ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

আমরা গভীর সংকটের দ্বারপ্রান্তে

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিশ্ব একটি গভীর সংকটের দ্বারপ্রান্তে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারে এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘আমি আজ অনেকের সঙ্গে দেখা করেছি, কথা বলেছি এবং তাদের সাহস দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছি। তাদের দৃঢ়সংকল্প দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছি।

আমরা গভীর সংকটের দ্বারপ্রান্তেআন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘অনেকেই মায়ানমারে তাদের নির্যাতন এবং এখানে তাদের আসার মর্মান্তিক বিবরণ শুনিয়েছে।’

আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘তারা বাড়ি ফিরে যেতে চায়। মায়ানমার তাদের মাতৃভূমি। নিরাপদে, স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদাপূর্ণভাবে ফিরে যাওয়াই এই সংকটের প্রাথমিক সমাধান।

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখে মায়ানমারের সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান জাতিসংঘ মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘মায়ানমারের সব পক্ষের প্রতি আমার বার্তা স্পষ্ট। সর্বোচ্চ সংযম অনুশীলন করুন। আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুসারে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিন এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও সহিংসতার আরো উসকানি রোধ করুন—গণতন্ত্রের শিকড় গজানোর পথ প্রশস্ত করুন।

রাখাইন রাজ্যসহ মায়ানমারের পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ উল্লেখ করে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘রাখাইনে সংঘাত এবং পদ্ধতিগত নিপীড়ন শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অবশ্যই যাদের সুরক্ষার প্রয়োজন, তাদের সহযোগিতা করতে হবে।’

‘আমরা একটি গভীর মানবিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে রয়েছি’—উল্লেখ করে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, আর্থিক সহায়তা কমার ফলে ২০২৪ সালে মানবিক সহায়তার তুলনায় ২০২৫ সালে সহায়তা নাটকীয়ভাবে ৪০ শতাংশে নেমে আসার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এটি একটি নিরবচ্ছিন্ন বিপর্যয় হবে। মানুষ কষ্ট পাবে এবং মানুষ মারা যাবে।

গুতেরেস বলেন, ‘এরই মধ্যে অনেক কষ্ট ভোগ করা ব্যক্তিদের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখনই সাহায্য করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

নষ্ট করার কোনো সময় নেই।’
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, মানবিক সহায়তা একটি পরিবর্তন আনছে। আমাদের অবশ্যই বাংলাদেশের জনগণের জমি, বন, দুর্লভ জল এবং স্বল্পসম্পদ ভাগাভাগি করে নেওয়ার বিশাল সহযোগিতাকে স্বীকৃতি দিতে হবে।

বক্তব্যের শুরুতে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রতি সংহতি জানাতে আমি এই পবিত্র রমজান মাসে কক্সবাজারে এসেছি। রোহিঙ্গাদের এত উদারভাবে আতিথেয়তা দেওয়া বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংহতি জানাতেও আমি এখানে এসেছি।

গুতেরেস বলেন, এখানে দুর্দশার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী সম্ভাবনার বিষয়ে আলোকপাত করতেও তিনি এ সফর করছেন। বাংলাদেশে আশ্রিত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার জন্য বিশ্বের সাহায্য-সমর্থন প্রয়োজন।

জাতিসংঘ মহাসচিব মায়ানমারে কয়েক দশক ধরে বৈষম্য ও নিপীড়ন এবং রাখাইনে জেনোসাইডের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, রাখাইনে জেনোসাইডের কারণে আট বছর আগে কক্সবাজারে আশ্রিতের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। মানবাধিকারের নৃশংস লঙ্ঘন থেকে বাঁচতে আরো অনেকে সম্প্রতি এখানে এসেছেন।

রাখাইন মুসলমানবিরোধী বিদ্বেষ ছড়ানোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজ শনিবার বিশ্ব আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক ইসলামোফোবিয়া (ইসলামভীতি) প্রতিরোধ দিবস পালন করছে। তাই এটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীরা এখানে এসেছে। তারা তাদের সুরক্ষা, পরিবারের জন্য মর্যাদা, নিরাপত্তা চায়।’

এর আগে ২০১৮ সালে কক্সবাজার সফরের কথা স্মরণ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সে সময়ের তুলনায় রোহিঙ্গা শিবির অবকাঠামোর উন্নতি দেখেছেন বলে তিনি জানান।

এর পরও অনেক স্তরে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে বলে জানান জাতিসংঘ মহাসচিব। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শিবির ও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া স্থানীয় সম্প্রদায়গুলো জলবায়ু সংকটের ঝুঁকিতে প্রথম সারিতে আছে। গ্রীষ্মকাল তীব্র গরমের সঙ্গে অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা অনেক বেশি। ঘূর্ণিঝড় ও বর্ষাকালে বন্যা এবং বিপজ্জনক ভূমিধস ঘরবাড়ি ও জীবন ধ্বংস করে।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি এখানকার মানুষ শিক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং স্বাধীনতার সুযোগের জন্যও ক্ষুধার্ত। সীমিত সম্ভাবনার সঙ্গে সহিংসতা, অপরাধ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সমস্যা স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পায়।’

গুতেরেস বলেন, ‘কিছু রোহিঙ্গা পরিবার মনে করে, তাদের কাছে বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রার মাধ্যমে সব কিছু ঝুঁকির মুখে ফেলা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। তাই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাছে সাহায্য পৌঁছানো নিশ্চিত করা এবং বিশ্ব তাদের ভুলে যায়নি—এটি দেখানো আমাদের একটি বিশেষ দায়িত্ব।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সবচেয়ে ভালো সময়েও সাহায্য যথেষ্ট ছিল না। আর আমরা এখন সেরা সময়ের চেয়ে অনেক দূরে। জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর পাশাপাশি অনেক মানবিক ও উন্নয়নমূলক এনজিও বিশাল তহবিল হ্রাসের ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছে। এর সরাসরি এবং ভয়াবহ প্রভাব পড়বে মানুষের ওপর। তাদের বেঁচে থাকার জন্য পর্যাপ্ত খাবার আছে কি না, মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা আছে কি না, অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিষেবা এবং সুরক্ষার ওপর সমগ্র শরণার্থী জনসংখ্যা মানবিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, আমি আবারও বলছি, ‘ব্যাপক অভাবগ্রস্ত’ মানুষের জন্য তহবিল কাটছাঁটের সবচেয়ে বিরূপ প্রভাব পড়বে কক্সবাজারে। তহবিল কাটছাঁটে মানবিক ক্ষতি হয়। সমাধানটা মায়ানমারেই খুঁজে বের করতে হবে।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘এখানে শরণার্থীদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য পরিস্থিতি অনুকূল না হওয়া পর্যন্ত আমরা হাল ছাড়ব না। পরিস্থিতি যতক্ষণ অনুকূল না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে সংহতি আগের চেয়েও বেশি প্রয়োজন। বাংলাদেশের সঙ্গেও সংহতি প্রয়োজন। এই পবিত্র রমজান মাসে, আমি আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের কাছে আবেদন করছি যে তারা কর্মের মাধ্যমে সংহতি এবং রোহিঙ্গা জনগণ এবং তাদের ‘বাংলাদেশি আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের’ জন্য সুনির্দিষ্ট সমর্থন প্রদর্শন করুন।

চার দিনের সফরে গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকায় আসেন। গতকাল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তিনি কক্সবাজারে যান।

জাতিসংঘের মহাসচিব কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে সরাসরি রোহিঙ্গা শিবিরে চলে যান। সেখানে রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে তাঁর সৌজন্যে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও পুষ্টিসংক্রান্ত সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি প্রেজেন্টেশন দেখানো হয় তাঁকে। এরপর তিনি রোহিঙ্গাদের কালচারাল সেন্টারে বিভিন্ন কর্মসূচি দেখেন। এ ছাড়া তিনি তরুণ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি কক্সবাজারে একটি লার্নিং সেন্টারও পরিদর্শন করেন। সন্ধ্যায় এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতারে অংশ নেন আন্তোনিও গুতেরেস ও ড. ইউনূস। এরপর তাঁরা ঢাকায় ফেরেন।

জাতিসংঘের মহাসচিব আজ শনিবার ঢাকায় একটি কর্মব্যস্ত দিন কাটাবেন। তিনি সকালে জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয় পরিদর্শন করবেন। দুপুরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও সুধীসমাজের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ ছাড়া তিনি সংবাদ সম্মেলনেও বক্তব্য দেবেন। আজই জাতিসংঘের মহাসচিবের সম্মানে ইফতার ও রাতের খাবারের আয়োজন করছেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে জাতিসংঘের মহাসচিব যোগ দেবেন। আগামীকাল রবিবার তিনি বাংলাদেশ ছাড়বেন।

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print