
মিয়ানমারের আরাক মুসলমানদের ওপর বর্বরোচিত নির্মম গণহত্যার প্রতিবাদ দাবিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ঘোষিত দেশব্যাপী বিক্ষোভ ও গণমিছিলের অংশ হিসেবে আজ বাদজুমা চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লা শাহী মসজিদের উত্তর গেইট চত্বরে বিক্ষোভ সমা্বেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
চট্টগ্রম মহানগর হেফাজত আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, মিয়ানমারের মুসলিম অধ্যুষিত আরাকানে রোহিঙ্গারা দেড় হাজার বছর পূর্ব থেকে বসবাস করে আসছে। তাদের মধ্য থেকে সেখানে এমপি, মন্ত্রীও নির্বাচিত হয়েছিল। গত কয়েকদিনে আরাকানে বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা লক্ষাধিক মুসলিম পুরুষ, নারী ও শিশুদের হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে গণকবরে পরিণত করেছে। তারা রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর বর্বতম হত্যাকান্ড চালিয়ে মানবাধিকার ভুলুণ্ঠিত করেছে। মানবতার শত্রু মিয়ানমারের জালেম সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বার্মার সকল পণ্য বর্জন করতে হবে। তাদের সাথে সকল কুটনৈতিক সম্পর্ক ত্যাগ করতে হবে।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের বিজিপি আমাদের সীমান্তের ভিতরে ঢুকে টহল এবং মিয়ানমারের হেলিকপ্টার আমাদে/ আকাশসীমা লংঘন করেছে। এটা বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বে ওপর চরম হুমকী। এই ধৃষ্টতা মেনে নেয়া যায়না।
আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে মিয়ানমার সরকারকে উপর্যুপরি চাপ প্রয়োগপূর্বক করার জন্য মুসলিম বিশ্বের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের প্রতি কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জোর দাবি জানিয়ে বলেন, রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও মানবতার পক্ষে আওয়াজ তুলতে হবে। প্রয়োজনে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করতে হবে এবং মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর নৃশংস গণহত্যা পরিচালনার দায়ে এবং মানবতার বিরোধী অপরাধে কারণে থেইন সেইন সরকারকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর উদ্যোগ নিতে হবে। অন সান সূচী বিশ্বের এক নাম্বার জঙ্গী, সে খুনি হিসেবে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখে রোহিঙ্গা মুসলমানদের মানবিক ও নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে এবং গণহত্যা বন্ধ করার জন্য কুটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করুন। মিয়ানমার কথা না শুনলে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করুন। বিশ্বের কোটি কোটি তৌহিদী জনতা আপনাদের পাশে থাকবে। দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার স্থায়ী সমাধানে আপনার অগ্রণী ভূমিকা পালন করুন।
আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্রকে কর্পোরেট মানসিকতা পরিহার করে আর্তমানবতার স্বার্থে জাতিসংঘের ‘শরণার্থী পুনর্বাসন আইন’ অনুযায়ী বাস্তু ও রাষ্ট্রহারা এবং সাগরে ভাসমান অসহায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দান ও পুনর্বাসনে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
নগর সভাপতি মাওলানা হাফেজ তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনূষ্ঠিত সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মাওলানা শামসুদ্দোহা চৌধুরী, মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মুফতি হারুন ইজহার, আলহাজ আবদুর রহমান চৌধুরী, কারী ফজলুল করিম জিহাদী, মাওলানা মীর ইদরিস, মাওলানা মিয়া মোহাম্মদ শরীফ, প্রফেসর মুসা কলিমুল্লাহ, মাওলানা হাফেজ ফায়সাল, মাওলানা জয়নাল আবেদীন কুতুবী, মাওলানা কারী মুবিনূল হক, মাওলানা আবু তাহের ওসমানী, মাওলানা আ.ন.ম আহমদুল্লাহ, মাওলানা কামরুল ইসলাম কাসেমী, মাওলানা অশরাফ বিন ইয়াকুব, মাওলনা নুর মোহাম্মদ, মাওলানা ওসমান কাসেমী, মাওলনা মাহমুদুল করিম, মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ, মাওলানা মোস্তাক মাদানী প্রমূখ।
সভাপতির ভাষণে মাওলানা তাজুল ইসলাম বলেন, আরকানে মুসলমানের ওপর যে নির্যাতন চলছে তা জাহেলী যুগের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। এই করুণ পরিস্থিতিতে কোন বিবেকবান ও ঈমানদার মানুষ নিরব বসে থাকতে পারে না। আরকানের অত্যাচারিত মুসলমানদের পাশে দাড়ানো, সকল মুসলমানদের ঈমানী দায়িত্ব।
মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী বলেন, গত কয়েকদিন থেকে নদীতে ভাসছে মিয়ানমারের নির্যাতিত মুসলমান শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতি, বৃদ্ধ নারী পুরুষের বিকৃত লাশ। নারীদের ধর্ষণ করে নির্বিচারে হত্যা করছে সরকারী বর্বর বাহিনী। তারা মুসলমানদের ঘর বাড়ি, মাদরাসা ও মসজিদগুলি জ্বালিয়ে দিচ্ছে, শিশুসহ সব বয়সী মানুষদেরকে দা দিয়ে কুপিয়ে মারছে, এমনকি জীবন্ত মানুষগুলোকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করতেছে। এরা সন্ত্রাসী, মানবতার শত্রু। এদেও বিরুদ্ধে জিহাদেও প্রস্তুতি নিতে হবে।
মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন,আরাকানে রক্তের নদী বইছে। আরাকান রক্তাক্ত করার সাহস পেয়েছে চীন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী খুনি মিয়ানমার সরকারকে সমর্থন দেয়ার কারণে। ইহুদীবাদী ইজরাঈল অস্ত্র সরবরাহ করছে এটা শুধু ভূরাজনৈতিক সমস্যা নয়, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। এটি মুসলিম সভ্যতা ও মূল্যবোধের বিরুদ্ধে বহুদেশিয় সাম্প্রদায়িক সংঘাতের জলন্ত প্রমাণ।
মুফতি হারুন ইজহার বলেন, রোহিঙ্গা মুসলিমরা নিজ জন্ম ভ’মিতে অধিকারহারা। তারা নিষ্ঠুর বর্বরতম নির্যাতনের স্বীকার। মানবতাবাদী বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো নিরব দর্শকের ভ’মিকা পালসন করছে। উগ্রজাতীয়তাবাদ যে মানুষকে পশুতে পরিণত করে তার নিকৃষ্টতম উদাহরণ হলো আরকানের বর্তমান চিত্র।