
বহুল কাঙ্খিত চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির পুর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন পায়নি। তবে ২৮৫ জনের পূর্ণাঙ্গ তালিকাটি চট্টগ্রাম বিএনপির নেতারা দলের চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাতে জমা দিয়েছেন বলে দলীয় সুত্রে জানাগেছে। এরমধ্যে সহ-সভাপতি পদে ২২ জনকে আর যুগ্ম সম্পাদক পদে ৮ জন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৩ জনকে রাখা হয়েছে বলে জানা যায়।
রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টায় বেগম জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদনের আশা নিয়ে বেগম জিয়ার সাথে দেখা করেন চট্টগ্রাম বিএনপির নেতারা। দীর্ঘ প্রায় ১ ঘন্টা নেতৃবৃন্দের সাথে সাংগঠনিক এবং চট্টগ্রামের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করেন বেগম জিয়া।
সভায় অংশ নেয়া চট্টগ্রাম নগর বিএনপি নেতারা জানান, কমিটি পুর্ণাঙ্গ তালিকা নিয়ে চট্টগ্রাম সকল নেতারা ঐক্যমত আছেন কিনা বেগম জিয়া জানতে চান নেতাদের কাছে। এসময় সবাই ঐক্য আছেন জানালে তিনি জানান আমি দেখবো। দেখে কমিটির অনুমোদন দেবো। তবে কখন তিনি এ কমিটির অনুমোদন দেবেন তা নির্দিষ্ট করে বলেননি বলে জানান নেতারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আবু সুফিয়ান পাঠক ডট নিউজকে বলেন, পুর্ণাঙ্গ কমিটির চুড়ান্ত তালিকা ম্যাডামের হাতে দেয়া হয়েছে। ম্যাডাম তা দেখেছেন আমাদের সবার মতামত নিয়েছেন। তিনি আমাদের বলেছেন, শীঘ্রই তিনি এটি অনুমোদন করে দিবেন। আশা করছি দুই এক দিনের মধ্যে ঘোষণা আসবে।
এদিকে বিভিন্ন সুত্রে জানাগেছে, গুলশানে যাওয়ার আগে রাতে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মো. শাহজাহানের বাসায় বৈঠক করেন চট্টগ্রামের নেতারা। সেখানে কমিটির তালিকা চুড়ান্ত করতে গিয়ে তুলুম বির্তকে জড়িয়ে পড়েন নেতারা। পূর্বে সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২৫১ জনের তালিকা করা হলেও তা বাড়তে বাড়তে করা হয় ২৮৫ জনে। এবং মহানগর ছাত্রদলের মূল দায়িত্বে থাকা সত্বেও কয়েকজনকে নগর বিএনপির কমিটির শীর্ষ পদে তালিকাভুক্ত করায় মূলত বিরোধ মৃষ্টি হয় বলে সুত্র জানায়।
এদিকে তালিকা তৈরীর সাথে যুক্ত একাধিক নেতা পাঠক ডট নিউজকে জানিয়েছেন- তালিকায় সহসভাপতি পদে পতেঙ্গা থানা বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, বন্দর থানার সভাপতি এম এ আজিজ, পাহাড়তলী থানার আহ্বায়ক সামশুল আলম, খুলশী থানার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার, পাঁচলাইশ থানার সভাপতি আসহাব উদ্দিন চৌধুরী, কোতোয়ালী থানার সাধারণ সম্পাদক হারুণ জামান, চকবাজার ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি সবুক্তিগীন সিদ্দিকী মক্কীসহ আরও কয়েকজনের নাম রয়েছে।
এছাড়া যুগ্ম সম্পাদক পদে ডবলমুরিং থানার সভাপতি এসএম সাইফুল আলম, চাঁন্দগাও থানার সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন লিপু, নগর যুবদলের সভাপতি কাজী বেলাল উদ্দিন এবং নগর যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াছিন চৌধুরী লিটনের নাম তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। আর সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সাবেক কেন্দ্রীয় দুই ছাত্রদল নেতা মঞ্জুর আলম ও কামরুল ইসলাম এবং বাকলিয়া থানার সাবেক কাউন্সিলর আবু তৈয়ব স্থান পেয়েছেন বলে জানায় সূত্রটি।
শেষ মুহুর্তে যুগ্ন সম্পাদক পদে নগর ছাত্রদলের সভাপতি গাজী সিরাজের নাম অর্ন্তরভূক্ত হওয়ায় মহানগরীর সকল নেতারা প্রতিবাদ করেন। এ নিয়ে মূলত মো. শাহজাহানের বাসায় তুলুম বির্তকে জড়িয়ে পড়েন নগর বিএনপির নেতারা।
উল্লেথ্য গত বছরের ৬ আগষ্ট ডা. শাহাদাত হোসেনকে সভাপতি ও আবুল হাসেম বক্করকে সাধারণ সম্পাদক ও আবু সুফিয়ানকে সিনিয়র সহসভাপতি করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়। এক মাসের মধ্যেই চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ঘোষণা দিলেও এগার মাসেও সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করতে পারেননি নগর কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। নতুন করে দায়িত্ব পাওয়ার পর গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলন থেকে ত্যাগী নেতাকর্মীদের নিয়েই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। একইসঙ্গে ওইদিন মহানগর বিএনপির ৪১টি ওয়ার্ড কমিটির মধ্যে ৩৯টি ওয়ার্ডের কমিটিও ভেঙে দেয়া হয়েছিল। এসব ওয়ার্ডে দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন করে কমিটি গঠনের কথাও বলা হয়। কিন্তু গত ১১ মাসে মাত্র চারটি ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা করতে পেরেছে বর্তমান কমিটি।
শেষ পর্যন্ত তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাপের মুখে সম্প্রতি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়।