
চট্টগ্রামের ঐতিহ্য আব্দুল জব্বারের বলী খেলার ১১৫তম আসর বসেছে নগরীর লালদীঘির মাঠে। আজ (২৫ এপ্রিল, ১২ বৈশাখ) বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় খেলা শুরু হবে।
এবারের বলী খেলায় অংশ নিতে প্রতি বছরের মতো আগ্রহীরা আয়োজক কমিটির কাছে নাম জমা দিয়েছেন। আজ বেলা ১১টা পর্যন্ত আগ্রহীদের নাম নেয়া হয়। ইতিমধ্যে শতাধিক বলী নাম জমা দিয়েছেন।
প্রতিযোগিতার জন্য লালদীঘির মাঠে ১৬৫ খুঁটির ওপর তৈরি করা হয়েছে ‘বলী-যুদ্ধের’ মঞ্চ। ছয় ফুট লম্বার বড় বড় বাঁশের খুঁটি। এক ফুট মাটিতে ডুবে, বাকি পাঁচ ফুটের নজর আকাশের দিকে। সেসবের আগায় কাঠের তক্তা লাগিয়ে বানানো হয়েছে মঞ্চ। তার ওপরে দেওয়া হয়েছে বালির আস্তরণ।

আজ বৃহস্পতিবার বলী খেলার মূল আসর হলেও মেলা শুরু হয়েছে গত মঙ্গলবার। বুধবার দুপুর থেকে মেলায় ভিড় বাড়তে থাকে। সন্ধ্যায় প্রচুর ভিড় দেখা যায় মেলায়। লালদীঘি ময়দানসহ আশপাশজুড়েই বসেছে বৈশাখী মেলা।
অন্যদিকে তীব্র তাপপ্রবাহের এ সময় জব্বারের বলী খেলার আয়োজন করা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা মন্তব্য করা হচ্ছে। কেউ বলেছেন, খেলার আয়োজন ও মেলা অব্যাহত থাকুক। আবার কেউ মন্তব্য করেছেন স্থগিত করা হোক কিংবা সবাইকে বিজয়ী ঘোষণা করা হোক।
মেলার আয়োজককারীরা বলছেন-মেলাও চলবে আগের মতো। বন্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই।
আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি জহর লাল হাজারী বলেন, বলী খেলার জন্য মঞ্চ প্রস্তুত। বলীরা নাম নিবন্ধন করছেন। আজ বলীখেলার দিন। কাল ২৬ এপ্রিল রাত পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে মেলা চলবে।
তিনি বলেন, তাপপ্রবাহের কারণে বলী খেলার মূল আসরের সময় এক ঘণ্টা পেছানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বলী খেলা বেলা সাড়ে ৩টায় হওয়ার কথা থাকলেও হবে সাড়ে ৪টায়। ওই সময় তাপপ্রবাহ কমবে। জব্বারের বলী খেলা লালদীঘির ময়দানে হবে। ইতিমধ্যে শতাধিক বলী নাম জমা দিয়েছেন।

অন্যদিকে সরেজমিন দেখা যায়, নগরীর আন্দরকিল্লা মোড় থেকে লালদীঘি পারের পুরো এলাকায় পসরা সাজানো হয়েছে। মানুষের প্রচুর ভিড়। নানা ধরনের পণ্যের পসরা নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা পণ্য নিয়ে এসেছেন মেলায়। মেলায় গ্রাম-বাংলার বিভিন্ন লোকজ শিল্পের পাশাপাশি গৃহস্থালি পণ্য থেকে শিশুদের খেলনা, দা, ছুরি ও বঁটিসহ নানা ধরনের পণ্য মিলছে।
মেলা আয়োজক কমিটি জানায়, মেলা সুষ্ঠুভাবে আয়োজনে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ১৯০৯ সালে এই মেলার আয়োজন শুরু হয়। এরপর দুই বছর করোনা মহামারির কারণে জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলার ১১১ ও ১১২তম আসর বাতিল করা হয়। পরে আর বন্ধ হয়নি। প্রতি বছর যথাসময়ে মেলা ও খেলা অনুষ্ঠিত হয়। তাপপ্রবাহের কারণে খেলা অনুষ্ঠানে কোনো সমস্যা হবে না।
মেলার আয়োজকরা জানান, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে দেশের তরুণদের সংগঠিত করতে ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বকশিরহাটের ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর চালু করেছিলেন বলী খেলা। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।