
কেন্দ্রের চাপিয়ে দেয়া কমিটি নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ বান্দরবান তৃণমূল বিএনপি। তাদের দাবী ছিল ৯৮৩জন কাউন্সিলরের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে কমিটি গঠন করা। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উল্টো ঘটনা। গঠনতন্ত্রের লঙ্গন ঘটিয়ে কেন্দ্র থেকে জোর করে কমিটি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে বান্দরবান জেলা বিএনপির সদ্য ঘোষিত (মাম্যাচিং-জাবেদ) কমিটি নিয়ে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ইতোমধ্যে হাজার হাজার নেতাকর্মী চাপিয়ে দেয়া এ কমিটির জন্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান শামীমের অপসারণ ও শাস্তি দাবী করে মানববন্ধন পালনসহ দলের চেয়ারপার্সন বেগম জিয়ার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ঘোষিত এ নতুন কমিটির ফলে দীর্ঘ ১০ বছর পর আবারো কোন্দলে জড়িয়ে পড়ছে জেলা বিএনপি। ইতিমধ্যে ২মার্চ ঘোষিত মাম্যাচিং-জাবেদ গ্রুপের ২১ সদস্য কমিটিকে অনাস্থা জানিয়ে ঘোষিত জেলা কমিটি থেকে ১২ জন সদস্য তাদের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
এছাড়াও জেলা কমিটিকে অনাস্থা জানিয়েছে বান্দরবান পৌর বিএনপি, সদর উপজেলা বিএনপি, লামা উপজেলা বিএনপি, আলীকদম উপজেলা বিএনপি, থানচি উপজেলা বিএনপিসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নৃতৃবন্দ।

অন্যদিকে কমিটি বাতিল ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীমের শাস্তি চেয়ে মাঠে নেমেছে রাজপুত্র সাচিং প্রু জেরী সমর্থিত তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। যার কারণে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মী সম্মেলনের দুই দফা উদ্যোগ ভেস্তে গেল।
বান্দরবান জেলা বিএনপির একাংশের সাধারণ সম্পাদক মো: আজিজুর রহমান জানান- দীর্ঘ ১০ বছর আন্দোলন সংগ্রাম, মামলা-হামলা, নির্যাতন নিপীড়নের মধ্য দিয়ে অতন্দ্র প্রহরী ও ভ্যান গার্ডের মতো নিয়মিত দলকে গোছিয়ে ঈর্ষনীয় অর্জন রয়েছে সাচিং প্রু জেরীর। অথচ জেলা বিএনপির ৯৮৩জন কাউন্সিলরের মতামতের কথা বিবেচনা না করে একতরফা ভাবে নতুন কমিটি চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। অথচ ৭টি উপজেলা ২টি পৌরসভার ২৪জন সদস্যের ২২জন দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি চেয়ে কেন্দ্রে আবেদন করেছিলেন।
জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও বান্দরবান সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ জানান- সাচিং প্রু জেরী ২০০৭ সালের ১/১১ সময় থেকে অদ্যবদি পর্যন্ত জেলার সভাপতি দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বিএনপির জন্য অর্জন এভাবে কেউ ছুড়ে ফেলতে পারেনা।
তারই সঠিক প্রার্থী বাছাই, নির্দেশনা, সম্মিলিত প্রচষ্টা এবং অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে জেলার ৭টি উপজেলা ও ২টি পৌরসভার মধ্যে ৪জন উপজেলা চেয়ারম্যান, ২জন পৌরসভা মেয়র, ৯জন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও ১২জন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু সম্প্রতি কাউন্সিলরদের মতামত কে গুরুত্ব না দিয়ে অগনতান্ত্রিক ভাবে কমিটি চাপিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
আলীকদম উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম জানান- অপ্রিয় হলেও সত্য যে, মাহবুবুর রহমান শামীম বান্দরবান পৌরসভা নির্বাচন ও আলীকদম উপজেলাধীন ইউনিয়ন পরিষদ সমূহের নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে নীতি নৈতিকতা বর্হিভূত কর্মকান্ডে বান্দরবান বিএনপির ১০ বছরের অর্জনকে ভূলুন্ঠিত করেছে। তার বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি জনিত অপকর্মের জন্য চরম ভাবে ক্ষিপ্ত আজ তৃণমূল বিএনপি।
বান্দরবান জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মুজিবুর রশীদ জানান- চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান শামীম জেলার এক বিএনপি নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের মিথ্যা আশ্বাস ও প্রলোভন দিয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি সাচিং প্রু জেরীর সুপারিশ আদায় করে ব্লেক মেইলিং করেছেন। বর্তমানে গঠিত আংশিক কমিটির দুষ্টচক্র কমলাপুর রেলষ্টেশনের পাশে হোটেল সিকিম ইন্টারন্যাশনালে বসে বান্দরবান জেলা বিএনপির কমিটি নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করে। এই দুষ্টক্রের মুখোষ ইতিমধ্যে উম্মোচন হয়ে পড়েছে বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে দলীয় কোন্দল ছাড়াও বান্দরবানসহ পার্বত্য জেলায় দল গঠনে বিশেষ দায়িত্ব পাওয়া কেন্দ্রিয় বিএনপি নেতা মাহাবুবুর রহমান শামীমের বিরুদ্ধে বিশেষ সুবিধা আদায় এবং অর্থ আদায়সহ অনৈতিক কর্মকান্ড, আয় বহির্ভূত বিলাস বহুল গাড়ি হাকার কারণে ঐ নেতাকে শোকজ্ব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রিয় বিএনপি।
একাধিক নেতাকর্মী এ প্রতিবেদককে জানান- এক বছর আগে গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাত উপজেলা ও দুই পৌরসভার কাউন্সিল সম্পন্ন করা হয়। গত বছরের ১৭ই নভেম্বর দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু’র নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল বান্দরবানে আসেন।
প্রতিনিধি সম্মেলনে ৯৯ ভাগ সদস্য কাউন্সিল করার পক্ষে মত দেন। তৃণমূলের মতামতকে উপক্ষো করে কাউন্সিল না দিয়ে নতুন কমিটি ঘোষনা দেওয়ায় দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।
নেতারা বলেন, দলের দুর্দিনে যে নেতারা দলের সঙ্গে কোনো সর্ম্পক রাখেনি। রাজপথের মিছিলে, মিটিংয়ে যারা ছিল না তাদেরকে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এটা সহজভাবে মেনে নিতে পারছেনা তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় কমিটির এই সিদ্ধান্ত তৃণমূল নেতাদের মতামতকে উপেক্ষা করে করা হয়েছে বলে মনে করছেন দলের সিনিয়র নেতারা।