ইরানের স্থানীয় সময় শনিবার (৫ অক্টোবর) রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে দেশটির সেমনান প্রদেশে ৪ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে এবং তেহরানের কাছে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে। এই ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটেছে যখন মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের মূলপ্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের সঙ্গে সংঘাত চরমে পৌঁছেছে।
একে রহস্যময়ী উল্লেখ করে সামাজিকমাধ্যমসহ পশ্চিমা গণমাধ্যম এবং ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কেউ মনে করছেন, ইরান প্রথমবারের মতো ভূগর্ভে পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালিয়েছে। তার কারণে কম্পনের সৃষ্টি হয়েছে, যা ইসরায়েলেও মৃদুভাবে অনুভূত হয়েছে। তবে এ বিষয়ে ইরানের কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন সূত্রের বরাতে এ খবর প্রকাশ করেছে ফার্স্টপোস্ট, হিন্দুস্তান টাইমস, ইউরোনিউজসহ অনেক সংবাদমাধ্যম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রহস্যময়ী ওই কম্পনের পরই ইরানের পারমাণবিক বোমা বানানোর সক্ষমতা নিয়ে এতো দিনের জল্পনা যেন নতুন মাত্রা লাভ করে। ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক কেন্দ্রে এই বোমার পরীক্ষা চালিয়েছে তেহরান। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ইরানের কোনো কর্মকর্তাও বিষয়টি নিশ্চিত করেননি। তবে নাকচও করেননি। এদিকে সামাজিক মাধ্যমে অনেকে মানচিত্র এবং গ্রাফ শেয়ার করে ব্যাখ্যা করেছেন, কেন এটি প্রাকৃতিক কম্পন থেকে ভিন্ন।
নেটিজেনদের একজন দাবি করেন, ওই কম্পনের উৎস হতে পারে মাটির গভীরে ‘ নিউক্লিয়ার টেস্ট সাইটে’ পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা থেকে। আর এর মধ্যে দিয়ে পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ ইরান। কেউ দাবি করছেন, প্রচলিত সামরিক অস্ত্র দিয়ে ভুয়া পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে তেহরান। অন্য একজন লিখেছেন, শুধুমাত্র প্রাকৃতিক কারণেই চার দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে ইরানে, যা ইসরায়েলেও অনুভূত হয়েছে।
এদিকে, সংঘাতময় পরিস্থিতিকে পুঁজি করে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে যে, এটি পারমাণবিক পরীক্ষা।
পারমাণবিক শক্তিধর হওয়ার জন্য মরিয়া এমন দেশে অনেক সময় ভূমিকম্পকে প্রতিপক্ষ দেশ ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে থাকে। এর আগে ২০১৩ সালে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। সেই সময় উত্তর কোরিয়ায় একটি ভূমিকম্পকে পারমাণবিক বোমার পরীক্ষার ফলে সৃষ্ট কম্পন বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। ২০১৭ সালের নভেম্বরে ইরানে যে ভূমিকম্প হয়েছিল সেটাকেও পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা হিসেবে মনে করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, পশ্চিমারা কয়েক দশক ধরে অভিযোগ করে আসছে যে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কর্মসূচি শুরু করেছে। ইরান-ইসরাইল চলমান উত্তেজনার মধ্যে ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে ইরানের এই কর্মসূচিকে অনেকটা পিছিয়ে দিতে বলা হয়।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা কয়েক দশক ধরে চলমান। কিন্তু গত বছর ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েলে হামলার পর এই উত্তেজনা বহুগুণে বেড়ে যায়। প্রতিশোধ নিতে সেই দিন থেকে গাজায় বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। সেখানে নিহতের সংখ্যা ৪২ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেনি তারা। রোববার বৈরুতে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। একই দিন আলাদা আরেক হামলায় বৈরুতের দক্ষিণ-পূর্বে কামাতিয়ে শহরে তিন শিশুসহ ৬ জন নিহত হয়েছেন।