
দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে ফিশিং বোটে দুর্ধর্ষ গণডাকাতির চেষ্টাকালে বিপুল পরিমান আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ ৩০ জলদস্যুকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৭ এর অভিযানিক দল। জব্দ করা হয়েছে গণডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ২টি ট্রলার।
আজ সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারী) ভোরে বঙ্গোপসাগরে এই রুদ্ধশ্বাস অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোঃ মাহবুব আলম, পিপিএম, পিএসসি।
গ্রেপ্তাররা হলেন করিম (৩৩), মো. রুবেল (৩৩), মো. জফুর (৩৫), শফি আলম (৪০), আব্দুর রহিম (২৫), মো. শামীম (২১), মো. ইউসুফ (২৯), শাজাহান বেগম (৩৭), মো. সাহাব উদ্দিন (৩৫), মো. শওকত (৩৭), মো. ইসমাইল (২৬), দেলোয়ার ইসলাম (৪২), নুর মোহাম্মদ (১৭), আব্দুর রহিম সিকদার (৩৪), মো. মফিজুর রহমান (৩০), ফজল হক (৪০), মো. গিয়াস উদ্দিন (২৬), মো. কাছেদ (১৯), মো. আকিদ খান (৩৭), দিদারুল ইসলাম (৩৩), নাইম (১৯), হারুন (৪৪), ইয়াছিন (২৯), খলিলুর রহমান (২৫), ইকবাল হোসেন (২৪), শাহেদ (২২), হোসেন (২৭), আলী হোসেন (২৪), আব্দুল মান্নান (৪০) এবং মো. সোলায়মান (৩৮)।

র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো. মাহবুব আলম বলেন, ‘সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরের গভীরে ডাকাতির পর অনেক জেলেদের হত্যা করেছিলো জলদস্যুরা। সেসময় আমরা অনেক জলদস্যুকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছিলাম। কিন্তু আমরা নজরদারি অব্যাহত রেখেছিলাম। আমরা জানতে পেরেছি, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকা থেকে ৩০-৪০ জনের একটি গ্রুপ একটি গণডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে। সবশেষ আমরা গতকাল (রবিবার) জানতে পারি ডাকাত দলটি রাত ১১টার দিকে গণডাকাতির উদ্দেশ্যে ঘাট এলাকা ত্যাগ করে। পরবর্তীতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা দল এবং আমাদের একটি আভিযানিক দল ডাকাতদের ট্রলারটি সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এরপর তাদের আমরা গ্রেপ্তার করি এবং তাদের কাছে থাকা ২টি ট্রলার থেকে ৮টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৫টি কার্তুজসহ ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিপুল পরিমান সরাঞ্জাম উদ্ধার করি।’

র্যাব জানিয়েছে, গ্রেপ্তার শাহেদ মাঝী প্রথম গ্রুপের দলনেতা। সে কুতুবদিয়া এলাকার বাসিন্দা। তার দলের কাজ ছিল ডাকাতি করার জন্য অস্ত্র, বোট, জাল এবং আনুসাঙ্গিক যে সকল সরঞ্জামাদি লাগতো সেগুলো সরবরাহ করা। তার দলে কাজ করতো ৯ জন।
গ্রেপ্তার আরেক আসামি ইউসুফ মাঝী ছিল দ্বিতীয় গ্রুপের নেতা। তিনিই ডাকাতির মূল পরিকল্পণাকারী। প্রথমে ডাকাতির জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিবার্চন করত সে। ডাকাতির স্থান নির্বাচন করে নিজে সশরীরে হাজির থেকে ডাকাতির কার্যক্রম সম্পন্ন করত তিনি। ইউসুফ মাঝীর দলে ১১ জন ডাকাত সদস্য ছিল।
গ্রেপ্তার করিম মাঝী ছিল তৃতীয় ডাকাত গ্রুপের নেতা। তার কাজ ছিল ডাকাতির পরে লুট করা বোট, মাছ, জাল এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করে সুবিধামত বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা এবং সেই টাকা গ্রুপের সকল সদস্যকে সমানভাবে বন্টণ করা। তার দলে ১০ জন ডাকাত সদস্য ছিল। ডাকাত সর্দার ইউসুফ মাঝী এবং করমি মাঝীর নিজস্ব বোট ও কোম্পানী রয়েছে। যা দিয়ে তারা মাঝীর ছদ্মবেশে সমুদ্রে দস্যূতার কার্যক্রম পরিচলনা করতো বলে তথ্য পেয়েছে র্যাব।
এদিকে আজ সোমবার দুপুরে র্যাব-৭ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব আরও জানায়, প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ জনের ৩টি সশস্ত্র ডাকাত চক্র (ভোলা, বরিশাল, কুতুবদিয়া এবং আনোয়ারা এলাকায়) একত্রিত হয়ে সাগরে বড় পরিসরে দস্যূতার পরিকল্পনা করছে। চক্রটির পরবর্তী ১০-১২ দিনের মধ্যে প্রায় ১৫-২০টি ট্রলারে ডাকাতি করার পরিকল্পনা ছিল। ডাকাতি শেষে লুটপাটকৃত মাছ ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি ভোলা ও বরিশাল অঞ্চলের দিকে নিয়ে বিক্রয় করা হতো। পরবর্তীতে লভ্যাংশ আনোয়ারা-কুতুবদিয়া এলাকার জলদস্যুদের নিকট মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া হত। এই ডাকাত দল মূলত তিনটি পর্বে ভাগ হয়ে তাদের দস্যূতার কার্যক্রম পরিচালনা করত।