ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

সন্দ্বীপে মৌসুমি ফলের আকালঃ বিষাক্ত ফলে বাজার সয়লাব

.

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

.

সাইফুল ইসলাম ইনসাফ
গ্রীষ্মের মৌসুমি দেশীয় ফল বর্ষার শেষ মাস পর্যন্ত বাজারে দেখা যায়। থরে থরে সাজানো নানা ফলের সমারোহ দোকানগুলোতে মৌ মৌ গন্ধ ছড়ায়। রসনা বিলাসী নারী পুরুষ ছুটে যায় ফলের দোকানে ফুটপাতে এসব ফল নামের বিষ কিনতে। গ্রীষ্মের ফলের মধ্যে আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, বেল, আনারস, জামরুল প্রভৃতি অন্যতম।

সন্দ্বীপে এবার আম উৎপাদন মোটামুটি ভাল হলে ও পোকার জন্য পাকা আম খাওয়া সম্ভব হয় নি। জাম, লিচু, কাঁঠাল, বেল, আনারস, জামরুল সন্দ্বীপে কেউ বাণিজ্যিক ভাবে তেমন উৎপাদন করে না। সেগুলো ব্যক্তিগত পর্যায়ে এত কম উৎপাদন হয় যা স্থানীয় বাজারে খুব কমই দেখা যায়। এবার বাইরে থেকে আনা লিচু, বেল স্বল্প সময় বাজারে দেখা যায়। আনারস ও বেশি সময় বাজারে থাকেনি। জাম কিন্তু লবণ-মরিচ মিশিয়ে উন্মুক্ত স্থানে ভ্যান গাড়িতে করে বিক্রি করছে দীর্ঘদিন ধরে। ধুলো বালি, আর মাছির ভনভনি খাবার পরিবেশকে ঝুঁকিতে ফেলে।

এছাড়া জামে এমন কিছু মেশানো আছে যাতে দিনের পর দিন জাম বিক্রি হয় কিন্তু পঁচতে দেখা যায় না। স্বাদ- গন্ধ ও ভিন্ন ধরনের। লবণ- মরিচের কারণে দুর্গন্ধ ও বিস্বাদ লুকিয়ে যায়।

এবার মৌসুমের শুরুতে সরকারি কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বিষাক্ত ফল বিশেষত আম পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বিষ পেয়ে বিশেষ করে কাঁচা আম পাকাতে কার্বাইড, পঁচনরোধে ফর্মালিন, পোকা রোধে বাগান পর্যায়ে অধিক পরিমানে সার,কীটনাশকের ব্যবহার, অধিক ফলনের উদ্দেশ্যে নানা ধরনের হরমোন ব্যবহার ফলকে খাবার অযোগ্য করে ফেলায় নানা শাস্তিমুলক ব্যবস্থার কথা গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়। ঝুড়ি ঝুড়ি আম রাস্তায় ফেলে নস্ট করার খবর ও প্রচারিত হয়। এতকিছুর পরে ও সন্দ্বীপের ফল ব্যবসায়ীরা কোথা থেকে বিষাক্ত আমসহ অন্যান্য ফল সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করে যা ভোক্তা ক্রয় করে পরিবার নিয়ে খেতে বাধ্য হয়। বাজারে পাওয়া আমের মধ্যে রত্না, হিম সাগর, রুপালী,ফজলী অন্যতম।

পঞ্চাশ থেকে একশ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে প্রতি কেজি আম। ক্রেতাগণ বলেন মনে হয় আমের মধ্যাংশে কোনো ধরনের বিষ মেশানো হয় যার তীব্র গন্ধ পাওয়া যায় আম খাওয়ার সময়, অত্যন্ত ঝাঁঝালো টক ও বিস্বাদ ওই অংশ। বাচ্চারা খেতে ও চায় না। বাকি কিছু অংশ বেশ মিস্টি এবং সুস্বাদু। ধারণা করা হয় আমে ইনজেকশন বা অন্য কোন উপায়ে এমন কোন বিষ মাখানো হয় যা ফলকে পুষ্ট, বড়, সুন্দর, পোকামুক্ত ও বেশি সময় অপঁচনশীল রাখে।

বিশেষজ্ঞগণ এসব ফল ভক্ষণের কুফল জনসাধারণ্যে মাঝে মাঝে প্রকাশ করলে ও সাধারণ মানুষ আম কেনা ও খাওয়া থেকে বিরত হন না। তাছাড়া সন্দ্বীপে এরূপ কোন বিশেষজ্ঞ বা পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে বলে কারো জানা নেই। সরকারি কর্তৃপক্ষের নজরে ও এসব সব সময় আসে না। সাধারণ ফল ব্যবসায়ীরা ও এসব ফল কেনা বেচা করতে বাধ্য হয়। লিভার, কিডনি, পাকস্থলির মারাত্মক রোগসহ নানা জটিলতায় ভোগে এসব বিষাক্ত ফল খাওয়া মানুষ। এসিডিটি, মাইগ্রেণ, হার্ট পালপিটিসান, বদহজম, ডায়রিয়াসহ নানা জটিলতায় ভোগার কথা ও শোনা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক বড় সমস্যা না হলে ও ধীরে ধীরে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয় বিধায় বিষাক্ত ফল খাওয়ার বিষয়ে মানুষ অসচেতন। তবে সচেতন অনেকে বলেছেন তারা বাজারে পাওয়া ফল কেনা ছেড়েই দিয়েছেন।

স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত কলা, পেপে, কাঁঠাল ও অন্যান্য মৌসুমি ফল পেলে কিনেন। এসব কিন্তু খুবই কম পরিমানে কম সময়ের জন্য বাজারে পাওয়া যায়। দাম ও বেশি হাঁকায় বিক্রেতারা। কেউ কেউ নিজেদের বাগানে উৎপাদিত কিছু ফল স্বল্প পরিমানে পরিবার নিয়ে খেতে পারেন। অধিকাংশ দ্বীপবাসী এখন ফলের পুষ্টি থেকে বঞ্চিত বলা যায়। স্থানীয় ভাবে ফল উৎপাদনে কৃষকগণকে সচেতন করার জন্য কৃষি কর্তৃপক্ষ কর্মসুচী নিয়ে এগিয়ে এলে এবং সরকারি সহযোগীতা বৃদ্ধি পেলে সন্দ্বীপে ফল উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে পারে।

আসুন এতদসঙ্গে জেনে নিই এসব মৌসুমি ফলের নানা উপকারী দিক।

আম : স্বাদ, পুষ্টি ও গন্ধে আম অতুলনীয়। পাকা আমে রয়েছে প্রচুর ক্যারোটিন। আম লিভার বা যকৃতের জন্য ভীষণ উপকারী। রাতকানা ও অন্ধত্ব প্রতিরোধে কাঁচা ও পাকা আম অতুলনীয়।

লিচু : লিচুর রসালো অংশ তৃষ্ণা মেটাতে সহায়ক। এর আঁটি চর্মরোগে বিশেষ উপকারী। কাশি, পেটে ব্যথা ও টিউমার বৃদ্ধি রোধে লিচু অনেক উপকারী। এ দিয়ে জ্যাম তৈরি করে সংরক্ষণ করা যায়। তবে যাদের গ্যাসট্রিকের সমস্যা রয়েছে তাদের লিচু কম খাওয়াই ভাল।

বাঙ্গি : রসালো ফল হিসেবে এই ফলের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। এর পুরোটাই জলীয় অংশে ভরপুর। ভিটামিন সি, শর্করা ও ক্যারোটিনসমৃদ্ধ এই ফলটি।

জাম : বাংলাদেশের সুপরিচিত ফল জাম। এই ফল গাছের কচিপাতা পেটের অসুখ সারাতে সহায়ক। আম ও জামের রস একত্রে খেলে বহুমূত্র রোগ ভাল হয়। লোকমুখে প্রচলিত আছে, জামের রস রক্তকণিকা পরিষ্কারে সহায়তা করে।

পেঁপে : পাকা পেঁপে আরেকটি ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ ফল। ১০০ গ্রাম ফলে ভিটামিন ‘এ’ থাকে ১১১০ ইউনিট। এছাড়া থাকে প্রচুর শর্করা, প্রোটিন, ভিটামিন বি ও সি. খনিজ লবণ এবং খাদ্যশক্তি। কাঁচা পেঁপেও অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি। পেঁপের সাদা আঠায় প্যাপেইন নামক এনজাইম থাকে, যা প্রোটিন পরিপাকে সাহায্য করে।

তরমুজ : গরমে ক্লান্তি দূর করতে এই ফলের তুলনা হয় না। তরমুজ তৃষ্ণা মেটায়। রক্তস্বল্পতা দূর করে। রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে লৌহ পদার্থ।

আনারস : পাকা আনারস শক্তি বাড়ায়। কফ নিরাময়ে সহায়ক, পিত্তনাশক এবং হজম বৃদ্ধি করে। এ ফলের শাঁস ও পাতার রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে কৃমি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আনারসের জ্যাম-জেলি তৈরি করেও সংরক্ষণ করা যায়।

বেল : সারা বছর পাওয়া গেলেও গরমকালে এই ফলের চাহিদা বেশি দেখা যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য ও আমাশয় সারাতে বেল অনেক উপকারী। এই ফলের পাতার রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে চোখের ছানি ও চোখ জ্বালা করা রোগের উপশম হয়।

কাঁঠাল : জাতীয় ফল কাঁঠালে রয়েছে প্রচুর শর্করা, আমিষ ও ভিটামিন-এ। কাঁচা কাঁঠাল তরকারি হিসেবে আর পাকলে ফল হিসেবে খাওয়া যায়। এর দানা ভেজে কিংবা রান্না করে খেতেও মজা। এছাড়া, কাঁঠালে রয়েছে প্রচুর ভেষজগুণ। এর শাঁস ও দানা চীনে বলবর্ধক হিসেবে বিবেচনা করে। ফল সাধারণত জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসে পাকে।

লেখক পরিচিতিঃ সাইফুল ইসলাম ইনসাফ
লেখক/সাংবাদিক, সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম।

“পাঠকের কলাম” বিভাগের সকল সংবাদ, চিত্র পাঠকের একান্ত নিজস্ব মতামত, এই বিভাগে প্রকাশিত সকল সংবাদ পাঠক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। তা্ই এ বিভাগে প্রকাশিত কোন সংবাদের জন্য পাঠক.নিউজ কর্তৃপক্ষ কোনো ভাবেই দায়ী নয়।”

 

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print