
চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে আছে সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকরা। পর্যটকদের সাথে প্রতারনার এক নিরাপদ স্থান যেন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। বিশাল এই সমুদ্র সৈকতে প্রতিদিন ভীড় জমানো দর্শনার্থীরা যেন রীতিমত জিম্মি।
এখানে ঘুরতে আসা দেশী বিদেশী দর্শনার্থীর নিয়ে যেন পূর্ব প্রস্ততুতি নিয়ে “নীল নকশা” কষতে বসেছেন একদল অসাধু ব্যবসায়ী।
এ ছাড়া এখানে সমুদ্র দর্শনে আসা পর্যটকরা সন্ধ্যা হলেই পড়েন মাদক সেবিদের হয়রানীতে। সন্ধ্যার পর এখানে বসে রীতিমত মাদকের হাট।
ভ্রমন পিপাসু পর্যটকদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এখানে গড়ে ওঠা ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য বিক্রির নামে হাতিয়ে নিচ্ছে আগত পর্যটকদের মানিব্যাগের শেষ পয়সা গুলো।

ভ্রমণ পিপাসুমানুষদের জন্য বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন শহর হিসেবে চট্টগ্রামের পরিচিত রয়েছে ব্যাপক। চট্টগ্রামকে বলা হয় পর্যটনের গেটওয়ে। কিন্তু পর্যটনের প্রবেশদ্বারে অবস্থিত প্রথম পর্যটন কেন্দ্র পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতেরই বেহাল দশা। এ পর্যটন স্পটটিকে ঘিরে আগন্তুকদের ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও এর কোন আধুনিকায়ন হয়নি। কোন কোন স্থানে মেরামত করা হয়নি ঘুর্নিঝড়ে বিধ্বস্ত বেড়ি বাঁধেরও ।
পর্যটকরা যে কোন কিছুর বিনিময়ে হলেও পর্যটন কেন্দ্র গুলোর সাথে নিজেদেরকে পরিচয় করিয়ে নিতে এতটুকু কার্পন্য করেননা। চট্টগ্রাম পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতকে আধুনিকায়ন করার কথা কেবল ঘোষনাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে দীর্ঘকাল যাবৎ।
পর্যটকরা যে কোন কিছুর বিনিময়ে হলেও পর্যটন কেন্দ্র গুলোর সাথে নিজেদেরকে পরিচয় করিয়ে নিতে এতটুকু কার্পন্য করেননা। চট্টগ্রাম পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতকে আধুনিকায়ন করার কথা কেবল ঘোষনাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে দীর্ঘকাল যাবৎ।
এদিকে দর্শনার্থীরা সারাদিনের ক্লান্তিকর ভ্রমণের পর যখন সু-স্বাদু খাবারের মধ্যমে নিজেকে আর একটু চাঙ্গা করে নিতে ব্যস্ত ঠিক সে সময় এখানকার দোকান মালিকরা ব্যস্ত অধিক টাকার বিল তৈরীতে। সামান্য এক প্লেট ফুসকা, নুডুলস ও একটি ক্যান খেয়ে বিল দিতে হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০৫০ টাকা।
শুধু খাওয়ার দোকান নয় আনন্দের সময়টুকু ক্যামরাবন্দী করতে হাতে ছোট বড় ডিজিটাল ক্যামেরা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় কিছু ক্যামেরা ম্যানদের। তাদের কাজ হল পর্যটকদের কোন মতে ১ কপি ছবি তোলার জন্য রাজি করাতে পারলেই পরবর্তীতে ১৫-২০ কপি পর্যন্ত ছবি তোলা এবং নিতে বাধ্য করা।

“ঘোড়ায় চড়তে কে না চায় ? বিশেষ করে শিশু এবং কিশোর কিশোরীরা তো একেবারে পাগল হয়েই যায়। আর তা যদি হয় আবার বিশাল সমুদ্রকে সাক্ষী রেখে। তাহলে তো আর কথাই থাকেনা। শুধু কি শিশু কিশোর ? তাদের সাথে পাল্লা দেন বড়রাও । তাই সৈকতে এসে ঘোড়ার পিঠে চড়ার শেষ পরিনাম ভোগ করতে হয় খালি পকেট নিয়ে ঘোড়ার পিঠ থেকে নামা। ঘোড়ার মালিককে ৪০০-৫০০ টাকা দিতে হয় বলে জানান পর্যটকরা।”

ঘোড়ায় চড়তে কে না চায় ? বিশেষ করে শিশু এবং কিশোর কিশোরীরা তো একেবারে পাগল হয়েই যায়। আর তা যদি হয় আবার বিশাল সমুদ্রকে সাক্ষী রেখে। তাহলে তো আর কথাই থাকেনা। শুধু কি শিশু কিশোর ? তাদের সাথে পাল্লা দেন বড়রাও । তাই সৈকতে এসে ঘোড়ার পিঠে চড়ার শেষ পরিনাম ভোগ করতে হয় খালি পকেট নিয়ে ঘোড়ার পিঠ থেকে নামা। ঘোড়ার মালিককে ৪০০-৫০০ টাকা দিতে হয় বলে জানান পর্যটকরা।
পর্যটকরা চট্টগ্রাম পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে এসে এমন স্মৃতি নিয়ে ফিরে যা কখনো আর মনেও করতে চায়না তারা।
মো: জহির নামে সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে আসা এক দর্শনার্থী এ প্রতিবেদককে জানান, এখানে খাবার নিয়ে চরম নৈরাজ্যে চলছে। প্রতিটি প্যাকেট জাত খাবারের মোড়কের মূল্য স্ব স্ব কোম্পানি কর্তৃক নির্ধারন করে দেওয়া হলেও বিক্রি করা হচ্ছে অধিক দামে।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে দর্শনে আসা পর্যটকদের নিয়ে এমন নৈরাজ্য চলতে থাকলে খুব শীঘ্রই তা দর্শক বিমুখ স্থানে পরিণত হবে বলে আশংকা পর্যটকদের।
এদিকে এসব অনিয়মের বিষয়ে নাম প্রকাশে কয়েকজন অনিচ্ছুক দোকান মলিক জানান, আমরা নিরুপায়। কেননা দোকান ভাড়া হতে শুরু করে প্রতিদিন বিভিন্ন সংস্থাকে যে পরিমান টাকা প্রদান করতে হয় তা যোগাড় করতেই এসব কাজ করা হয। তবে কোন কোন সংস্থাকে টাকা দিতে হয় সে বিষয়ে কিছু বলেননি এসব ব্যবসায়ী।
শুধু খাবার আর পন্য কেনা কাটা বা ঘোড়ায় চড়তে অনিয়ম নয়। পতেঙ্গা সৈকত রোডের পাশে অবৈধ ভাবে অনেক গুলো সিএনজি এলোপাতাড়ি ভাবে পার্কিং করে পর্যটকদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হয়। সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটেরও। সৈকত রোডটি পর্যটকদের হাটার জন্য হলেও অবৈধভাবে গাড়ী পার্কিং করে রাখার ফলে নানা ভোগান্তিতে পড়েন পর্যটকরা।
এ সড়কটি নো পার্কিং জোন জানার পরেও পুলিশের নাকের ডগায় সারিবদ্ধভাবে রাখা আছে শত শত সিএনজি। অবশ্য এ জন্য স্থানীয় দায়িত্বরত পুলিশকে সিএনজি প্রতি দিতে হয় ১০/২০ টাকা। আর এ কারণে পর্যটকরা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে সিএনজি ঠিক করতে হয়। সিএনজি চালকরা জানান, পার্কিংয়ের জন্য পুলিশকে টাকা দিতে হয় বলেই আমরা ভাড়া একটু বাড়তি নিই।
এ ছাড়া পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ট্যুরিষ্ট পুলিশ দায়িত্বে থাকলেও নিরাপত্তার কাজে দেখা যায়না তাদেরকে। উল্টো বিভিন্ন অজুহাতে পর্যটকদের হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে এ সংস্থাটির বিরুদ্ধে।
এদিকে সমুদ্র পাড়ে সারি সারি ভাবে সাজানো বিভিন্ন পন্যেও দোকানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে নিম্মমানের বাহারি সব পন্য। কাপড় চোপড় থেকে নানা প্রকার খাদ্য দ্রব্য, খেলনা ও কসমেটিক সামগ্রী দিয়ে সাজানো এসব দোকানের বেশীর ভাগ পন্যই অত্যন্ত নিম্মমানের। এসব নিম্মমানের পন্যগুলো বিক্রি করা হয় আকাশচুম্বি দামে। এখানেও প্রতারিত হচ্ছে পর্যটকরা। বার্মিজ আচাড়ের নামে বিক্রি হচ্ছে দেশীয় তৈরি অস্বাস্থ্যকর পঁচা দুর্গন্ধযুক্ত আচাড়। ফুসকা আর চটপটির দোকান গুলোর আড়ালে চলে দেশীয় তৈরি নানা মাদকের ব্যবসা। টাকা দিলেই মিলে বিভিন্ন ধরনের মদসহ মাদক সামগ্রী।

সমুদ্র দর্শনার্থীদের নিয়ে পাড়ি দেয়া স্পীড বোট গুলো নিয়েও রয়েছে নানা অনিয়ম। সমুদ্রের পাড়ে এসে সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে তাল মিলিয়ে অথৈই সাগড় পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন সকল দর্শনার্থীরা। আর তাই স্পীডবোট গুলো দেখে লোভ সামলাতে না পেরে দর্শনার্থীরা উঠে বসেন সমুদ্রের বিশাল জলরাশির সাথে ক্ষনিকের জন্য নিজেকে হারিয়ে দিতে। আর এ বিশাল জলরাশির সাথে হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নই ডেকে আনে বিপদ। লাইফ জ্যাকেট না পড়াতে পড়তে হয় বড় ধরনের বিপদের মুখে। ঘটে প্রাণহানির ঘটনা।
সমুদ্র দর্শনার্থীদের নিয়ে পাড়ি দেয়া স্পীড বোট গুলো নিয়েও রয়েছে নানা অনিয়ম। সমুদ্রের পাড়ে এসে সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে তাল মিলিয়ে অথৈই সাগড় পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন সকল দর্শনার্থীরা। আর তাই স্পীডবোট গুলো দেখে লোভ সামলাতে না পেরে দর্শনার্থীরা উঠে বসেন সমুদ্রের বিশাল জলরাশির সাথে ক্ষনিকের জন্য নিজেকে হারিয়ে দিতে। আর এ বিশাল জলরাশির সাথে হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্নই ডেকে আনে বিপদ। লাইফ জ্যাকেট না পড়াতে পড়তে হয় বড় ধরনের বিপদের মুখে। ঘটে প্রাণহানির ঘটনা।
প্রাণঘাতির বিপদ থেকে রক্ষা পেলেও একটি বিপদ থেকে যেন কোন ভাবেই নিস্তার মিলছেনা দর্শনার্থীদের। ৫০ টাকার কথা বলে বোট থেকে নামার পর দ্বিগুন ভাড়া চেয়ে বসে বোট কর্মচারীরা। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় দর্শনার্থীদের।
পতেঙ্গা সমুদ্র পাড়ে সারি সারিভাবে অপেক্ষমান এসব স্পাীডবোটের সিংহ ভাগেরই নেই সরকারী লাইসেন্স বা নিবন্ধন। কোনটিতে নামে মাত্র দু একটি লাইফ জ্যাকেট থাকলেও সে গুলো দুর্গন্ধময় বলে অে নক সময় পর্যটকরা তা ব্যবহার করেননা। এদেও আবার রয়েছে সিন্ডিকেট। অনিয়মওে প্রতিবাদ করলেও সিন্ডিকেটের হাতে লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনাও ভূঁড়ি ভূঁড়ি । জনৈক মুসার তত্ত্বাবধানে চলে এসব অবৈধ স্পাীডবোট।
অনিয়মের কথা স্বীকার করে স্পীড বোট মালিক সমিতির সভাপতি মূসার জানান, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এসকল অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া অল্প সময়ের মধ্যে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা করবেন।
এ ছাড়া সৈকতের বেড়িবাঁধে ঝোপের আড়ালে কিছু অসাধু ব্যক্তি চালাচ্ছে দেহ ব্যবসা। এ জন্য রয়েছে বেড়িবাঁধের উপর ছোট ছোট কটেজ। ঘন্টা হিসেবে এসব কটেজ ভাড়া নেয় উঠতি বয়সের তরুন তরুনী আর শিক্ষার্থীরা। এসব কটেজে কর্মরত কর্মচারীরা কটেজের সামনে দাঁড়িয়ে অনেকটা খদ্দের ডাকার মত করে তরুন তরুনীদেরকে আহবান করেন। তাদেরকে বলতে শুনা যায় আসেন স্যার ভিতরে সব ব্যবস্থা আছে। যা সবই সম্ভব হচ্ছে পুলিশকে মাসিক মাসোহারার দেয়ার বদৌলতে।
এ সব কটেজের পাশেই ট্যুরিষ্ট পুলিশের ক্যাম্প থাকলেও এসকল কর্মকান্ড কিভাবে ঘটছে এমন প্রশ্নের জবাবে ট্যুরিষ্ট পুলিশ পরিদর্শক শাহাদাত বলেন, এমন অভিযোগ প্রায়ই শোনা গেলেও অপরাধীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেলেই পালিয়ে যায়। তাই তাদের আইনের আওতায় আনা যায় না। তবে টহল ডিউটিতে লোকবল বৃদ্ধি করে প্রায় ২৪ ঘন্টা দর্শনার্থীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বলে দাবী এ পুলিশ কর্মকর্তার। মাসিক মাসোহারা আদায়ের কথা অস্বীকার করেন তিনি।
এদিকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে পাহাড় সমান অনিয়ম, পর্যটক হয়রানি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে পতেঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কাশেম জানান, এসব ব্যাপারে সু-নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।