
ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে স্বজনদের বাসা বাড়িতে বেড়ানোর পাশাপাশি দুপুর থেকে নগরীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে ছুটে গেছেন সারা বছর কর্মব্যস্ত মানুষ। পরিবার পরিজন নিয়ে দিনভর ব্যস্ত হয়ে উঠেন আনন্দ উল্লাসে।
তবে সকালে ঈদ জামাতের আগে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় পুলিশের উপর সন্ত্রাসী চক্রের হামলার কারণে চট্টগ্রামের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ঈদের জামাতে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের সরিয়ে বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে বলে জানান সিএমপি পুলিশ।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য জানান, ঈদের দিন থেকে নগরীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে সর্বস্তরের মানুষের ভীড় বোড়ে তাই সকালে যারা নগরীর ঈদ জামাতে দায়িত্বে ছিল তাদের মধ্যে আমরা দুইটা ভাগ করেছি। এক ভাগ আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় টহল দিচ্ছে। আরেকটি অংশকে জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে পাঠিয়েছি।
এদিকে ঈদের দিনেই নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সমুদ্র সৈকত, শিশুপার্ক, ইকোপার্ক, ওয়াটার পার্ক কিংবা চিড়িয়াখানা সব জায়গায় ছিল দর্শনার্থীদের ভীড়।
আবালবৃদ্ধবনিতা সব মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে নগরীর সবকটি বিনোদন স্পট। আর দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে বিনোদন কেন্দ্রগুলো।

চট্টগ্রামের বিনোদন কেন্দ্রের তালিকায় রয়েছে- ফয়’স লেক সি-ওয়ার্ল্ড (ওয়াটার পার্ক), পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, বাটারফ্লাই পার্ক, নেভাল অ্যাকাডেমি, চিড়িয়াখানা, আগ্রাবাদ শিশুপার্ক, কাজীর দেউড়ি শিশুপার্ক, সিআরবি মোড়, রেলওয়ে জাদুঘর ও জাতীয় জাদুঘর, বাটালি হিল, ডিসি হিল, ভাটিয়ারী পাহাড় পার্ক, বিপ্লব উদ্যান, তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু, ওয়ার সিমেট্রি ও স্বাধীনতা পার্ক অন্যতম। শহরের বাইরের বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে আনোয়ারার পারকি সমুদ্র সৈকত, সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ পাহাড়, সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক, মিরসরাইয়ের মহামায়া ও বাঁশখালী ইকোপার্ক।
সরেজমিন দেখা গেছে, সকাল থেকেই শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সব বয়সী মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় নগরীর সবকটি বিনোদন কেন্দ্র। ধনী-গরিব সবাই আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব একে অন্যের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগ করে নিতে জড়ো হয়েছিলেন বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। ঈদের দিন দুপুর থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে নগরীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। দর্শনার্থীদের মধ্যে কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী ও প্রেমিক যুগলের সংখ্যা ছিল একটু বেশি। তবে বিনোদন কেন্দ্রগুলো দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত ছিল রাত অবধি। টাউন সার্ভিস গাড়িগুলো কম থাকার সুযোগে রিকশা ও সিএনজি চালকরা ভ্রমণ পিপাসুদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করে কয়েকগুণ বেশি। যানবাহনের মধ্যে যে যেটা পাচ্ছে তাহা নিয়েই রওনা দিচ্ছে। ফলে রাস্তায় খালি যানবাহনের সংখ্যা ছিল না বললেই চলে। শুধু ভিড় ছিল বিনোদন কেন্দ্রগুলোর চারপাশে।

নগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র ফয়’স লেক সি-ওয়ার্ল্ড (ওয়াটার পার্ক) ঈদ আনন্দে ফয়’স লেকে বেড়াতে আসা ব্যবসায়ি রমজান আলী বলেন, এখন সন্তানদের নিয়ে সবাই একসঙ্গে এসেছি সি-ওয়ার্ল্ডে। ঈদের সময় হিসেবে প্রতিটি রাইডের টিকিটের দাম বেশি। তারপরও বছরের অন্য দিনগুলোতে কাজের চাপ থাকায় ঈদের ছুটির সুযোগে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সময় কাটাতে এসে এতো ভাল লাগবে কখনও কল্পনাও করিনি। এখন মনে হচ্ছে কাজের ভিড়েও মাঝে মধ্যে বেড়াতে আসা উচিৎ হবে।
ফয়’স লেক অ্যামিউজমেণ্ট পার্কের সহকারী ব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ঈদের ছুটিতে চট্টগ্রামের বাইরে থেকে লোকজনই বেশি ফয়’স লেকে এসেছেন। অনেকে দিনভর বেরিয়ে আবার বিকেলে চলে যাচ্ছেন অন্য কোথাও। অনেকে আবার কটেজ ভাড়া নিয়ে উঠেছেন। ঈদের দিন দুপুর থেকেই এখানে লোকজন আসতে থাকে। প্রতি ঘণ্টায় ফয়’স লেকে ৮০০ আর ওয়াটার পার্কে ৫০০ লোক জড়ো হয়েছেন। বিকেলে প্রায় ৫ হাজার বিনোদন পিয়াসী মানুষের উপস্থিতিতে উপচেপড়া ভিড় তৈরি হয়েছে ফয়’স লেকজুড়ে
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে মানুষের ঢল নেমেছে। শিশু, কিশোর-কিশোরী থেকে বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরুষ সৈকতে এসে আনন্দে মেতেছেন। কেউ কেউ স্পিডবোট নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সাগরে, আবার কেউ কেউ ঢেউয়ের মধ্যে ভাসিয়ে দিয়েছেন নিজেকে।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে সপরিবারে বেড়াতে আসা গৃহিণী সুবর্ণা বলেন, ঈদের দিন বেড়াতে বের হলাম। বাচ্চাদের নিয়ে বেড়াতে বের হওয়ার সময় খুব একটা হয় না। তবে সবাই একসঙ্গে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পেরে খুশি তারা। আর তাদের খুশি মানেই আমাদের খুশি।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের অদূরে নেভাল একাডেমির আশপাশেও যেন বসেছে মানুষের মিলনমেলা। বিভিন্ন গাড়ি নিয়ে দূরদূরান্ত থেকে এসেছেন বিভিন্ন বয়সী নারী, পুরুষ। কেউ গরম পিঁয়াজু আর কেউ খাচ্ছেন কাঁকড়া ভাজা, আবার কারও হাতে কোল্ড ড্রিংকস।
পতেঙ্গার বিমান বন্দরের কাছে অবস্থিত দেশের একমাত্র বাটারফ্লাই বা প্রজাপতি পার্ক ছিল দর্শনার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। শিশুদের নিয়ে তাদের বাবা-মা ভিড় করেছেন। নানা রঙের, নানা প্রজাতির অসংখ্য প্রজাপতির ভিড়ে পুরো পার্কজুড়ে ছুটোছুটি করছে শিশুরা।
খুদে দর্শনার্থী বাপ্পা বলে, ঈদের দিন বাবার সঙ্গে দেশের একমাত্র প্রজাপতি পার্কে এলাম। হরেকরকম প্রজাতির প্রদর্শন দেখে ঈদের আনন্দ আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেল। এখান থেকে যেতে মন চাইছে না।