
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি বেলাল হোসেনের বাড়ীতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। অভিযানকালে পূর্বে পুলিশের হাতে আটক হওয়া চেয়ারম্যানের ভাই ও শ্রমিকলীগ নেতা সাইফুদ্দিন বাপ্পীকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা।
বৃহস্পতিবার রাতে বোয়াখালী উপজেলায় পুলিশের উপর এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে আসামী বাপ্পিকে ছিনিয়ে নেয়ার পর বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক পুলিশ আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি ঘেরাও করে বিপুল অেেস্ত্রর সন্ধ্যান পায়। পালিয়ে যাওয়া বাপ্পিকে গ্রেফতারে পুলিশের সাড়াশী অভিযান চলছে।
আওয়ামী লীগ নেতা ও চেয়ারম্যান বেলাল হোসেনের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ইতালির তৈরি পয়েন্ট টু টু বোরের একটি পিস্তল ও ২টি ম্যাগজিন, স্পেনের তৈরি সেভেন পয়েন্ট সিক্স ফাইভ বোরের ১টি পিস্তল ও ২টি ম্যাগজিন, জার্মানির তৈরি একটি রিভলবার, পাকিস্তানের তৈরি একটি শাটার গান, একটি বিদেশি এয়ারগান, ১টি চাইনিজ কুড়াল, চারটি রাম দা, ১৬টি ছোট-বড় ছোরা এবং অস্ত্র তৈরির ১০ ধরনের সরঞ্জাম।

পুলিশ সূত্র জানা যায়, বৃহস্পিতবার রাতে নগরীর বায়েজিদ এলাকা থেকে শ্রমিক লীগ নেতা সাইফুদ্দিন বাপ্পীকে অস্ত্রসহ আটক করে পুলিশ। বাপ্পিকে নিয়ে আরো অস্ত্র উদ্ধারে বোয়ালখালীর বাড়িতে যায় পুলিশ। এসময় বাপ্পির লোকজন পুলিশের উপর হামলা করে বাপ্পিকে ছিনিয়ে নেয়। তারপর থেকেই চেয়ারম্যানের বাড়ী ঘরে অভিযান চালায় পুলিশ।
বায়েজিদ থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন জানান, চেয়ারম্যান বাড়ির কাচারি ঘরের উত্তর পাশে একটি কক্ষের খাটের নিচে অস্ত্র ও অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম রাখা হয়েছিল। নিজ ঘরকে বাপ্পি দেশি-বিদেশি অস্ত্রের গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছিল।

তিনি আরো বলেন, ১ মে বায়েজিদের দক্ষিণ শহীদনগর এলাকা থেকে দুইটি এলজি ও ১১ রাউন্ড কার্তুজসহ তিন যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে সাইফুদ্দিন বাপ্পীই এই অস্ত্রের যোগানদাতা বলে জানায় তারা। এরপর থেকে বাপ্পীকে গ্রেফতারে ফাঁদ পাতে পুলিশ। অস্ত্রের ক্রেতা সেজে পুলিশের একটি টিম বাপ্পীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। বাপ্পী ৩০টি অস্ত্র বিক্রিতে সম্মত হন। অস্ত্রগুলো তার বাড়ি থেকে আনতে বলে ক্রেতাবেশী পুলিশ সদস্যদের জানান বাপ্পী।
বায়েজিদ বোস্তামি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুহাম্মদ মঈন উদ্দিন জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাপ্পীকে বায়েজিদের আমিন জুট মিল সংলগ্ন পেট্টোল পাম্পের সামনে থেকে আটক করে পুলিশ। এসময় তার কাছে দুইটি বিদেশি পিস্তল পাওয়া যায়।
বাপ্পী অস্ত্রের ক্রেতাদের তার বাড়িতে নিয়ে যাবার জন্য আমিন জুট মিল এলাকায় গিয়েছিল। সেখানে বায়েজিদ বোস্তামি থানার টিম যাবার পর বাপ্পী বুঝতে পারেন তিনি অস্ত্রের ক্রেতাবেশী পুলিশ সদস্যদের হাতে পড়েছেন।

তিনি আরো বলেন, বাপ্পীর কথামতো সহকারী পুলিশ কমিশনার এস এম মোবাশ্বের হোসেনের নেতৃত্বে বায়েজিদ ও চান্দগাঁও থানা পুলিশ যৌথভাবে হোরারবাগ গ্রামে যায়। চেয়ারম্যানের কাচারি ঘর থেকে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করে বাপ্পীকে নিয়ে আমরা ফিরছিলাম। এসময় তার ছোট ভাই সালাহউদ্দিন রুমির (৪২) নেতৃত্বে ৫০-৬০ জন এসে আমাদের উপর হামলা চালায়। তারা বাপ্পীকে ছিনিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
হামলায় বায়েজিদ বোস্তামি থানার এস আই আইয়ূব উদ্দিন ও এইচ এম এরশাদউল্লাহ এবং চান্দগাঁও থানার এস আই মফিজ উদ্দিন আহত হন।
সূত্রমতে, বাপ্পীর বাড়ির পাশে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। বাপ্পীকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে যাবার পর পরিকল্পিতভাবে সেখানে খবর ছড়িয়ে দেয়া হয় চেয়ারম্যানের বাড়িতে ডাকাত আক্রমণ করেছে। চারদিক থেকে তখন লোকজন জড়ো হতে শুরু করে। এর মধ্যে রাত পৌনে ১১টার দিকে বাপ্পীকে পুলিশের হাত থেকে নিয়ে পালিয়ে যায় তার ছোট ভাই শ্রমিক লীগ নেতা রুমির অনুসারীরা।
বাপ্পীকে পাওয়া না গেলেও তার বিরুদ্ধে বায়েজিদ থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। এছাড়া পুলিশের উপর হামলা ও কর্তব্যকাজে বাধাদান এবং আসামি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় বোয়ালখালী থানায় আরও একটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
*বোয়ালখালীতে আ’লীগ দলীয় ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ী ঘেরাও করে অস্ত্র উদ্ধার