নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আবাসিক এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা চুন কারখানার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। সময়ের প্রয়োজনে এসব ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কয়েক হাজার মানুষ বসবাস করায় ১৪টি চুন তৈরির কারখানা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসীরা। প্রয়োজনীয় লাইসেন্স ও পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই ৯ বছর ধরে চুন তৈরির কারখানাগুলো চলে আসছে। পরিবেশদূষণ রোধে আবাসিক এলাকা থেকে কারখানাগুলো সরিয়ে নিতে পরিবেশ অধিদপ্তর একাধিকবার নোটিশ দিলেও তা মানছেন না অসাধু মালিকরা।
এরই মধ্যে এসব চুন কারখানার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। পাথর পুড়িয়ে চুন তৈরি করতে এসব কারখানায় সারাক্ষণ দাউদাউ করে জ্বলে আগুন। ফলে কালো ধোঁয়ায় বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ।
তবে চুন কারখানার মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁরা আবার এসব কারখানায় গ্যাস সংযোগ দিতে বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামের সিআই খোলা এলাকায় জাজিরা লাইমস, হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর ফারুকের মদিনা লাইমস, চান মিয়ার রনি লাইমস, জালাল মিয়ার সুরমা লাইমস, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বাবুল মিয়ার ফয়সাল লাইমস, মিজমিজি সিআই খোলা এলাকায় খোরশেদ মিয়ার ঢাকা লাইমস ও যমুনা লাইমস, সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকায় প্রয়াত আবু তালেবের ভাই ভাই লাইমস চুন ফাঁকি করে পরিবেশ বিপন্ন করে ব্যবসা পরিচালনা করছে।
জানা গেছে, সরকারি নিয়ম ও পরিবেশদূষণ রক্ষার্থে আবাসিক এলাকা থেকে এসব কারখানা সরিয়ে নিতে পাঁচ বছর আগে নোটিশ করে নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তর। নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে কয়েক দফা নোটিশ করলেও অদৃশ্য কারণে আজ পর্যন্ত এসব কারখানা সরানো হচ্ছে না। ৯ বছর ধরে কারখানাগুলো পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়ন করছে না।
অন্যদিকে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করছে না নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। ফলে কারখানাগুলো বৈধতা হারালেও সংশ্ল্লিষ্ট দপ্তর ও বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করেই কারখানাগুলো চালাচ্ছেন চুন কারখানার অসাধু মালিকরা।
কারখানার বৈধতা না থাকা সত্ত্বেও কিভাবে চলছে আবাসিক এলাকায় চুন কারখানাগুলো, এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি নন কারখানার মালিকরা। তবে চুন একাধিক মালিক কারখানা স্থানান্তরে পরিবেশ অধিদপ্তরের চিঠি ও ছাড়পত্র নবায়ন না করার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
সুরমা লাইমসের মালিক জালাল মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা যখন চুন কারখানা করেছিলাম, তখন ওই এলাকায় ঘনবসতি ছিল না।
নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ এইচ এম রাশেদ বলেন, ‘কারখানার মালিকরা হাইকোর্টে রিট করায় আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে পারছি না।’
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মোস্তাক মাসুদ মো. ইমরান বলেন, ‘চুন কারখানার মালিকরা আমাদের সিল নকল করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এসব অভিযোগে তাঁদের কারখানার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।’
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা জানান, আবাসিক এলাকায় কোনো অবস্থায়ই চুন কারখানা পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না।
