ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

না ফেরার দেশে আবৃত্তিশিল্পী কাজী আরিফ

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

.

আবৃত্তিশিল্পী, মক্তিযোদ্ধা ও স্থপতি কাজী আরিফ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই সেন্ট লুকস হাসপাতালে বাংলাদেশ সময় শনিবার (২৯ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

ওই হাসপাতালে ২৫ এপ্রিল তার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছিল। অপারেশনও সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু আইসিইউতে থাকা অবস্থায় তিনি না ফেরার দেশে চলে যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী প্রজ্ঞা লাবণী ও দুই কন্যাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

কাজী আরিফের মৃত্যুতে গভীর শোক ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ। পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. আহকাম উল্লাহ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে দ্য রিপোর্টকে জানান, কাজী আরিফকে দেখতে তিনি হাসপাতালে যান। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই নিয়মিত তিনি খোঁজখবর রাখতেন।

কাজী আরিফ অমৃত্যু আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। এছাড়া তিনি মুক্তকণ্ঠ আবৃত্তি একাডেমির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাও।

আবৃত্তিশিল্পী, মুক্তিযোদ্ধা ও স্থপতি কাজী আরিফের জন্ম ১৯৫২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর রাজবাড়ি জেলা সদরের কাজীকান্দা গ্রামে। বড় হয়েছেন চট্টগ্রামে। বাবা কাজী আজিজুল ইসলাম পাকিস্তান ইউনাইটেড ব্যাংকে চাকরি করতেন। মা কাজী নিন্নি ইসলাম। ৬ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। স্কুল-কলেজ জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তারপর ভর্তি হয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট)। সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে পদচারণা কলেজ জীবন থেকে।

তার আলোচিত আবৃত্তি অ্যালবামগুলোর মধ্যে ‘পত্রপুট’, ‘তাম্রলিপি’ অন্যতম। বাহার রহমান আশির দশকের মাঝামাঝি নতুনদের কবিতা নিয়ে একটি অ্যালবাম করেন। তারপর বেরোয় ‘এখনো রবীন্দ্রনাথ’-দুই খণ্ডে, ‘আজো নজরুল’ ইত্যাদি। এ পর্যন্ত তার ১৭টি আবৃত্তির অডিও অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে।

বাবার চাকরির সুবাদে চট্টগ্রামে কেটেছে কাজী আরিফের শৈশব ও কৈশোর। ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৬৮ সালে এই স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করার পর চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হয়েই স্বাধিকার আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন। এই কলেজে পড়ার সময়ই বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য লাভ করেন। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ১৯৭০ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। একই বছর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য বিভাগে ভর্তি হন। এসময় দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ১ নম্বর সেক্টরে মেজর রফিকের নেতৃত্বে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের মার্চ মাস থেকে বুয়েটে নিয়মিত ক্লাস শুরু করেন।

এর আগে স্কুলে পড়াকালীন ১৯৬৫ সালে ছাত্রলীগের স্কুল শাখার সহসভাপতি ছিলেন। স্কুল পাস করে কলেজে ভর্তি হলে তখন কলেজ শাখার সাংস্কৃতিক সম্পাদক হন।

কাজী আরিফের সঙ্গে আবৃত্তির যোগাযোগ হয় মূলত বুয়েটে ভর্তি হওয়ার পর। ছেলেবেলায় গান শিখেছেন চট্টগ্রামে প্রবর্তক সংঘে প্রিয়দারঞ্জন সেনগুপ্তের কাছে। আর শিখেছেন আর্যসংগীতে নীরোদবরণ বড়ুয়ার কাছে। এই দুটি প্রতিষ্ঠানে ৮-৯ বছর সংগীত শিখেছেন। তিনি নিয়মিত তখন স্টেজে ও চট্টগ্রাম বেতারে গান করতেন। এসময় কাজী আরিফের সঙ্গে প্রবাল চৌধুরী, স্বপন চৌধুরী, খুরশিদ আনোয়ার গান গাইতেন। তখন বিশেষ করে বিভিন্ন কলেজগুলোতে দর্শনীর বিনিময়ে গান করতেন তারা।

কাজী আরিফের আবৃত্তির শুরু উনিশ শ’ ছেষট্টি-সাতষট্টির দিকে। তখন আবৃত্তি করবেন এরকম কোনো ধারণা ছিল না। শুনতেন বেশি। কলকাতা থেকে বাসায় রেকর্ড আনা হতো। কাজী সব্যসাচীর ‘সলেমানের মা’, ‘উদ্বাস্তু’, ‘মানুষ’ প্রভৃতি কবিতার আবৃত্তি শুনতেন। পাশাপাশি থাকতো আবদুর রহিম, উৎপল দত্ত, প্রদীপ ঘোষ, শম্ভু মিত্র’র রেকর্ডও। ছেলেবেলায় ক্ল্যাসিকাল গান শিখতেন। তারপর রবীন্দ্রসংগীতে চলে আসেন।

১৯৬৮ সালে তখন মেট্রিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এমন সময় চট্টগ্রামের মুসলিম ইন্সটিট্যুট মিলনায়তনে অনুষ্ঠান হবে। তিনি রবীন্দ্রসংগীত গাইবেন। ওই অনুষ্ঠানে গানের মাঝে মাঝে ধারাবর্ণনা করার কথা। কিন্তু কবিতা ও কথা মিলিয়ে যিনি ধারাবর্ণনা করবেন তিনি এলেন না। তখন উদ্যোক্তারা কাজী আরিফকে ধারাবর্ণনার জন্য অনুরোধ করলেন। তখন কাজী আরিফের মনে হল তিনি পাঠ করতে পারেন। এভাবেই শুরু হয় মূলত কাজী আরিফের আবৃত্তির যাত্রা।

এরপর বাহাত্তরে এসে বুয়েটে ভর্তি হলেন। সেখানে যে প্রতিযোগিতাগুলো হতো তাতে জিতলে বই পুরস্কার পাওয়া যেত। প্রতিযোগিতায় জিতলে যেহেতু বই পাওয়া যায়, তাই এসব প্রতিযোগিতায় নাম লেখাতে শুরু করলেন। তখন নজরুলসংগীত, রবীন্দ্রসংগীত, আধুনিক গান, আবৃত্তিতে তিনটা শাখায় বিভিন্ন প্রতিযোগিতা হতো। বুয়েট তো বটেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মিডফোর্ট মেডিকেল কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন হলে [মেয়েদের হলগুলোতেও] জিতে প্রচুর বই পুরস্কার পেয়েছেন কাজী আরিফ। মূলত বই পাওয়ার লোভ থেকেই আবৃত্তিতে আসেন।

১৯৭৩ সালে বিটিভিতে প্রথমবার আবৃত্তি করেন। একই বছর বাংলাদেশ বেতারেও আবৃত্তি করেন। বাংলাদেশ বেতারের শ্রোতাপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘উত্তরণে’ তিনি শুরু থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত আবৃত্তি, চিঠিপত্রের জবাব ও কথিকাপাঠ করেন। এসব অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বেতার, টেলিভিশনের অন্য অনুষ্ঠান গুলোতেও নিয়মিত অংশ নিতেন। এক সময় নতুন শিল্পীদের জন্য জায়গা দিতেই তিনি রেডিও থেকে সরে দাঁড়ান। ১৯৮৩ সাল থেকে আবৃত্তি শেখাতে শুরু করেন। ১৯৮০ সালে তার প্রথম আবৃত্তির অ্যালবাম ‘পত্রপুট’ বের হয়।

কাজী আরিফ বুয়েটে ১৯৭৪ সালে ছাত্র সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং পরে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বুয়েটের আবৃত্তি অনুষ্ঠানে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে আসেন। তার একক আবৃত্তি অনুষ্ঠান হয়েছে আমেরিকার আঠারোটি স্টেটে। থাইল্যান্ডেও তার একক আবৃত্তি অনুষ্ঠান হয়েছে। কলকাতার বিভিন্ন স্থানে আবৃত্তি করেছেন কাজী আরিফ। আমৃত্যু তিনি বিভিন্ন রেডিও, টেলিভিশনে নিয়মিত আবৃত্তি করতেন।

আবৃত্তিতে বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে আমেরিকা থেকে পেয়েছেন ফোবানা পুরস্কার, কলকাতা থেকে পেয়েছেন বেশ কয়েকটি পুরস্কার। বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ছেলে কাজী সব্যসাচীর নামে প্রথমবারের মতো প্রবর্তিত পুরস্কার পান ২০১৬ সালের ২ মার্চ।

১৯৭৬ সালে বুয়েট থেকে পাশ করে বেরিয়ে ডেক্সট্রাস কলসালটেন্স লিমিডেটে ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে কাজ শুরু করেন। বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক, হযরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, ভিআইপি টারমিনাল, বাংলাদেশ বিমান ভবন, ডেইলি স্টার ভবন, বিজিএমই ভবন, ইনডোর স্টেডিয়াম, গলফ ক্লাব, বাংলাদেশ ব্যাংকের ই-লাইব্রেরি তার কলসালটেন্সি থেকে করা স্থাপত্যগুলোর মধ্যে অন্যতম।

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print