দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের মিছিল থেকে পুলিশ নাসিমন ভবনের সামনে ৬ জনকে আটক করে।
মিছিলে বাধা, মহিলা দলের সাথে পুলিশের ধস্তাধস্তি এবং ৬ ছাত্রদল কর্মী আটক ছাড়া বড় কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শেষ হয়েছে চট্টগ্রামে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ডাকা আধাবেলার হরতাল।
দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক নূরুল আলম নূরুকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে নৃংশসভাবে হত্যার প্রতিবাদে আজ রবিবার সকাল থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত এ হরতাল ডাকা হলেও সকাল সাড়ে ১১টায় দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবন ছেড়ে চলে যান বিএনপি এবং ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
সকাল থেকে নাসিমন ভবনের বিএনপি কার্যালয় ঘিরে রাথে পুলিশ।
এরপর দুপুর ১২টার দিকে চলে যায় সকাল থেকে নাসিময় ভবন দলীয় কার্যালয়কে ঘিরে অবস্থা নেয়া শতাধিক নারী-পুরুষ পুলিশ সদস্য।
এমনিতে এ হরতাল চট্টগ্রামের নাগরিক জীবনে তেমন একটা প্রভাব ফেলতে দেখা যায়নি। দোকান পাঠ অফিস আদালত স্কুল-কলেজ, কল-কারখানায় স্বাভাবিক কাজকর্ম চলেছে।
নগরীতে বাস ট্রাকসহ সব ধরণের যানবাহন সকাল থেকে স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করেছে। তবে চট্টগ্রাম থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দূর পাল্লার কোন বাস ছেড়ে যায়নি।
ছাত্রদলের ঝটিকা মিছিল।
এদিকে হরতাল ডেকে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা রাস্তায় নামেনি। মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বুলু, সাধারণ সম্পাদক গাজী সিরাজ উল্লাহর নেতৃত্বে হাতে গুণা কয়েকজন নেতাকর্মী ভোর থেকে নগরীর কাজীর দেউড়ি জামালখান, নিউ মার্কেট এলাকায় পুলিশের চোখ এড়িয়ে ঝটিকা মিছিল করে সকাল ৮টার মধ্যেই দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনে অবস্থান নেয়।
সেখানে ভোর ৬টা থেকে নেতাকর্মীবিহীন অনেকটা নি:সঙ্গভাবে দাড়িয়ে ছিলেন নগর বিএনপি সভাপতি ডা. শাহাদত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্কর। অবশ্য পরে এসে যোগ দেন কয়েকজন মহিলা দল নেত্রী।
ভোরে নেতাকর্মীরা আসার আগেই দলীয় কার্যালয়ের সামনে এভাবে একা বসে আছেন নগর বিএনপি’র সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন।
হরতাল চলাকালে ছাত্রদল কিংবা সহযোগী দলের কোন নেতাকর্মীকে নগরীর কোথাও পিকেটিং করতে দেখা যায়নি। ফলে যানবাহন চলেছে অবাধে।
ভোর থেকেই নাসিমন ভবনের সামনে নূর আহমদ সড়কে অবস্থান নিয়ে শতাধিক পুলিশ বার বার নেতা কর্মীদের বাধা এবং মারমুখি আচরণ করেছে।
সকাল ৮টার টার দিকে ডা. শাহাদাত হোসেনকে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন- কোন উপায়ে মিছিল করা বা রাস্তায় উঠার চেষ্টা যেন না করে।
তবে সকাল পৌনে ১০টার দিকে দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের ১০/১৫ জন নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে নাসিমন ভবনের দিকে যাওয়ার সময় নূর আহমদ সড়কে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে এবং লাঠিচার্জ করে ৬ জনকে আটক করে নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে ৩ জন হলেন-গাজি মনির, মহসিন খোকন, ও ইসতেহাক মানিক।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনের সামনে মিছিলের চেষ্টা করে নগর মহিলা দল। এসময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে মহিলা দলের নেত্রীদের সাথে পুলিশের হাতাহাতির চেষ্টা করে। পুলিশ নগর মহিলা দল নেত্রী আঁখি সুলতানাসহ কয়েকজনকে আটকের চেষ্টা চালায়। তবে কাউকে আটক করতে পারেনি।
নগর মহিলা দল নেত্রী আঁখি সুলতানাকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ।
এদিকে নগর বিএনপি সভাপতি ডাক্তার শাহাদাত ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্করের নেতৃত্বে নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ে ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মী অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করছে। সেখানে মহিলা দলের নেত্রীদের দেখা গেছে। বিএনপি অফিসের বাইরে পুলিশ অবস্থান কোন নেতাকর্মীকে বের হতে দেয়নি। রাস্তায় দাড়াতে দেয়নি।
কোতোয়ালী থানার ওসি জসিম উদ্দিন জানান, হরতালে সব কিছু স্বাভাবিক ছিল। কোথাও কোন সমস্যা হয় নি। আমরা কাউকে হরতালের নামে নাশকতা বা গাড়ি ভাঙচুর করতে দেয়নি। নগর জুড়ে বিপুল পরিমান পুলিশ মোতায়েন ছিল। এসএসসি পরিক্ষার্থীরা যাতে নির্ভিগ্নে কেন্দ্রে যাতায়াত করতে পারে সে ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ।
.
এদিকে খবর নিয়ে জানাগেছে, হরতাল চলাকালে হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া বাঁশখালী, মীরসরাই, সীতাকুণ্ড সহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা ছাত্রদল সভা সমাবেশ ও মিছিল করেছে। তবে জেলাতে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে জানান চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা।
পাঠক ডট নিউজের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, আমার জানামতে জেলার কোথাও কোন ধরণে ঘটনার খবর নেই। তবে এইচএসসি পরিক্ষার্থীদের কেন্দ্রে যাতায়াতের ব্যাপারে আমরা একটু চিন্তিত ছিলাম। এতেও কোন সমস্যা হয়নি। পুলিশ সব উপজেলাতে সর্তক ছিল।
উল্লেখ্যঃ গত ২৯ মার্চ (বুধবার) রাতে নগরীর চকবাজার এলাকার নিজ বাসা থেকে পুলিশ পরিচয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা নুরুল আলম নুরুকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন (বৃহস্পতিবার) বিকেলে রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের কোয়েপাড়া গ্রামের খেলাঘাট এলাকায় কর্ণফুলী নদীর তীর থেকে হাত-পা ও চোখ বাঁধা অবস্থায় নুরুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পরে বিএনপি ছাত্রদল এ হত্যার প্রতিবাদে সকাল থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরী, চট্টগ্র্রাম উত্তর, দক্ষিণ জেলা, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও পার্বত্য জেলা বান্দবানে হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে।