ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

চসিকের ১৯ ঘাটের মহারাজাই রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

চট্টগ্রাম মহানগরীর সল্টগোলা ঘাট, তিনটিংগা, বিওসি এবং মাতব্বর ঘাটসহ চসিকের ১৯টি ঘাট ইজারা নিয়ে যখন যেমন ইচ্ছা খেলা খেলছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এর প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (উপ-সচিব) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। যত অভিযোগ সব এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগ পাটনিজীবি সমিতি ও ঘাটকুলের শত শত মানুষদের। প্রতি বছর ১৯ ঘাট থেকে রাজস্ব আদায় হতো প্রায় ৬ কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু চৌদ্দশ একত্রিশ বাংলায় এসে আইনি জটিলতায় এবার ঘাটগুলো ইজারা দিতে পারেনি চসিক। সে সুযোগে খাস কালেকশনের নামে চমিকের একাধিক অসাধু কর্মকর্তারা নিজের আখের গোছাচ্ছেন।

ফলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও খাস কালেকশন করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) রাজস্ব বিভাগ। ফলে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার কিংবা চসিক। তথ্য বলছে, চসিকের এস্টেট শাখা এ বছরের শুরুতেই হাটবাজার, ফেরীঘাট, গণশৌচাগার, নার্সারি, পার্কিং ১৪৩১ বাংলা সনের জন্য সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মচারীদের দিয়ে খাস কালেকশন বা টোল আদায়ের জন্য অফিস আদেশ দিয়েছেন।

এতে পতেঙ্গা ১৫ নম্বর ঘাটের দায়িত্ব দেওয়া হয় এস্টেট শাখার সহকারি রফিকুল ইসলাম চৌং কে, সল্টগোলা ঘাটে চেইনম্যান আবদুর রাজ্জাক, বাংলা বাজার ঘাটে চেইনম্যান জানে আলম, নয়া রাস্তা পাকা পুল ঘাটে চেইনম্যান সিরাজ উদ্দীন, সদরঘাটে চেইনম্যান আবদুর রাজ্জাক, ফিশারীঘাটে বাজার পরিদর্শক রবিউল ইসলাম, নতুন ঘাটে বাজার পরিদর্শক রবিউল ইসলাম, এয়াকুব নগর লইট্টাঘাটে চেইনম্যান আবদুর রাজ্জাক, পতেঙ্গা ১৪ নং ঘাট ও গুচ্ছগ্রাম ঘাটে সহকারি দিদারুল আলম, ১১ নম্বর মাতব্বর ঘাটে সহকারি দিদারুল আলম, ১২ নম্বর তিনটিংগা ঘাটে সহকারি রফিকুল ইসলাম চৌ, ৭ নম্বর রুবি সিমেন্ট ফ্যাক্টরী সংলগ্ন ঘাটে চেইনম্যান সিরাজ উদ্দিন, ৯ নম্বর বি ও সি ঘাটে চেইনম্যান আবদুর রাজ্জাক, অভয়মিত্র ঘাটে বাজার পরিদর্শক দুর্বাদল চৌধুরী, চাক্তাই খালের পাশে পান ঘাট হতে গাইজ্জের ঘাটে চেইনম্যান জানে আলম, পতেঙ্গা চাইনিজ ঘাটে সহকারি রফিকুল ইসলাম চৌং, বাকলিয়া ক্ষেতচর ঘাটে চেইনম্যান সিরাজ উদ্দীন, চাক্তাই ঘাটে চেইনম্যান জানে আলম ও চাক্তাই ৫টি লবণঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী হলেন এস্টেট শাখার চেইনম্যান জানে আলম।

এসব কর্মচারীদের আবার একাধিক ঘাটের দায়িত্বসহ গণশৌচাগার, নার্সারি, পার্কিং ও হাট বাজারের দায়িত্বও দেওয়া হয়। আদেশে চসিক রাজস্ব শাখা আরো জানিয়েছিলেন, পহেলা বৈশাখ ১৪৩১ বাংলা অর্থ্যাৎ ১৪ এপ্রিল হতে পরবর্তী ইজারা না হওয়া পর্যন্ত খাস কালেকশন করবেন।

আদায়কৃত টাকা প্রতিদিন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এর হিসাব নম্বর এস.টি. ডি-৮/৭ জনতা ব্যাংক চসিক শাখায় জমা প্রদান করবেন। তবে কোন কারণে ব্যাংক বন্ধ থাকলে পরবর্তী কার্য দিবসে অবশ্যই টাকা জমা প্রদান করবে। সপ্তাহের সব হিসাব চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার কাছে পাঠাতেও বলা হয়।

কিন্তু চসিকের এই আদেশ চসিকের কর্মচারীরাও মানছেন না। কিভাবে মানছে না, এর অনুসন্ধানে তথ্য মিলে, দৈনিক ঘাটের টাকা চসিকের কোন ব্যাংক হিসাবে জমা দিচ্ছেন না কেউ। এমনকি চসিকের উর্ধ্বতন কর্মকতাদের ম্যানেজ করে যে যার মতো আখের ঘোচাতে ব্যস্ত। চসিকের রাজস্ব বিভাগের এস্টেট শাখার নির্ধারিত ৭ কর্মচারীকে ১৯ টি ফেরীঘাটের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁরা পরে একেকটি ঘাট একেক ইজারালোভী সিন্ডিকেট কে বিক্রি কিংবা হস্তান্তর করে দিয়েছেন।

এর মধ্যে বেশ কয়েকটি তথ্য পাওয়া গেছে, যেমন- ১২ নম্বর তিনটিংগা ঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত এস্টেট শাখার সহকারি রফিকুল ইসলাম চৌং তাঁর দায়িত্বপ্রাপ্ত ঘাটটি ছেড়ে দিয়েছেন মো. নাছির নামে এক ব্যক্তি কে। এমনকি চসিকের ওই কর্মচারী কাগজে কলমে স্বাক্ষর করে তা স্পষ্টও করেছেন। তাঁতে লিখে দিয়েছেন ৫ আগষ্ট হতে ১২ নম্বর ঘাট পরিচালনার জন্য ঘাটে জনবল ও নৌকা সাম্পান সরবরাহ করার বিষয়ে সহযোগিতা করবেন নাছির।

আবার সল্টগোলা ঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত এস্টেট শাখার চেইনম্যান আবদুর রাজ্জাক তাঁর ঘাটটি ছেড়ে দিয়েছেন আরিফুল ইসলাম নামে অন্য ব্যক্তি কে। চসিকের এই কর্মচারীও কাগজে কলমে স্বাক্ষর করেছেন। তাঁতে তিনিও লিখে দিয়েছেন ৫ আগষ্ট হতে সল্টগোলা ঘাটের খাস আদায়ে সহযোগিতা করার জন্য আরিফুল কে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।

ওদিকে, ১১ নম্বর মাতব্বর ঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত এস্টেট শাখার সহকারি দিদারুল আলমও একই ভাবে তাঁর ঘাটটি ছেড়ে দিয়েছেন মো. জাহেদ নামে আরেক ব্যক্তিকে। এই কর্মচারীও কাগজে স্বাক্ষর করে তা নিশ্চিত করেছেন। তাঁতে তিনি লিখে দিয়েছেন ৫ আগষ্ট হতে মাতব্বর ঘাটের খাস আদায়ে সহযোগিতা করার জন্য জাহেদ কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও ৯ নম্বর বি ও সি ঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত এস্টেট শাখার চেইনম্যান আবদুর রাজ্জাকও একই পদ্ধতিতে বিওসি ঘাটটি ছেড়ে দিয়েছেন আবদুল কাদের নামে এক ব্যক্তিকে। তিনিও স্বাক্ষর করে একই গুনগান গাইলেন।

প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে আরো উঠে আসে, চসিকের প্রধান কর্মকর্তা (উপ সচিব) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম নির্দেশ দিলেও প্রতিদিনের টাকা প্রতিদিন কেউ ব্যাংকে জমা দিচ্ছেন না। চসিকের কর্মচারীরা দ্বিতীয় পক্ষ থেকে বরং এক মাসের টাকা এক দিনেই আদায় করে নিজেদের কাছে পকেটস্থ করছেন।

পরে একটি সাদা কাগজের টোকেন এ চসিকের গোল সিল মেরে তাঁতে লিখে দিচ্ছেন ‘অমুক ঘাটের খাস আদায় বাবদ আগষ্ট হতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরিশোধ।’ অথচ দৈনিক কত টাকা খাস কালেকশন করছে, কত টাকা জনগণ থেকে আদায় হলো, মাসে কত টাকা তাঁরা দ্বিতীয় সিন্ডিকেট থেকে নিচ্ছেন বা সব মিলিয়ে ব্যাংকে কোন টাকা জমা হচ্ছে কীনা তার কোন সঠিক ব্যাখ্যা ও তথ্য নেই কোথাও।

ফলে, চসিক রাজস্ব শাখার দুর্বলতার সুযোগে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। আর দুর্নীতিবাজ অসাধু চসিক কর্মচারীরা আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছে। কেননা, চসিক রাজস্ব শাখার কর্মকর্তারা স্থানীয় পর্যায়ের পুরনো ইজারাদারদের সঙ্গে আঁতাত করে খাস আদায়ে উঠে পড়ে লেগেছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চসিকের এসব ঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রীসহ পণ্য আনা-নেওয়া করা হয়। আবার এই খাস কালেকশনকে রাজস্ব ফাঁকির কৌশল হিসেবেও অভিহিত করছেন একাধিক পাটনিজীবী সমিতি।

অনেকেই এই পদ্ধতিতে সরকারি কোষাগারে নামেমাত্র অর্থ জমা হলেও বড় অংকের টাকা চলে যাচ্ছে রাম-শ্যাম-যদু-মধু চসিক সিন্ডিকেটের পকেটে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে এ বছরেও কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হবে চসিক কিংবা সরকার।

তথ্য সূত্রে আরো জানা যায়, হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশনের কারণে এবার বাংলা ১৪৩১ সনে চসিক নিয়ন্ত্রণাধীন ঘাটগুলোর ইজারা স্থগিত রয়েছে। ঘাটে ঘাটে আবার কানাঘুষাও চলছে এসব চসিকেরই কৌশল। কেননা, এতে কপাল খুলে যায় একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা ও চসিক-সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটের।

এসব ঘাটের বিষয়ে জানতে চাইলে চসিক এস্টেট শাখার সহকারি রফিকুল ইসলাম চৌং, চেইনম্যান আবদুর রাজ্জাক, সহকারি দিদারুল আলম বলেন, ‘আমরা চসিকের রাজস্ব কর্মকর্তার সাথে পরামর্শ করে ১১ নম্বর তিনটিংগা ঘাট, সল্টগোলা ঘাট, ১১ নম্বর মাতব্বর ঘাট ও ৯ নম্বর বি ও সি ঘাট স্থানীয় পাটনীজিবি সমিতির সাথে সংশ্লিষ্ট আছে এমন ব্যক্তিদের দায়িত্ব দিয়েছি। কারণ স্থানীয় লোকজন ছাড়া এসব ঘাট সচল রাখা কঠিন।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কিছু পাটনিজীবী সমিতি মিলে হাইকোর্টে রিট করে স্টে-অর্ডার করেছে; যাতে ইজারা টেন্ডার বন্ধ থাকে। সে কারণে ঘাটগুলোর ইজারা বন্ধ রয়েছে। আমরা ডকুমেন্টস সংগ্রহ করছি। শিগগিরই রিট শুনানি করে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বাকিটা এস্টেট শাখা ভালো বলতে পারবেন।’

চসিকের রাজস্ব কর্মকর্তা সাব্বির রাহমান সানি এর ফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে চসিকের সহকারি এস্টেট অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমাদের আইন শাখা কাজ করছে। শিগগিরই হাইকোর্টের স্টে-অর্ডারটি ব্যাকেট করা হবে। তারপর ঘাটগুলোর টেন্ডার কল করা হবে। বর্তমানে সিটি করপোরেশনের নিজস্ব লোকজন ঘাটগুলো দেখাশোনা করছেন।’

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এর প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (উপ-সচিব) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশ মানতে হবে। কিছু করার নেই। খাস কালেকশনে ঘাট চলছে। যেহেতু আদালতের নির্দেশে স্থগিত ইজারা। রিট শুনানির জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। কিন্তু এভাবে খাস কালেকশন চলতে থাকলে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আসবে না সেটাও সত্য।’

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print