
রাজীব সেন প্রিন্সঃ
নগরীতে স্কুলছাত্রী তাসফিয়ার মৃত্যুর ১১দিন অতিবাহিত হলেও এখনো উন্মোচন হয়নি মৃত্যুরহস্য। নিহতের পিতার অভিযোগ মন্থর গতিতে আসামীদের খুঁজে বেড়াচ্ছে পুলিশ। আশানুরূপ কোন অগ্রগতি নেই এ মামলার। বরং হত্যাকান্ডের জন্য সমাজ ব্যবস্থাকে দায়ী করছে পুলিশ।
একটি বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলায় নানার বাড়িতে আত্মগোপনে রয়েছে এ হত্যাকান্ডের অন্যতম আসামি ‘রিচ কিডস’ নামের গ্যাংস্টারের সদস্য আসিফ মিজান। যাকে গ্রেফতার করা হলে হয়তো খুলে যেত তাসফিয়া হত্যাকান্ডের মূল রহস্য। তবে এ বিষয়ে নিরব ভুমিকা পালনের অভিযোগ এলাকাবাসীর।

চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানা হামজারবাগ গাউসিয়া আবাসিকে ইসলাম সিকদার ম্যানশনের তৃতীয় তলার নিজ বাড়িতেই বসবাস করতো তাসফিয়া হত্যাকান্ডের অন্যতম আসামি আবুল হাশেমের ছেলে আসিফ মিজান। এ বিষয়ে তথ্য অনুসন্ধানে আসামির বাসায় গেলে বাসাটি তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। বাসার দারোয়ানের কাছেও পরিবারের কারো অবস্থান জানা নেই বলে জানায় সে।

সূত্রটি জানিয়েছে ওসমান নামে মিজানের এক নিকট আত্মীয় আসিফ মিজানকে আত্মগোপনে রাখতে সহায়তা করছে। তথ্যমতে নানা বাড়িতে গেলে আসামি সম্পর্কে কোন তথ্য দিতে নারাজ নানা বাড়ির লোকজন। মিজানের আত্মীয় পরিজন অনেকের মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও ওই প্রান্ত থেকে কেউ ফোন তুলেনি।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার আরেফিন জুয়েল বলেন, তাসফিয়ার মৃত্যু কীভাবে হয়েছে তা জানতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছেন তারা। এছাড়া তার বন্ধু আদনানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাকে আরো জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন সহজ হবে। একই সাথে আদনানের বন্ধু ও সহযোগিদেরও গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।
এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, ধর্নাঢ্য পরিবারের সন্তান আসিফের আর্থিক সহায়তায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘রিচ কিডস’ গ্যাংস্টার নামে ফেইসবুক ভিত্তিক একটি গ্যাং তৈরি করে কিশোর বাহিনী। আসিফ মিজানের ব্যবহৃত গাড়ি করেই হত্যাকান্ডের প্রধান আসামি আদনান নিহত তাসফিয়ার সাথে প্রথম সাক্ষাতে যায়। সূত্রটি জানায় নগরীর বিভিন্ন এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে ঘটনার আগের দিন এবং ঘটনা পরবর্তী দিন মিজানের সাদা কালারের এলিয়ন গাড়িটির অবস্থান চিহ্নিত করলে হয়তো এ হত্যাকান্ডের কিছু ক্লু পাওয়া যাবে। তাছাড়া মিজানের গ্রেফতারেও উন্মোচন হতে পারে তাসফিয়া হত্যাকান্ডের রহস্য।
গত ২ মে সানশাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী তাশফিয়ার লাশ পাওয়া যায় পতেঙ্গার নেভাল এলাকায়। ৩ মে তাসপিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন পতেঙ্গা থানায় তাসপিয়াকে গণধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ এনে আদনান মির্জাকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে রিচ কিডস গ্যাংস্টারের চার সদস্যসহ ৬জনকে আসামি করা হয়।
তাদের মধ্যে সানশাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র শওকত মিরাজ ও আসিফ মিজান, আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচ এস সির ছাত্র ইমতিয়াজ সুলতান ইকরাম এবং স্বঘোষিত যুবলীগ নেতা ফিরোজ ও তার সহযোগী যুবলীগ কর্মী সোহায়েল প্রকাশ সোহেল। এর মধ্যে তাসফিয়ার কথিত প্রেমিক বন্ধু আদনানকে গ্রেফতার করা ছাড়া এই মামলার দৃশ্যমান আর কোন অগ্রগতি নেই। এদিকে মেয়ে হারিয়ে বিচারের প্রহর গুনছে তাসফিয়ার পিতা মাতা।