সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে সারাদেশে ৭ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীতে ২ জন, চট্টগ্রামে ৩ জন আর রংপুরে ২ জন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
চলমান সহিংসতার মধ্যে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় দেশের সব স্কুল ও কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়েরের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
এতে বলা হয়, ‘বিদ্যালয় ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসমূহের শ্রেণি কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।’
মঙ্গলবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দিনভর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এরমধ্যে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব, বাড্ডা ও মহাখালিতে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। কোটা আন্দোলনকারীরা মহাখালি রেলগেইট অবরোধ করলে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
রাজধানীতে প্রথম মৃত্যুর খবরটি আসে বিকেল ৫টার পর। গুরুতর আহত অবস্থায় এক যুবককে উদ্ধার করে এক পথচারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। পরে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। যুবকের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
চিকিৎসকের বরাত দিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন, ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া। তিনি বলেন, ‘গুরুতর আহত অবস্থায় এক যুবককে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর কানের নিচে মুখের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে হাসপাতালে নিয়ে আসা ওই পথচারীরা তাঁর নাম পরিচয় বলতে পারেননি।’
সন্ধ্যায় মো. শাহজাহান (৩০) নামের আরেক যুবকের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। তাকে রাজধানীর পপুলার হাসপাতাল থেকে মনিরকে অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। জানা গেছে, শাহজাহান নিউমার্কেটের সামনের ফুটপাতে পাপস বিক্রি করতেন।
এর আগে চট্টগ্রামের মুরাদপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে ফারুক নামের এক পথচারী ও ওয়াসিম নামের এক শিক্ষার্থী নিহতের খবর জানান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সাইফুল ইসলাম।
সিএমপি কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মুরাদপুরে একজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। আমরা ডিটেইলস নিচ্ছি। পথচারী। তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। আমাদের অফিসার গেছে দেখতে। একজন পথচারী আহত আছে। এটা এখনো কনফার্ম না। আঘাতে মারা গেছে এমন কিছু না। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার শরীরের আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। কোথাকার ঘটনা এটা এখনো জানতে পারিনি।’
শিক্ষার্থী ওয়াসিমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, নিহত শিক্ষার্থীর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই।
এর মধ্যে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ওই শিক্ষার্থীর সহপাঠীরাও এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, নিহত ওই শিক্ষার্থীর নাম আবু সাঈদ। তিনি বেরোবির ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
বিকেল সোয়া ৪টার পর পুলিশ সদস্যরা মহাখালি রেললাইন অবরোধ করা শিক্ষার্থীদের হটিয়ে দিতে চাইলে দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়া হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা সংঘর্ষের পর আন্দোলনকারীরা পিছু হটে এবং মহাখালিতে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
সংঘর্ষের সময় মহাখালিতে থেমে থেমে ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
এদিকে, বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির দাবি, সংঘর্ষের মধ্যে ৪ জন সহকারী প্রক্টর আহত হয়েছেন।
সন্ধ্যার পর আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থমথমে হয়ে ওঠে। পুলিশ ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থান নেন। এ সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনের সড়কে সহিংসতায় প্রাণহানির প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এ পরিস্থিতিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও বগুড়ায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবির এক বার্তায় বিজিবির এক বার্তায় বলা হয়, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া ও রাজশাহীতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
সোমবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ৩০০ জন আহত হন। সোমবার মধ্য রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে।