
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে তেমন একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্যকরা না গেলেও থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন নিয়ে তীব্র অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বিএনপিতে।
গত ১২ জুলাই রাতে বিএনপি’র সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে নগরীর ৮টি থানার বর্তমান কমিটি এবং ৭টি ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করে নতুন করে এসব থানা ও ওয়ার্ড কমিটির নতুন নাম ঘোষণা করেন।
এর পর থেকে ডবলমুরিং, চান্দগাঁও, বাকলিয়াসহ কয়েকটি থানা কমিটি নিয়ে নেতাকর্মীদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তার অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার দুপুরে ডা. শাহাদাত হোসেনের পেশাগত কার্যালয় ট্রিটমেন্টে ক্লিনিকের সামনে বিক্ষোভ, কালো পতাকা মিছিল, হাতহাতির ঘটনা ঘটেছে বলে জানাগেছে।
নগর বিএনপির একাংশের প্রেসবিজ্ঞপ্তি পাঠনোর দায়িত্বে থাকা মনোয়ার হোসেন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেন, ডবলমুরিং থানা বিএনপি‘র ঘোষিত কমিটি নিয়ে কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ করেছে ডবলমুরিং থানার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। এ সময় ডাঃ শাহাদাত ক্ষুব্দ হয়ে বিক্ষোভরত নেতাকর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ডবলমুরিং থানা ২৮নং ওয়ার্ডের আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন বলেন ‘আমরা ডাঃ শাহাদাতকে ডবলমুরিং থানা কমিটি নিয়ে আমাদের অভিযোগ বলতে গিয়েছিলাম। তিনি দায়িত্বশীল নেতা হয়ে আমাদের সাথে অশোভন আচরণ করেছেন। আমরা তা আশা করি নি।
তবে পাঠক নিউজের পক্ষ থেকে ডা. শাহাদাতের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমার চেম্বারে সামনে কোন সমস্যা হয়নি। কেউ কোন ধরণে বিক্ষোভ প্রকাশ করেনি। তবে দুপুরে ডবলমুরিং ছাত্রদলের কিছু নেতা কর্মী থানা কমিটির ব্যাপারে আপত্তি জানাতে এলে আমি তাদেরকে বুঝিয়ে বলেছি যে “তোমরা ছাত্রদল কর, বিএনপি নিয়ে তোমাদের আপত্তি করার কি আছে” বিএনপির কমিটি নিয়ে কোন সমস্যা থাকলে সেটা ডবলমুরিং বিএরপির নেতারা বুঝবে। আর ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে সমস্যা হলে তোমরা ছাত্রদলের নেতাদের সাথে কথা বলে। তার পর তারা চলে যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন “মনোয়ার বিএনপি কে? সে কেন এসব নিয়ে মাথা ঘামাবে ? সে একজন মাদকাসক্ত। তার কথা বিশ্বাস করবেন না”।

এদিকে ডবলমুরিং থানা বিএনপির নতুন কমিটি গঠন প্রসঙ্গে জিয়াউদ্দিন নামে কর্মী বলেন, ‘রোড লেভেলের নেতাদের বাদ দিয়ে যাদেরকে থানা কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে তারা আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন না। এ অভিযোগ করতে গিয়ে আমরা ডাঃ শাহাদাতের বিরাগ ভাজন হয়েছি’।
শাহাদাতের চেম্বারে বিক্ষোভের প্রতিবাদে নগর ছাত্রদলের সভাপতি নব ঘোষিত বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক গাজী সিরাজ ও বাকলিয়ার যুবদল নেতা বাদশা’র নেতৃত্বে একটি মিছিল বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ এর মেহেদীবাগস্থ বাসায় গিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে বলে মনোয়ার তার প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ্য করেন।
এ বিষয়ে গাজী সিরাজের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বিকার করে বলেন, শাহাদাত ভাইয়ের চেম্বারের সামনে কোন প্রকারের বিশৃঙ্খলা হয়নি। আমরাও খসরু ভাইয়ের বাসার সামনে কোন বিক্ষোভ করিনি। এসব মিথ্যা তথ্য। তবে বিকালে আমরা নগর বিএরপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করায় নগর এিনপি নেতৃবৃন্দ ও বেগম জিয়া তারেক রহমান এবং মহাসচিবকে অভিনন্দন জানিয়ে মিছিল করেছি।
জানাগেছে, ডবলমুরিং থানা নিয়ে কর্মীদের ক্ষোভের মূল কারণ অর্থবিত্তের কারণে আলহাজ্ব বাদশা মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। তিনি মহিলা দলের নেত্রী ফাতেমা বাদশার স্বামী। আন্দোলন সংগ্রাম তো দূরের কথা দলীয় কর্মকান্ডও তিনি নিয়মিত ছিলেন না। যারা আন্দোলন করতে গিয়ে মামলা এবং জেল জুলুমের শিকার হয়েছে তাদেরকে মূল্যায়ণ করা হয় নাই। কমিটিতে যারা এসেছেন তারা সুবিধাবাদী হিসেবে পরিচিত।

শুধু ডাঃ শাহাদাতের কাছে কেন দলের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করের কাছে অভিযোগ করেছেন কিনা জানতে চাইলে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ডবলমুরিং থানার সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী নূর উদ্দিন সোহেল বলেন, ‘রাতের অন্ধকারে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে থানার নোতকর্মীদের মতামত নেওয়া হয় নাই। সাধারণ সম্পাদকের কাছেও অভিযোগ করেছি। তিনি আমাদের শান্তনাসূচক কথাবার্তা বলেছেন। এছাড়া বাকলিয়া থানা কমিটি নিয়েও নেতাকর্মীরা ডাঃ শাহাদাতের কাছে অভিযোগ করেছেন। ডাঃ শাহাদাত পদবঞ্চিতদের অঙ্গ সংগঠনের কমিটিতে স্থান দেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।
এদিকে চাঁন্দগাও থানার কমিটি গঠন নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিএনপির নেতারা। নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান সাংবাদিকদের বলেছেন, বলেন, আমাদের সঙ্গে কোন ধরনের আলোচনা ছাড়াই এক সিদ্ধান্তে নতুন কমিটি ঘোষণা করেছেন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। এটা দুঃখজনক। দলের ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে কমিটি ঘোষণা করায় আমরা হতবাক। চাঁন্দগাও থানা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি সাবেক কমিশনার নাজিম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন লিপু, সাবেক কমিশনার বিএনপি নেতা মাহবুব আলম বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা দলের দায়িত্ব পালন করেছি। তাই আমরা জানি আন্দোলন সংগ্রামে কারা ছিলেন। কিন্তু আমাদের সাথে কোন আলাপ না করে আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন না এবং দলের জন্য কোন ত্যাগ নেই এমন একজনকে সভাপতি করা হয়েছে।
আরো পড়ুন-
*নগর বিএনপির ৮ থানা ও ৭ ওয়ার্ডের নতুন কমিটির নাম ঘোষণা
*২০ বছর পর পূর্ণাঙ্গ কমিটির মুখ দেখছে মহানগর বিএনপি!
*আলোর মুখ দেখলো চট্টগ্রাম নগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি
*ঘোষণা হয়নি নগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি: তালিকা খালেদার হাতে