্তিতে ফেলে।
তিনি বলেন-আমি ও আমার স্বামী এবং আমার প্রাণপ্রিয় সন্তানেরা কতিপয় সম্পদ লোভী এবং ক্ষমতাবান মানুষের লোলুপ ষড়যন্ত্রের খপ্পরে পড়ে বর্তমানে অতি মানবেতর জীবন যাপন করছি। হতাশা আর আতংকে কাটছে আমাদের প্রতিটা মূহূর্ত, প্রতিটি প্রহর। সম্পদলোভী কয়েকজন বোন, একমাত্র ভাইয়ের কুৎসিত- কদাকার ভাবমুর্তি দেখে আমার সন্তানেরা মানসিক ভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এসব ঝামেলা হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য সকল অভিবাবকদের দ্বারস্থ হয়েও কোন রূপ প্রতিকার না পেয়ে আমি বিজ্ঞ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি ন্যায্য বিচার ও প্রতিকার পাওয়ার আশায়।
আমার পরিবারের কয়েকজন বোন ও একমাত্র মায়ের পেটের ভাই আমার প্রতি অমানবিক ও অন্যায্য আচরন করছে। আমার পিতার ঔরশজাত ওয়ারিশ মোট নয়জন (৭ বোন, ১ ভাই ও মা) যা ওয়ারিশ সনদে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। কিন্ত, গত ০৪.১০.২০২০ ইং তারিখে ৯ জনের মধ্যে ৭ জন জাল জালিয়াতি দলিল সৃজন করে বন্টন দলিল রেজিষ্ট্রি করে। ফলে ২ জন ওয়ারিশকে (একজন আমি নিজে এবং অন্যজন আমার আরেক বড় বোন ফৌজিয়া কাদের) আমাদের বাবার তাজ্য সম্পত্তির প্রাপ্য হক হতে বঞ্চিত করা হয়। শুধু পিতার সম্পত্তি হতে বঞ্চিতও নয়,বরং আমার পিতা জীবিত থাকা অবস্থায় তার নিকট হতে কিনে নেওয়া ফ্ল্যাটও তারা জালিয়াতির মাধ্যমে নিজেদের নামে রেজিষ্টি করে নেয়।
তারা পরস্পর যোগসাজগে ও ক্ষমতার দাপটে অন্ধ হয়ে যায়। সম্পদের লোভে দিনে দুপুরে চরম জালিয়াতি সম্পন্ন করেছে। আমার পরিবারের নয় জন ওয়ারিশের স্থলে ২ জন ওয়ারিশকে বাদ দিয়ে ৭ জনের জাল ওয়ারিশ সনদ বানিয়ে পরস্পর আপোষ বন্টননামা দলিল রেজিষ্টি করেছে।
আমার পিতা জীবিত অবস্থায় যে কয়েকটি ফ্লাট বিক্রি, রেজিষ্টি ও বায়না চুক্তি করেছেন, সেগুলোও বাদ না দিয়েই সম্পূর্ন সম্পত্তি তাহারা অধিক লাভবানের জন্য নিজেদের মধ্যে বন্টন করে নিয়েছে। নির্মানাধিন বর্তমানে দৃশ্যমান ৭ তলা বিল্ডিং হলেও ৮ম, ৯ম ও ১০ম তলার ফ্লাট বন্টন দলিল রেজিস্ট্রেশন সহ জালিয়াতির মাধ্যমে নামজারি খতিয়ান পর্যন্ত করে নিয়েছে, যাহা সম্পুর্ন প্রচলিত আইন বহির্ভূত। জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট দলিলের মাধ্যমে ফ্লাট বিক্রি করে চলেছে নগরীর হালিশহর কে-ব্লকে বাবার সুরমা হাউস নিজ হাতে গত আশির দশকে নির্মিত ৪ তলা ভবনের দৃশ্যমান অস্তিত্ব বর্তমানে বিরাজমান থাকা সত্বেও বন্টন দলিলে উহাকে ভিটা জমিন দেখানো হয়েছে। ।দুই বোনের সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য মাকে ব্যবহার ও অপব্যবহার করা হয়েছে বারংবার। আমার সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য আমার এবং আমার স্বামীর বিরুদ্ধ হয়রানি মূলক মিথ্যা, বানোয়াট ও সাজানো মামলাসহ মারধর ও প্রান নাশের হুমকি ধামকি, বাচ্চাদের ক্ষতিগ্রস্থ করার জন্য টেষ্টা করা হচ্ছে। তাছাড়া, নাগরিক সোসাইটির সিকিউরিটিকে আমাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া সহ নানাভাবে অত্যাচার ও উত্যক্ত করে আসছে, যাতে আমরা আমাদের ভোগ দখলকৃত ফ্ল্যাট ও সম্পত্তি ছেড়ে অন্যত্র কোথাও চলে যাই।
ভুক্তভোগী মোশফিকা কাদের অভিযোগ করে বলেন, আমার ভাই বোনদের এসব অপকর্মের মূলহোতা হিসেবে প্রভাব বিস্তার করছেন আমার বড় বোন ফারাজানা কাদেরের স্বামী পুলিশের সাবেক ডিআইজি মেজবা উন নবী মাসুদ সাহেব।
এখানে উল্লেখ্য যে, হেবা মুলে রেজিষ্ট্রিকৃত ফ্লাটে আমি আমার পরিবারসহ ২০১৯ সাল থেকে বসবাস শুরু করি। ফ্লাটটি আমার বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় আমার নামে রেজিষ্ট্রি করে দিয়ে যান। দলিলে সুষ্পষ্ট উল্লেখ আছে আমাকে একটি সম্পূর্নভাবে নির্মাণ করা ফ্লাট বুঝিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু আমার বাবা জীবিত অবস্থায় দশ তলা বিল্ডিংয়ের মাত্র ৬ তলা পর্যন্ত ছাদ নির্মাণ করেন এবং চারতলা পর্যন্ত ফ্লাটগুলো ইটের দেয়ালের নির্মাণ সম্পন্ন করতে পারেন। তাঁর অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করার জন্য পারিবারিক বৈঠকের মাধ্যমে আমার একমাত্র ভাই ইশতিয়াক আহমেদকে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়।সে আমার ফ্লাটসহ আরও দুইটি ফ্লাট, যাহা আমার বাবা জীবিত অবস্থায় বিক্রি করে গেছেন, সেগুলো আমাদের থেকে টাকা নিয়ে রেডী করে দেয়। এরপর আমরা উক্ত ফ্লাটে বসবাস শুরু করি এবং আত্মীয় স্বজনের সাথে খুব ভাল সম্পর্ক বিরাজ করে। কিছুদিন পর হঠাৎ করে আমার একমাত্র ভাই ও কয়েকজন বোন এবং অন্যান্য আত্মীয় স্বজন আমার স্বামী এবং আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করা শুরু করে। দারোয়ান দিয়ে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি ও অপমান করা শুরু করে।
২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আমি হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালে আমার স্বামী সহিদুল ইসলামের উপর হামলা করে উল্টো মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে পুলিশকে দিয়ে আটক করায়। আর এসবের মূল হোতা ছিলেন সাবেক ডিআইজি মেজবা উন নবী মাসুদ।ডিআইজি সাহেব প্রভার খাটিয়ে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে আটক করায়। দায়িত্ব প্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আমার সাথে কথা বলে সত্য ঘটনা জানার পর আমার স্বামীকে ছেড়ে দেয়।
পরে তারা আমি ও আমার স্বামীকে মামলা দিয়ে হয়রানি করে।
মোশফিকা কাদের আরো বলেন, আইনের আশ্রয় নিতে আমার স্বামী নগরীর বায়েজিদ থানায় অভিযোগ দায়ের করার পরও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। আবারও জিডি করি। জিডির তদন্ত করা হলেও সঠিক রিপোর্ট প্রভাবিত হয়ে প্রদান করা হয়নি। ভিডিও তে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আমার স্বামীকে মারছে। অথচ, তারপরও পুলিশ রিপোর্ট দিয়েছে যে, অভিযোগের কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মেজবা উন নবী মাসুদ বলেন, এসব বিষয়ে আমার কোন বক্তব্য নাই। আমি এই অভিযোগের বিষয়ে কিছুই জানি না। এটা তাদের বিষয় এখানে আমার করার কিছুই নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে কে অভিযোগ করেছে আমি জানি না। কেউ তদন্তের বিষয়েও জানতে চাননি।
খবর নিয়ে জানা গেছে, নারাজির বিষয়ে পূন:রায় তদন্তের জন্য সিআইডি হেডকোর্টারে ফের আবেদন করা হলে সিআইডি থেকে চট্টগ্রাম সিআইডির বরাবরে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগটি তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর জহিরুল ইসলাম পাঠক নিউজ ডটকমকে বলেন, আমার কাছে তদন্তের জন্য একটি অভিযোগ এসেছে। তবে এখনো আমি ফাইলটি ভালো করে দেখতে পায়নি। শীঘ্রই তদন্ত শুরু করবো।