
আগামীকাল ২০ জুলাই রাজধানীর যমুনা ফিচার পার্কে বাংলাদেশে পরবর্তী সন্ত্রাসী হামলার ঘোষণা দেয়া হয়েছিলো কদিন আগেই। টুইটারএ কামিল আহমেদ নামের এক ব্যক্তি এমনটাই হুমকী’র প্রেক্ষিতে অবশেষে সর্তক হয়ে উঠেছে ঢাকার প্রশাসন। যে কোন সম্ভাব্য হামলা এড়াতে গতকাল থেকে যমুনা ফিচার পার্কে তিনস্তরের নিরাপত্তা ঢেকে ফেলা হয়েছে।

গত ১ জুলাই গুলশানের রেস্তেরায় ভয়াবহ জঙ্গী হামলার পর সারাদেশ যখন গভীর শংকায় ঠিক তখন গত ৪ জুন রাত পৌনে একটার দিকে প্রকাশ করা এক টুইট বার্তায় বাংলাদেশে আবারো হামলার প্রকাশ্য হুমকী দেয়া হলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে বিষয়টি।
বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রকাশিত সুত্র বলছে, এর আগে গত পহেলা জুলাই গুলশানের ডিপ্লোমেটিক জোনের রেষ্টুরেন্টে হামলা ও মর্মান্তিক হত্যাকান্ড চালানোর আগেও সন্ত্রাসীরা টুইটারে এর আভাস দিয়েছিলো।

ওই দিন বেলা ১১টা দুই মিনিটে আনসার আল ইসলাম বিডি নামের এক টুইটার একাউন্ট থেকে বলা হয়, ‘ইট উইল বি ফার্স্ট ইন #বাংলাদেশ টু এ্যাটাক ইন ডিপ্লোমেটিক জোন, টেকিঙ হোস্টেজ এন্ড লার্জেস্ট অপারেশন এ্যাগেইনস্ট দা ক্রুসেডারস এন্ড ইটস এলাইস’। অর্থাৎ এটা হবে বাংলাদেশের ডিপ্লোম্যাটিক জোনে প্রথম হামলা, ক্রুসেডার ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় জিম্মি অপারেশন হতে যাচ্ছে ।’
অবশ্য এই একাউন্টটি পরে নিষ্ক্রিয় পাওয়া যায়। তবে হামলার পরপরই রাত ১০টা ছয় মিনিটে ওই ঘটনার দায় স্বীকার করে আনসার আল ইসলাম নামের একাউন্টটি থেকে আরেকটি টুইট প্রকাশ করা হয়।ওই দিন রাত একটা ২৪ মিনিটেই একই ঘটনার দায় স্বীকার করে আইএস।

শুক্রবারের ঘটনায় জঙ্গীগোষ্ঠীর আগাম হুমকির সেই ঘটনার মতই সোমবারের এমন হুমকি আবারো বাংলাদেশে নতুন কোন রক্তাক্ত অধ্যায়ের আভাস কী না ? সেই আশংকা আর ভয় কাজ করছিলো সবার মধ্যেই।
টুইটারে এই হুমকির পরে বিভিন্ন গনমাধ্যমে এই ঘটনার সংবাদ প্রকাশ হলে আগাম সতর্কতায় নড়েচড়ে বসে যমুনা কতৃপক্ষ সহ পুলিশ প্রশাসন। মঙ্গলবার থেকেই যমুনা ফিউচার পার্ক ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে পার্ক কর্তৃপক্ষ।
যমুনা ফিউচার পার্কে গিয়ে দেখা যায় ব্যপক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে বিপণীবিতান সহ আশেপাশের পুরো এলাকায়। এছাড়া রয়েছে সার্বক্ষণিক র্যাব-পুলিশের টহল ও চেকআপ।
জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে যমুনা ফিউচার পার্কের ব্রান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের প্রধান মাহবুবুর রহমান শাকেব জানান, কেও হয়তো বিভ্রান্তি ছড়াতে অথবা দৃস্টি অন্যদিকে ঘোরাতে এসব করতে পারেন। তবে নিরাপত্তার সার্থে আমরা বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথেই দেখছি।
হুমকির ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেকেই পরিচিত স্বজনদের আগামী কিছুদিন যমুনা ফিউচার পার্কে না যেতে অনুরোধ জানিয়ে সতর্কতামুলক পোস্ট করেন। এর ফলে সামনে ঈদকে কেন্দ্র করে বিপনী বিতানে গ্রাহকের আনাগোনা কমেছে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুর রহমান জানান, ”কিছুটা বিরুপ প্রভবট পড়েই এমন ঘটনায় তবে দুশ্চিন্তা করার কোন কারণ নেই। আমরা যথেষ্ট নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ নিয়েছি। তিন স্তরে আমাদের নিজস্ব নিরাপত্তা রয়েছে। এছাড়া র্যাব-পুলিশের সার্বক্ষণিক টহল ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সক্রিয় রয়েছে। ”
এর আগে সোমবার মধ্যরাতে কামিল নামের ঐ টুইট ব্যবহারকারী তার আইডি থেকে টুইট করেন, ”Next Attac Jamuna Feture Park” (‘নেক্সট এ্যাটাক যমুনা ফিউচার পার্ক’)। এর নীচে ‘হ্যাশ ট্যাগ’ দিয়ে লেখা হয় ‘মিশন ২০ জুলাই’।
এ ঘটনায় রীতিমত শোরগোল পড়ে যায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ।
এদিকে, কামিলের টুইটের জবাবে বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশের টুইটার ইউজাররা তাকে নানা প্রশ্ন করতে শুরু করেন ।
তানজিল আকন নীপা নামে একটি আইডি থেকে কামিলের এই টুইটের নিচে এই হুমকীকে উড়িয়ে দিয়ে তাকে ‘ফেইক’ বলে সম্বোধন করলে অপর একটি টুইটে কামিল নামের এই আইডি থেকে বলা হয়,‘ফেক অর রিয়াল; ওয়েট ফর ২০ জুলাই’ (সত্য হোক বা মিথ্যা, ২০ জুলাইয়ের জন্য অপেক্ষা কর) ।
মাহবুবুর রহমান নামের একজন টুইটার ব্যবহারকারী তাকে প্রশ্ন করেন, কেন তুমি বাংলাদেশে আক্রমনের কথা বলছো? সমস্যাটা কি পরিস্কার করে বলো ?
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে কামিল নামের এই আইডি থেকে বলা হয়, ‘উই আর ডিফেন্ডিঙ ইসলাম ফরম নন মুসলিম’ (আমরা ইসলামকে অমুসলিমদের হাত থেকে রক্ষা করছি)।
তবে এসব প্রশ্নের উত্তর দেবার মাঝেই রহস্যজনকভাবে প্রায় তিন ঘন্টা পর হামলার হুমকি দেয়া সেই আইডিটি নিষ্ক্রিয় পাওয়া যায়। অ্যাকাউন্টটিতে কামাল আহমেদ নিজেকে ইসলামিক স্ট্যাটস অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইএসআইএস) সদস্য দাবি করে । কামিল আহমেদের আইডি লিংক এখানে দেয়া হলো । (বর্তমানে নিস্ক্রিয় অবস্থায় আছে ) ।
অনেকেই সতর্কবার্তা দিয়ে পরবর্তী সময়ে পরিচিত স্বজনদের নিষেধ করছেন যমুনা ফিচার পার্কে যেতে ! আবার অনেকেই এমন আশংকাকে উড়িয়ে দিয়ে বলছেন, এসব স্রেফ মানুষকে ভয় দেখাতেই করা।