
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে নেই বাস সার্ভিস। এক সময়ের অন্যতম গণ পরিবহন এ বাস সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুই লক্ষাধিক বোয়ালখালীবাসীর নগরীতে যাতায়াতের ভরসা এখন দেশীয় তৈরি সিএনজি চালিত অবৈধ টুকটুকি ও অটো রিকশা। এসব অনিরাপদ যানবাহনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করছেন যাত্রী সাধারণ।
এসব পরিবহন যত্রতত্র পার্কিং, নিয়মনীতি ছাড়া গলাকাটা ভাড়া আদায়সহ নানান কারণে অনিরাপদ। যাত্রীদের হয়রানির পাশাপাশি সন্ধ্যার পর এদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়তে হয় বলে জানিয়েছেন মো. আবদুল হাকিম, মো. মহসিন, হেলাল উদ্দিন, শিমুল দে সহ বেশ কয়েকজন যাত্রী।
কানুনগোপাড়া সড়কের বাস চালক রাস বিহারী বড়ুয়া ও এস্কান্দর জানান, এক সময় বোয়ালখালী থেকে নগরে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল রেল। সে সময় চট্টগ্রাম-দোহাজারি লাইনে চার জোড়া রেল চলাচল করতো। বর্তমানে একজোড়া রেল চলাচল করে।
সময়ের প্রয়োজনে গোমদন্ডী ফুলতল-কানুনগোপাড়া হাওলা সড়ক সংস্কার হওয়ায় ১৯৭৯ সালে ত্রিশের অধিক বাস নিয়ে চট্টগ্রামের লাভলেইন থেকে কানুনগোপাড়া পর্যন্ত শুরু হয় বাস চলাচল শুরু হয়। পরবর্তীতে বহদ্দারহাট ও বাসটার্মিনাল থেকে এ বাস সার্ভিস ধীরে ধীরে উপজেলার জ্যৈষ্ঠপুরা গোলক কানুরবাজার, কালাইয়ার হাট হয়ে দাশের দিঘির পাড় ও আহলা কড়লডেঙ্গার শাহ বু-আলী কালন্দর শাহ (র.) এর মাজার গেইট পর্যন্ত চলাচল সম্প্রসারিত হয়।
বাস সার্ভিস চালুর পর কানুনগোপাড়ায় নির্মিত হয় বিশাল টার্মিনাল। যা এখন পরিত্যাক্ত। যাত্রী সাধারণের বিশ্রামের সুবিধার্থে উপজেলায় নির্মিত বেশ কয়েকটি যাত্রী ছাউনি যা এখন হকারদের দখলে।
নব্বইয়ের দশকে চট্টগ্রাম থেকে বোয়ালখালী উপজেলার মুকুন্দ রামের হাট পর্যন্ত চালু হয় আহলা দরবার শরীফ বাস সার্ভিস। পরবর্তীতে মধ্যম কড়লডেঙ্গার উত্তরভূর্ষি বেয়াই মার্কেট পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়।
পর্যায়ক্রমে এ সড়কে বহদ্দার হাট থেকে ইটালি নামক টেম্পু সার্ভিস, পরে ডাকসো টেম্পু, ভটবটি চলাচল শুরু করে। গত দশকে এ সড়কে যুক্ত হয় দেশীয় তৈরি টুকটুকি নামক সিএনজি চালিত অবৈধ যানবাহন। এসব যানবাহন বোয়ালখালীর সড়কগুলো দখলে নেয়ায় বন্ধ হয়ে যায় বাস সার্ভিস।
দেশীয় তৈরি সিএনজি চালিত অবৈধ টুকটুকি ও অটোরিকশা এসব যানবাহনের দূর্ঘটনায় গত দুই দশকে প্রাণহানিসহ পঙ্গুত্ববরণ করে চালকসহ যাত্রীসাধারণ।
চট্টগ্রাম কানুনগোপাড়া বাস মালিক সমিতির সর্বশেষ সাধারণ সম্পাদক এস এম আফাজুর রহমান জানান, ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম-কানুনগোপাড়া সড়কে বাস সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়। তবে নিয়মিত সরকারকে র্টামিনাল কর প্রদান করে যাচ্ছে বাস মালিক সমিতি। বর্তমানে কানুনগোপাড়া সড়কের বাইশটি বাস নগরীর বিভিন্ন সড়কে চলাচল করছে। যাত্রী সাধারণ যদি আগ্রহ প্রকাশ করেন তবে পুনরায় এ বাস সার্ভিস চালু করা সম্ভব বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সাংসদ মঈন উদ্দিন খান বাদল বলেন, বোয়ালখালীতে বাস সার্ভিস বন্ধ রয়েছে। যদি চালু করতে বাস মালিক সমিতি উদ্যোগ নেয় তাতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। বিআরটিসি’র বাস সার্ভিস চালুর বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, সড়কে বাঁক থাকায় বিআরটিসির বাস সার্ভিস চালু করা সম্ভব নয়।