কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী হত্যা, হামলা, নির্যাতন ও আটকের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে “দায়ী” করে নিজের কার্যালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর ছবি সরিয়ে ফেলেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শামীমা সুলতানা। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন “জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম” এর সহ-সভাপতি।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সন্ধ্যায় নিজের কার্যালয় থেকে ছবি সরানোর বিষয়টি ঢাকা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেন এই শিক্ষিকা।
এর আগে দুপুরের দিক থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অধ্যাপক শামীমা সুলতানার অফিস কক্ষে বসা একটি ছবি ভাইরাল হয়।
ওই ছবিতে দেখা যায়, শামীমা সুলতানার পেছনের দেয়ালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙানো থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি নেই।
এই বিষয়ে অধ্যাপক শামীমা সুলতানা বলেন, “আমার মনে হয় মানুষের হৃদয় থেকে তার (শেখ হাসিনা) ছবি মুছে গেছে। তিনি কোটা আন্দোলন ঘিরে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছেন, আবার বার বার মিথ্যাচার করেছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নির্দেশ দিয়েছেন। তার হাতে অসংখ্য শিক্ষার্থীর রক্ত লেগে আছে। শিক্ষার্থীরা আমার সন্তানের মতো। যার হাত আমার সন্তানের রক্তে রঞ্জিত, তার ছবি আমার দেয়ালে রাখতে চাই না। তাই তার ছবি দেয়াল থেকে সরিয়ে ফেলেছি।”
উল্লেখ্য, ২০০২ সালের ২৭ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রীদের অফিস কক্ষ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাস, সব সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস কক্ষে সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতি টানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
এদিকে, শামীমা সুলতানার অফিসক কক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ছবি সরানোর ঘটনাকে আইনের লঙ্ঘন বলে মনে করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও অন্য শিক্ষকরা। তারা বলছেন, একজন পেশাজীবীর এমন কাণ্ড পেশাদারিত্বের লঙ্ঘনের শামিল।
এ বিষয়ে জাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবমাননা মেনে নেওয়ার মতো নয়। বাংলাদেশে এই বিষয়ে একটি আইন রয়েছে। যেকোনো সরকারি কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি টাঙিয়ে রাখতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত এ ছবি নামানো আইনগত নয়।”
তিনি বলেন, “ছাত্রদের হয়রানি কিংবা বেআইনিভাবে আটক যেমন আমাদের দেশের আইন সমর্থন করে না, তেমনই কোনো একটা আইন আছে, সেটা কেউ ভঙ্গ করতে পারেন না।”
বিষয়টি নিয়ে জাবির রেজিস্ট্রার আবু হাসান বলেন, “এটি তো আইনের লঙ্ঘন। যে কেউ করলেই সেটা আইনের লঙ্ঘন হয়। বিষয়টি ভিসি স্যার অবগত কি-না জানা নেই। আমিও কাজের ব্যস্ততায় সোশ্যাল মিডিয়া দেখিনি, ফলে বিষয়টি জানা নেই। এটা অপরাধ বটেই। জানলে কিছু একটা ব্যবস্থা হতো এতক্ষণে। খোঁজ নিয়ে দেখা হবে বিষয়টি।”