
সন্দ্বীপের সীমানা দ্রুত নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন সন্দ্বীপ সীমানা রক্ষা আন্দোলন কমিটি। এছাড়াও সন্দ্বীপের পশ্চিমাংশে জেগে উঠা জাহাইজ্জার চর (স্বর্ণদ্বীপ), ঠ্যাংগার চর, উড়ির চর সহ অন্যান্য চরসমূহের মালিকানা সন্দ্বীপের মানুষের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান সন্দ্বীপ সীমানা রক্ষা কমিটির নেতৃবৃন্দ।
আজ শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এই দাবি জানান তারা।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, মূলত: শতাধিক বছর ধরে সমুদ্র গর্ভে বিলিন হতে থাকা ভূখন্ড সম্প্রতি আবার জেগে উঠেছে, জেগে উঠা এসব ভূমিই হচ্ছে জাহাইজ্জার চর, ঠ্যাংগার চর ও উড়ির চর। এই দীর্ঘ সময়ে সন্দ্বীপের কয়েক লক্ষ মানুষ ঘর বাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তুর জীবন যাপন করলেও উড়ির চর ছাড়া অন্য চরগুলো ফিরিয়ে দেয়া হয়নি। বরং উড়ির চরের কিছু অংশ এবং জাহাইজ্জার চর ও ঠ্যাংগার চরকে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার অংশ বলে বিভিন্ন তথ্যে উল্লেখ করা হচ্ছে। যা মোটেও ঠিক নয়।
বক্তারা বলেন, ২০০২সালে উড়ির চরের কিছু অংশকে নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার অন্তর্ভূক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলে তার বিরুদ্ধে উড়ির চর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তাহমিনা হক চৌধুরী ও তার ছেলে সাইফুল হক চৌধুরী বায়রন হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। কিন্তু রিট আবেদন নিষ্পত্তি না করে এইসব চরকে নোয়াখালী জেলার অন্তর্ভূক্ত করা আইনের লংঘন। হাইকোর্টের এই রীট ছাড়াও ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ভূমি মন্ত্রনালয় ১৯১৩-১৬ সালে করা মানচিত্র ও ১৯৫৪ সালের সংশোধিত মানচিত্র অনুযায়ী সন্দ্বীপের সীমানা নির্ধারন করার জন্য নির্দেশ দিলেও এখনো সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন হয়নি।
মতবিনিময় সভায় রীট আবেদনকারী সন্দ্বীপের কালাপানিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল হক চৌধুরী বায়রন বলেন, ১৯১৩-১৬ সালের জরিপ আনুযায়ী ঠ্যাংগার চর ও জাহাইজ্জার চর তথা স্বর্ণদ্বীপ সম্পূর্ন সন্দ্বীপের অংশ, কিন্তু ভূমিমন্ত্রনালয়ের সিদ্ধান্ত কার্যকর না করে অজ্ঞাতকারনে এগুলো হাতিয়া ও নোয়াখালী জেলার লেখা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, স্বর্ণদ্বীপ যখন নোয়াখালীর বলা হয় তখন সন্দ্বীপের সকল মানুষের অন্তরে আঘাত লাগে, আমরা এটা মানতে পারিনা, সরকার স্বর্নদ্বীপ সেনাবাহিনীকে দিয়েছে এটা আমাদের জন্য মঙ্গল, কিন্তু আমরা এটা সন্দ্বীপের অংশ হিসবে স্বীকৃতি চায়।
অনুষ্ঠানে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্ণেল দিদারুল আলম (বীর প্রতিক) বলেছেন, আমাদের সন্দ্বীপ আমাদেরকে ফিরিয়ে দিন, আমাদের হারানো ভূখন্ড আমাদেরকে ফিরিয়ে দিতে হবে। আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব শুধু নোয়াখালীর নন সারা দেশের সবার নেতা, আমাদের ভূখন্ড তিনি ছিনিয়ে নিতে পারেননা। তিনি আরো বলেন, আগে আমাদের সীমানা ঠিক করে দিন, তারপর সরকার যেভাবে সুবিধা তা ব্যবহার করতে পারবে।
মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম বিশ্বাবিদ্যালয় সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোসলেম উদ্দিন মুন্না বলেন, সন্দ্বীপের লক্ষ লক্ষ মানুষ ঘরবাড়ী হারা হয়েছে, আমাদের পূর্বপূরুষের ভিটেমাটি পূনরুদ্ধার করতে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাবো।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাজিবুল আহসান সুমন বলেন, আমরা আমাদের সীমানা এক বিন্দুও ছাড় দেব না।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, যুবনেতা ফোরকান উদ্দিন রিজভী। অনুষ্ঠানে আগামীকাল শনিবার সকাল দশটায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে একই দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দেয়া হয়।