গণআন্দোলনে সরকার পতনের পর এখনো কার্যালয়ে আসেননি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক)মেয়রসহ অনেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর।এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসীরা। তবে কয়েকটি কার্যালয়ে কাজ চলছে সীমিত পরিসরে।
চসিকের ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ, জাতীয়তা সনদ, চারিত্রিক সনদ, উত্তরাধিকার সনদ, ওয়ারিশান সনদসহ প্রয়োজনীয় সব সনদ দেওয়া হয়। কাউন্সিলরদের স্বাক্ষর ব্যাতীত এসব সনদ দেওয়া যায় না। মঙ্গলবার (১৩আগস্ট) বিকালে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে , চসিক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।
৪০ নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল বারেক ,৩২নং আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী,১৬ নং চকবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর মোস্তফা টিনু, ২১ নং জামালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন ,১২ নং সরাই পাড়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ নুরুল আমিনের মোবাইল নাম্বারও বন্ধ পাওয়া যায় ।
নগরীর ২৪নংউত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক বলেন , আমি বাসা থেকে নাগরিক সেবা দিচ্ছি । আমার ওয়ার্ডে এসে কোন মানুষ সেবা না নিয়ে ফিরেনি। আমাদের অফিসের সবাই কাজ করছেন। আমি বাসায় বসে স্বাক্ষর করছি। গত দুই দিনে ৪০ টা জন্ম সনদে স্বাক্ষর করেছি। ২নং জালালাবাদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ শাহেদ ইকবাল বাবু বলেন,আমি গত দুই দিন ধরে নাগরিক সেবা দিয়ে যাচ্ছি । মানুষের মনে এখনো ভয় কাজ করছে। যারা জরুরী কাজের জন্য আসছেন আমরা সেবা দিচ্ছি । গত দুই দিনে আমি ১৫ টি জন্ম সনদে স্বাক্ষর করেছি ও ২ টি ওয়ারিশান সনদের আবেদন জমা নিয়েছি ।
৯ নং উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ জহুরুল আলম জসিম বলেন, কাউন্সিলর কার্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।পুড়ে গেছে কম্পিউটারসহ অনেক প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র। তাই এমুহূর্তে চালু করা যাচ্ছে না কাজ। অফিস মেরামতের চেষ্টা করছি। তবে অফিস এলাকায় এখনো ঘুরা ঘুরি করছে কিছু সন্ত্রাসী। জীবনের নিরাপত্তা পেলে আবার নিয়মিত নাগরিক সেবা দিতে পারব আমরা। ৩১ নং আলকরন ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুস সালাম জানান , তিনি নিয়মিত নাগরিক সেবা দিচ্ছেন । হামলায় অক্রান্ত হওয়া কোতোয়ালী থানা পরিষ্কারের জন্য আমাদের ১০ জন কর্মী কাজ করছে।
১৪ নং লালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মোঃ বেলাল বলেন,আমরা নিয়মিত অফিসে এখনো বসছি না তবে অফিসের কাজগুলো করছি। ৪১ নং দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছালেহ আহম্মদ চৌধুরী বলেন, আমি অফিস করছিনা , বাসায় আছি। পরিস্থিতি ঠিক হলে অফিসে যাব।
চসিকের সংরক্ষিত ওর্য়াড-১ (১,২,৩) ফেরদৌস বেগম মুন্নী বলেন,আমরা অফিসের কাজ শুরু করেছি এবং সেবা দিচ্ছি।সংরক্ষিত ওয়ার্ড- ১১(২৮,২৯,৩৬) ফেরদৌসি আকবর জানান তিনি বাংলা বাজার অফিসে বসেন। কোন মানুষ আসলে সেবা না নিয়ে ফিরতে হবে না। চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। সিটি করপোরেশন পরিচালিত নাগরিক সেবাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নাগরিক সেবার মধ্যে জন্মনিবন্ধন, ওয়ারিশান সনদসহ প্রয়োজনীয় কিছু সনদ ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের দেওয়ার কথা। কিন্তু অর্ধেকের বেশি কাউন্সিলর কার্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চার-পাঁচটি পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তাই এই সেবাগুলো এ মুহূর্তে চালু করা যাচ্ছে না। তবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা কাজ শুরু করেছেন।
তিনি আরও বলেন,চসিকের সচিবালয় বিভাগ থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডের ওয়ার্ড সচিবদের সাথে যোগাযোগ করে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক তালিকা করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ড কার্যালয়ে নাগরিক সেবা দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর চট্টগ্রামে মেয়রের বাড়িসহ সিটি করপোরেশনের অন্তত ২০টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর হয়। এর পর থেকে অফিস করছেন না মেয়র ও অনেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর।