
চট্টগ্রামের পটিয়ায় একই স্থানে কওমী ও সুন্নীপন্থীদের মাহফিলের আয়োজনকে কেন্দ্র করে পটিয়ায় সুন্নীপন্থী ও পুলিশের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া শান্তিরহাট এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। সংর্ঘষে সুন্নিপন্থী ছাত্র সেনার হামলায় ৬ পুলিশ আহত হয়েছেন।
আহতরা হলেন, পটিয়া কালারপোল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ আলী, পটিয়া থানার এসআই মো. আরাফাত, এসআই খাজু মিয়া, এসআই জাহের উদ্দিন, এসআই সাইফুল ইসলাম, আনসার মো. শাহজাহান।
এছাড়া পথচারীসহ আরো ৩০জন আহত হয়। পুলিশ ৬ জনকে আটক করেছে।
ঘটনা চলাকলে সুন্নীপন্থীরা প্রায় ১০-১৫টি গাড়ি ভাংচুর করে এবং মহাসড়ক দেড় ঘন্টা ব্যারিকেড সৃষ্টি করে রাখে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে ১০-১২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে।
ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাখাওয়াত হোসেন, শাহ আলম, মিজানুর রহমান, এয়াকুব, শাহীন, ফারুক নামে জনকে আটক করে।

পুলিশ, স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া শান্তিরহাট মাছ বাজার এলাকায় আজ (বুধবার) পূর্বনির্ধারিত বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির ব্যানারে কওমীপন্থীরা মাহফিলের আয়োজন করে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে মাহফিলের প্যান্ডেল ও মঞ্চ তৈরির কাজও চলে। একই স্থানে গত দুদিন ধরে ইমাম আজম (রাঃ) সুন্নী কনফারেন্সের উদ্যোগে সুন্নীপন্থীরা মাহফিল আয়োজনের ঘোষনা দেয়। এতে সংঘর্ষের আশংকা দেখা দিলে প্রশাসন সুন্নীপন্থীদের কওমীপন্থীদের পরের দিন মাহফিল করার পরামর্শ দেন। গত একমাস আগে পুলিশের সহযোগিতায় সুন্নীপন্থীরা একটি মাহফিল আয়োজন করেছিল।
মঙ্গলবার বিকেলে সাড়ে ৪টার সময় সুন্নীপন্থীরা শান্তিরহাট এলাকায় মিছিল বের করে এবং কওমীপন্থীদের মাহফিলের প্যান্ডেল ও মঞ্চ ভাংচুর করে। এতে পুলিশ বাধা দিতে গেলে পুলিশের সাথে সুন্নীপন্থীদের সংঘর্ষ বাধে। এতে সুন্নীরা লাঠিসোটা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে গাড়ী ও দোকান ভাংচুর করে এবং পুলিশের উপর চড়াও হয়।

এসময় সুন্নীপন্থীদের হামলায় পুলিশ পরিদর্শকসহ পুলিশ কর্মকর্তার হাতে, পায়ে, মুখে রক্তাক্ত জখম হয়। ঘটনা চলাকালে ফুলবন, খাজা হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট ও পূবালী ব্যাংকে ব্যাপক ভাংচুর ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। এছাড়াও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরকান মহাসড়ক সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ব্যারিকেড দেয় সুন্নীপন্থীরা। এতে মহাসড়কের শান্তিরহাট থেকে আশে পাশে প্রায় তিন কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হলে ডিগ্রি ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে প্রায় ১০-১২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে ৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।
খবর পেয়ে পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
স্থানীয় কয়েকজন দোকানদার জানান, সুন্নী এবং পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ছাড়াও সুন্নী এবং সাধারণ পথচারীসহ ২০ জনের অধিক আহত হলে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করে।
কওমীপন্থী বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটি সিনিয়র সভাপতি নুরুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার বিকেলে সুন্নীপন্থীরা মিছিল থেকে এসে অতর্কিত ভাবে তাদের মাহফিলের মঞ্চ ও প্যান্ডেল ভাংচুর চালায়। পূর্ব নির্ধারিত সময়ে মাহফিল আয়োজনের জন্য প্রশাসন থেকে যথাযথ নিয়ম মেনেই অনুমতি নিয়েছিল বলে তিনি জানান।
সুন্নীপন্থী ইমাম আজম (রাঃ) সুন্নী কনফারেন্সের আহবায়ক মোহাম্মদ শহীদ ইসলাম বলেন, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। কওমীপন্থীদের মঞ্চ ও প্যান্ডেল ভাংচুরের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। পুলিশের হামলায় মো. আজাদ, মাহবুব, রায়হান, আব্বাস, জনি, রনি, সাগরসহ বেশ কয়েকজন তাদের কর্মী আহত হয়েছে বলে তিনি জানান।
পটিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মো. নেয়ামত উল্লাহ বলেন, কওমী ও সুন্নীপন্থীরা মাহফিলের আয়োজন করায় সংঘর্ষের আশংকায় সুন্নীপন্থীদের তাদের মাহফিল একদিন পিছিয়ে নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা একগুয়েমি করে কওমীপন্থীদের প্যান্ডেল ও মঞ্চ ভাংচুর করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সুন্নীপন্থীদের সংঘর্ষ হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৬জন আটক করা হয়েছে এবং সংঘর্ষে ৬পুলিশ সদস্য আহত হয়। পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এছাড়াও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে ১০-১২রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে।