
রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের ফ্ল্যাটে ব্যবসায়ী নূরুল ইসলাম হত্যা মামলায় গ্রেফতার কাস্টমসের সাবেক কমিশনার শাহাবুদ্দিন নাগরী ও তার স্ত্রী নূরানী আক্তার সুমীকে ফের ৪ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।
এর আগে শাহাবুদ্দিন নাগরী, নূরানী আক্তার সুমী ও গাড়িচালক সেলিমের ৫ দিনের রিমান্ড গতকাল শনিবার শেষ হয়েছে। রিমান্ডে নাগরী অসামাজিক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ স্বীকার করেছেন। তবে তিনি দাবি করেছেন, নূরুল হত্যার সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ইতোপূর্বে নেওয়া পাঁচ দিনের রিমান্ড শনিবার শেষ হয়েছে। পাঁচ দিনের রিমান্ডে হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার না করলেও কবি, সুরকার, গীতিকার ও সাবেক কাস্টমস কর্মকর্তা শাহাবুদ্দিন নাগরী নিহতের স্ত্রীর সঙ্গে তার পরকীয়ার কথা স্বীকার করেছেন। পাঁচ দিনের রিমান্ডে আটককৃত নাগরী ও নিহতের স্ত্রী সুমিকে দফায় দফায় মুখোমুখি করা হয়। এ সময়ে নাগরীকে বেশ হতাশ ও অসহায় দেখা গেছে।
নাগরী ও সুমির পরকীয়ার বিষয়টি নিহত নুরুল ইসলাম জানতেন। তার সামনেই তারা একে অপরের সঙ্গে পরকীয়া এমনকি দৈহিক সম্পর্কে মিলিত হতেন।
নিউমার্কেট থানা সূত্রে জানা গেছে, স্বামী নুরুল ইসলামকে না জানিয়ে কবি ও গীতিকার সাবেক কাস্টমস কর্মকর্তা নাগরীর সঙ্গে ভারতে যেতে চেয়েছিল সুমী। এজন্য সুমীর পাসপোর্ট তৈরির কাজ চলছিল। নাগরী নিজেই সুমীর স্বামী নুরুল ইসলামের কাছে পাসপোর্ট করতে দিয়েছিলেন। নাগরীর কাছ থেকে এ কারণে টাকাও নিয়েছিলেন নুরুল ইসলাম। কিন্তু তার স্বামী এটি মেনে নিতে পারেননি।
সুমি জানিয়েছে, তার স্বামীর আশঙ্কা ছিলো, বিদেশ গেলে তার স্ত্রী সুমি আর হয়তো আর ফিরবে না। তাই পাসপোর্ট তৈরিতে বাধা দেন নুরুল ইসলাম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে সুমী। রিমান্ডে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে এসব তথ্য দিয়ে সুমি আরও বলেছে, তার স্বামী একজন জুয়াড়ি ছিল। এ নিয়ে তাদের দাম্পত্য জীবনে প্রায় সময়ই ঝগড়া হতো।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকায় আসার পরে শাহীন নামের এক নারী সুমীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় নাগরীকে। পরিচয়ের পর থেকেই সুমীর বাসায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল তার। নুরুল ইসলামের ও সুমীর সংসারের যাবতীয় খরচ চালাতেন শাহাবুদ্দীন। আর এ টাকার মধ্য থেকে একটি অংশ নিয়ে রোজই জুয়া খেলত সুমীর স্বামী নুরুল ইসলাম।
প্রাপ্ত সূত্রমতে, স্বামীকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছে সুমী। নুরুল ইসলাম ব্যবসায়ী ছিলেন না। তিনি প্রায় সময় জুয়া খেলায় মেতে থাকতেন। নাগরী ছাড়া সুমীর কাছে যেসব পুরুষ আসত, সেই টাকার একটা অংশ নিয়েই নুরুল জুয়া খেলতেন। স্ত্রীর এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ড সব কিছুই জানতেন নিহত নুরুল ইসলাম।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আরও জানান, সুমীর ফ্ল্যাটে শাহাবুদ্দীনের নিয়মিত যাতায়াত থাকলেও তিনি এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন কি-না সেটা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।
এ বিষয়ে নিউমার্কেট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মতলুবুর রহমান জানান, ওসি আতিকুর রহমান ছুটিতে আছেন। রিমান্ডে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে, হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সুমী তথ্য দিলেও শাহাবুদ্দীন নাগরী মুখ খুলছেন না। তবে প্রথম থেকেই এই খুনের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা দৃঢ়তার সঙ্গে অস্বীকার করে আসছেন। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, সাবেক কাস্টমস কমিশনার শাহাবুদ্দীন নাগরীর নারী প্রীতির বিষয়টি অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। সার্বিক অর্থেই তিনি ছিলেন একজন লম্পট। অবসরের আগ পর্যন্ত মাঝে মধ্যেই সুন্দরীরা হাজির হতেন তার অফিসে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়ায় এসব বিষয়ে কথা বলার সাহস করতেন না অধস্তনরা। দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলার কারণে তার পদোন্নতি আটকে ছিল দীর্ঘদিন। অবশেষে দুই বছর আগে কাস্টমস কমিশনার হিসেবেই তিনি অবসরে যান।
উল্লেখ্য- গত ১৩ এপ্রিল এলিফ্যান্ট রোডের ১৭০/১৭১ নম্বর ডম-ইনো অ্যাপার্টমেন্টের ৫ম তলায় ব্যবসায়ী নূরুল ইসলামকে (৪৭) তার নিজ বেডরুমের ফ্লোরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ১৪ এপ্রিল নিহত ব্যবসায়ীর বোন শাহানা রহমান কাজল বাদি হয়ে ভিকটিমের স্ত্রী নূরানী আক্তার সুমী (৩৫), স্ত্রীর বন্ধু সাবেক কাস্টমস কমিশনার শাহাবুদ্দিন নাগরী (৬০), গাড়িচালক সেলিমসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে নিউ মার্কেট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলায় লেখক শাহাবুদ্দিন নাগরী এজাহারভুক্ত ২ নম্বর আসামি। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে শাহাবুদ্দিন নাগরী, সুমী ও সেলিমকে গ্রেফতার করে পুলিশ ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়। রোববার নাগরী ও সুমীর বিরুদ্ধে ফের চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত