ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

চট্টগ্রামে নয়া আতঙ্ক ‘শয়তানের নিঃশ্বাস’

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

চট্টগ্রাম নগরের অপরাধীরা ও শয়তানের নিঃশ্বাস নামে একটি চক্র স্কোপোলামিন নামের রাসায়নিক ব্যবহার করছে বলে প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। এটি ব্যবহারে কোনো অস্ত্র ছাড়াই ওই ব্যক্তির সবকিছু নিয়ে নিচ্ছে ছিনতাইকারী ও প্রতারক চক্র।

গত বুধবার (২২ মে) মো. জনি নামের অপরাধী চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর স্কোপোলামিন ব্যবহারের চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় পুলিশ।

নগরবাসীকে শয়তানের নি:শ্বাস থেকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল কাদের পাটোয়ারীর ঘটনাটির বর্ণনা লিখে নিজের ফেসবুকে পোস্ট দেন। অপরিচিত কেউ কোনো কাগজ কিংবা জিনিসপত্র দিলে তা নাকের কাছে নেওয়া যাবে না বলে সতর্ক করেন তিনি।

পুলিশ কর্মকর্তা ফজলুল কাদের পাটোয়ারী সোমবার (২৭ মে) গণমাধ্যমকে বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ দেখতে পায়, ফাতেমা বেগম নামের এক নারী অপরাধী চক্রটির সদস্যদের পেছনে হেঁটে যাচ্ছেন। আর তাঁদের কথামতো নিজের কানের দুল, গলার চেইন খুলে দিচ্ছেন। যার মূল্য ৮০ হাজার টাকা। স্বর্ণালংকার ছাড়াও নিজের কাছে থাকা এক হাজার টাকা, মুঠোফোন ও বাজারের ব্যাগও দিয়ে দেন। দেখে মনে হচ্ছে, অপরাধীরা তাঁর পূর্বপরিচিত। পুলিশ বুঝতে পারে, ফাতেমার নাকের কাছে স্কোপোলামিন বা বুদ্ধিনাশক ওই রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়েছে। এরপর সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। পুরো চক্রটিকে গ্রেপ্তার করা গেলে বিস্তারিত জানা যাবে। চক্রের সদস্যদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ভুক্তভোগী ফাতেমা বেগম বলেন, সেদিন আমি তাদের হাতের পুতুল হয়ে গিয়েছিলাম। তারা যা বলেছে, তা–ই করেছি। পরে বাসায় আসার পর আমি বিষয়টি বুঝতে পারি। স্বামী ও সন্তানের সঙ্গে আলাপ করে থানায় মামলা করি। আমার মতো আর কেউ যাতে এই প্রতারণার শিকার না হন।

শয়তানের নিঃশ্বাস একটি হেলুসিনেটিক ড্রাগ। রাসায়নিকভাবে এটি স্কোপোলামিন নামে পরিচিত। স্কোপোলামিন একটি প্রাকৃতিক বা কৃত্রিমভাবে উৎপাদিত ট্রোপেন অ্যালকালয়েড এবং অ্যান্টিকোলিনার্জিক ড্রাগ।

এটি হায়োসিন, ডেভিলস ব্রেথ, শয়তানের নিঃশ্বাস, বুরুন্ডাঙ্গা, রোবট ড্রাগ, জম্বি ড্রাগ বা কলম্বিয়ান ডেভিলের নিঃশ্বাস নামেও পরিচিত। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকায় রয়েছে। রোগীকে অপারেশনের আগে অজ্ঞান করতে এটা ব্যবহার করা হয়।

এটি মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। দুর্বৃত্তরা লোকজনকে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটে নিতে এটি ব্যবহার করে। বর্তমানে এটি মাদক হিসেবে বা হেলুসিনেটিক ড্রাগ হিসেবে খুব ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ক্ষতির মাত্রা কোকেন থেকে বহুগুণ বেশি। বাংলাদেশের নয়া আতঙ্ক হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে এ মাদক। এর প্রভাব এতটাই ভয়ংকর যে, কোনো ব্যক্তিকে সেকেন্ডেই নিজের নিয়ন্ত্রণে অনায়াসেই আনা যায়। ফলে অনেক ব্যবসায়িক এবং করপোরেট সেক্টরেও কর্তাব্যক্তিদের এটি প্রয়োগ করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে থাকে প্রতারক চক্র।

অন্যের আদেশ পালন করতে বাধ্য করানোই হলো এ মাদকের মূলমন্ত্র। ভুক্তভোগীরা হেপনোটাইজ হয়ে অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যান। নানাভাবে ও নানা কৌশলে এটি প্রয়োগ করা হয়। যেমন, হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে, ঘ্রাণের মাধ্যমে, খাবারের সঙ্গে, চিরকুটের মাধ্যমে, কোমল পানীয়র সঙ্গে, বাতাসে ফুঁ দিয়ে।

স্কোপোলামিন তরল ও শুকনো দুই ফরমেটেই পাওয়া যায়। এ ড্রাগটি ৬ থেকে ১২ ইঞ্চি দূরত্ব থেকে শ্বাসের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে, যার প্রতিক্রিয়া থাকে ২০ থেকে ৬০ মিনিট। খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ালে এর প্রতিক্রিয়া থাকে দু-তিন দিন।

মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণে শয়তানের নিঃশ্বাসের প্রভাব

স্কোপোলামিন বা শয়তানের নিঃশ্বাস শরীরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মস্তিষ্কের প্রাথমিক স্মৃতি ব্লক হয়ে যায়। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি আক্রমণকারীকে দেখতে পেলেও চিনতে পারেন না এবং কিছু মনে রাখতে পারেন না। এর প্রভাবে শরীরে কোনো প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে না বা বাইরের কোনো আক্রমণে শরীর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানোর মতো অবস্থায়ও থাকে না।

এ অবস্থায় ভুক্তভোগীর আচরণ হয়ে যায় বশীভূত বা সুতায় বাঁধা পুতুলের মতো। তীব্র হেলুসিনেশন শুরু হয়। অন্যের দেওয়া আদেশকে যান্ত্রিকভাবে অনুসরণ করতে বাধ্য করে। মানে আপনি নিজে কিছু করতে পারবেন না, শুধু সামনের লোক যা বলবে তাই করবেন রোবটের মতো।

বর্তমানে এ মাদকটি মূলত প্রতারক চক্রের সদস্যরা ব্যবহার করে থাকে। কলম্বিয়ায় উৎপত্তি হলেও ইকুয়েডর ও ভেনিজুয়েলাতেও মাদকটির যথেষ্ট বিস্তার রয়েছে। এছাড়া পেরু, আর্জেন্টিনা, চিলি প্রভৃতি দেশে এটি মাদক হিসেবে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় এবং ওই দেশের অপরাধীরা বিভিন্ন বয়সি নারীদের দিয়ে নীলছবি ও অবাধ মিলনে বাধ্য করতে এটি ব্যবহার করে।

কলম্বিয়ায় উৎপন্ন হওয়া এ মাদকটি নিয়ে ১৮৮০ সালে সর্বপ্রথম জার্মান বিজ্ঞানী আলবার্ট লাদেনবার্গ গবেষণা শুরু করেন। ১৯২২ সালে এটি সর্বপ্রথম কারাবন্দিদের ওপর প্রয়োগ করা হয়।

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print