
সরকার পতনের একদফার দাবিতে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগের কর্মসূচি কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামমুখি রোডমার্চ আজ বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
কুমিল্লা থেকে শুরু হওয়া রোডমার্চ ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে ফেনী মীরসরাই পথসভা শেষে চট্টগ্রামের সিটি গেট, একে খান মোড়, আকবর শাহ, ফয়স লেক, জিইসি মোড় হয়ে কাজির দেউড়ী মোড়ের সমাবেশে যোগ দেবে। বিকাল ৩টায় কাজীর দেউড়ী মোড়ের সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে বলে দলের বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া রোডমার্চে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, রকতউল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, মীর মো. নাছির উদ্দিন, মাহবুবের রহমান শামীম, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিসহ কেন্দ্রীয়, জেলার নেতাদের।
বিএনপির নেতারা জানান, আজকের এই রোডমার্চ কর্মসূচি শেষে চট্টগ্রামের সমাবেশ থেকে আসতে পারে একদফার কঠোর কর্মসূচি।

এদিকে রোডমার্চকে ঘিরে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বিভাগের নেতাকর্মীরা। গত একমাস ধরে জেলায় জেলায় চলছে প্রস্তুতি। চট্টগ্রাম জুড়ে সাটানো হয়েছে বিশাল বিশাল ব্যানার, শত শত পোষ্টার, প্লেকার্ড, পেষ্টুনে সুসজ্জিত হয়ে উঠেছে বন্দর নগরী। ব্যাপক সংখ্যক সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চলছে নানা প্রস্তুতি সভা ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচী। এরমধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি সাংগঠনিক জেলায় প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটকেও সাংগঠনিক চিঠি ও মৌখিক নির্দেশনা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। থানা, ইউনিয়ন পর্যায়েও প্রস্তুতি সভা করা হচ্ছে। প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকতে সাধারণ মানুষের কাছে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। এরমধ্যে করা হয়েছে কয়েকটি সমন্বয় কমিটি।
সকালে কুমিল্লা থেকে শুরু হওয়া এ রোডমার্চে মোট চারটি জনসভা হবে। সকাল ১০টায় প্রথম সভাটি হবে কুমিল্লায়। এই সভা শেষে রোডমার্চ রওনা হবে ফেনীর পথে। ফেনীর মহিপালে হবে দ্বিতীয় জনসভা। তৃতীয়টি হবে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা সদরে। এরপর চট্টগ্রাম নগর বিএনপি’র কার্যালয় নাসিমন ভবন সংলগ্ন কাজীর দেউড়ি মোড়ে সমাবেশের মাধ্যমে এই কর্মসূচি শেষ হবে।
সূত্রমতে, সরকারের শেষ পর্যায়ে এসে বড় এই কর্মসূচিকে ঘিরে দারুণভাবে উজ্জীবিত বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা। প্রস্তুতি সভা, সমন্বয় সভা, প্রচারপত্র বিলিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নিচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও চালানো হচ্ছে প্রচারণা। এরমধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দলীয় কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীদের অনেককেও এই প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে।
এদিকে রোডমার্চকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আনন্দের পাশপাশি শঙ্কাও বিরাজ করছে। সংঘাতেরও আশঙ্কা রয়েছে বিভিন্ন স্থানে। এরমধ্যে মিরসরাই উপজেলায় গত শুক্রবার বিকালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের বাড়িতে প্রস্তুতি সভাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে একপক্ষের আঘাতে রোমান নামে এক দোকান কর্মচারীর মৃত্যু হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। আর বিএনপি’র লোকজন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। তাই সেই মিরসরাইতে আবারও সমাবেশ ঘোষণা করায় কিছুটা উত্তেজনা বিরাজ করছে উভয় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। অনেক ফেনীতেও সংঘাতের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
রোডমার্চের সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি’র বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, আমরা রোডমার্চ বাস্তবায়নে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। নেতাকর্মীরা রোডমার্চে অংশ নিতে অধীর আগ্রহে বসে আছে। আমাদের প্রস্তুতি সভা কিন্তু লিফলেট বিরতণ কর্মসূচীর দিকে নজর দিলেই বিষয়টি ক্লিয়ার হয়ে যাবে।
রোডমার্চকে ঘিরে চট্টগ্রাম মহানগরীতে সুসংগঠিত উল্লেখ্য করে নগর বিএনপি’র আহবায়ক ডাঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, আমাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন। আজ কাজীর দেউড়ী মোড় জনসমুদ্রে রূপ নিবে ইনশাল্লাহ। দলের মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন। সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল। বিএনপি গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী গণমানুষের দল।
রোডমার্চ ও সমাবেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে কিনা জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) আবু তৈয়ব মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘এ রকম কোনো মেসেজ আপাতত আমাদের কাছে নেই। নতুন করে কোনো সংঘাত হবে না বলে আশা করছি। আর বিএনপি’র পক্ষ থেকে কর্মসূচির বিষয়টি আমাদেরকে জানানো হয়েছে।