
আতিকুর রহমান (আতিক), গাজীপুরঃ
গাজীপুরের কাশিমপুরে মাল্টি ফ্যাবস লিমিটেড পোশাক কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনায় মঙ্গলবার আরো ৩ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। ফলে এ দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩। নিহতদের মধ্যে ৩ জনের বাড়ীই চট্টগ্রামের মীরসরাই বলে জানাগেছে।
৪ জুলাই মঙ্গলবার রাত ৭ টার দিকে বয়লার বিস্ফোরণস্থল থেকে আরো তিনটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মোঃ আখতারুজ্জামান লিটন। তবে উদ্ধার হওয়া তিন ব্যক্তিদের নাম- পরিচয় পাওয়া যায়নি।
এর আগে মঙ্গবারবার সকালে একটি এবং সোমবার রাতে আটটি লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া গুরুতর আহতাবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে সোমবার রাতে মারা যান আরো একজন।

এ দুর্ঘটনায় নিহত ১০ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- মাগুরার শালিখা থানার গোবরা গ্রামের আইয়ুর আলী সর্দারের ছেলে কারখানার ফায়ারম্যান আল আমিন হোসেন (৩০), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানার কুন্ডা গ্রামের সাগর আলী মীরের ছেলে কারখানার সহকারী ইঞ্জিনিয়ার মুজিবুর রহমান, রাজবাড়ির গোয়ালন্দ থানার চরকাসনন্দ এলাকার মনিন্দ্র নাথের ছেলে বিপ্লব চন্দ্র শীল, বগুড়ার সোনাতলা থানার নামাজখালি গ্রামের শাহার আলীর ছেলে কারখানার বয়লার অপারেটর মাহবুবুর রহমান।
চট্টগ্রামের মীরসরাই থানার বনসুন্দর গ্রামের কারখানার বয়লার ইনচার্জ আব্দুস ছালাম, চাঁদপুর সদরের মদনা গ্রামের বাচ্চু ছৈয়ালের ছেলে গিয়াস উদ্দিন ছৈয়াল, চট্টগ্রামের মীরসরাইর কাটাছাড়া বঙ্গনুর গ্রামের লুৎফুল হকের ছেলে মুনসুরুল হক, মীরসরাই থানার ইচাখালি গ্রামের মৃত নূরুল মোস্তফা চৌধুরীল ছেলে আরশাদ হোসেন চৌধুরী, নওগাঁ জেলা সদরের চকরামপুর এলাকার আজিজুল হকের ছেলে আমিরুজ্জামান, বগুড়ার গাবতলী থানার মরিয়া গ্রামের মৃত লিয়াকত আলীর ছেলে সোলাইমান। আহতবাস্থায় সোলাইমান মারা যান ঢামেক হাসপাতালে।

বিস্ফোরিত বয়লারটি ছিল মেয়াদোত্তীর্ণঃ
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাশিমপুর নয়াপাড়া এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় ৩ জুলাই সোমবার বিস্ফোরিত হওয়া বয়লারটি ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ। এটির নবায়ন ছিল না। ৪ জুলাই মঙ্গলবার দুপুরে বয়লার পরিদর্শক কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের গঠন করা আট সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাহেনুল ইসলাম জানান, গত ২৪ জুন পর্যন্ত এ বয়লারটির মেয়াদ ছিল। কিন্তু এরপর বয়লারটি নবায়ন করা হয়নি।
তিনি বলেন, কেবলমাত্র নবায়ন না করার কারণে বয়লারটি বিস্ফোরণ ঘটেছে- তা আমি মনে করি না। তারপরও এটি কারণ হিসেবে নিয়ে তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তদন্ত কমিটি তাদের কাজ শুরু করেছে। দুর্ঘটনার কারণ নির্ণয় করার জন্য তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যালোচনা করছে। শিগগিরই তদন্ত কমিটি দুর্ঘটনার কারণ নির্ণয় করবে।
উল্লেখ্য, ৩ জুলাই সোমবার রাত সোয়া ৭টার দিকে কাশিমপুরের নয়াপাড়া এলাকার মাল্টি ফ্যাবস লিমিটেড পোশাক কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় পথচারীসহ অর্ধশতাধিত আহতও হয়েছে। তাদের গাজীপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে ও ক্লিনিকে ভর্তি এবং চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

নিহতদের পরিবারকে ৮ লাখ টাকা দেওয়া হবেঃ
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক গাজীপুরে বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ৮ লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে কারখানা কর্তৃপক্ষ ৩ লাখ টাকা এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে ৫ লাখ টাকা করে প্রদান করা হবে। মুজিবুল হক ৪ জুলাই মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
তিনি জানান, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে ইন্স্যুরেন্স বাবদ ২ লাখ টাকা এবং অনুদান হিসেবে ৩ লাখ টাকা মোট ৫ লাখ টাকা নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে প্রদান করা হবে।
তিনি আরও জানান, গাজীপুর জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে একই সময় কারখানার চেয়ারম্যান ডঃ মহিউদ্দিন ফারুকী সাংবাদিকদের জানান, কারখানার পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ৩ লাখ টাকা প্রদান করা হবে। এছাড়াও নিহতদের পরিবারের কর্মক্ষম ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
এ সময় মন্ত্রীর সাথে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাহেনুল ইসলাম, পুলিশ সুপার হারুন-অর-রশিদসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গাজীপুরের কাশিমপুরের নয়াপাড়া এলাকায় মাল্টি ফ্যাবস লিমিটেড নামের একটি কারখানায় ৩ জুলাই সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বয়লার বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় কারখানার দেয়াল ও মেশিনারিজের নীচে চাপা পড়ে ১৩ জন শ্রমিক মারা যান। এ ঘটনায় আহত হন অর্ধশতাধিক শ্রমিক।
দুর্ঘটনার ১৮ঘন্টা পরও কারখানা এলাকার সামনে ভিড় করছেন নিহতের স্বজন ও নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনরা। কারখানা এলাকায় নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।