
ওয়াসিম হানিফ দুই সহোদরের দাপটে অতিষ্ঠ লালখান বাজারের সাধারণ মানুষ। সুদীপ্ত হত্যার পর কিছুদিন আত্মগোপনে ছিল তারা। ফুটপাতে ভাসমান হকারের কাঁছ থেকে চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে এলাকায় রাজনৈতিক বড় ভাইয়ের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে মারামারি কিংবা প্রতিপক্ষকে খুন করতেও দ্বিধা করে না তারা। দুইভাই লালখানবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুমের অনুসারী।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক সভাকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবার প্রতিপক্ষের ওপর হামলার ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছে তারা দুই ভাই। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ওই ঘটনায় সাতজন আহত হয়েছে। পরদিন শনিবার মহিম নামে আরো এক যুবককে ছুরিকাঘাত করা হয় হানিফের নেতৃত্বে। শুক্রবারের ঘটনায় খুলশী থানায় দায়ের হওয়া দুটি মামলাতেই দুই ভাইকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, ওয়াসিম ও হানিফকে হণ্যে হয়ে খুঁজছে তারা।
সহকারী কমিশনার (খুলশী–বায়েজিদ) সোহেল রানা জানান, ওয়াসিম–হানিফ দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে এলাকার সাধারণ মানুষের ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ রয়েছে। শুক্রবারের সংঘর্ষের ঘটনায় খুলশী থানায় দুটি মামলা হয়েছে।
২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে শরীফ নামে এক যুবককে প্রকাশ্যে কুপিয়ে খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিল হানিফ ও তার ছোট ভাই ওয়াসিম। পরবর্তীতে তারা কারাগার থেকে জামিনে বের হয়। হানিফ যুবলীগ ও ওয়াসিম নিজেকে লালখান বাজার ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা বলে দাবি করে। অভিযোগ রয়েছে, নগর ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত হত্যার ঘটনায় হানিফ জড়িত।
লালখানবাজার এলাকার স্থানীয় লোকজন হানিফের ব্যাপারে প্রকাশ্যে কিছু বলতে রাজী নন। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে লোকজন জানান, দুই ভাইয়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। ২০১৫ সালের ২৮ মে খোকন নামে এক যুবককে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে হানিফের অনুসারী শরীফ ওরফে টেম্পো শরীফ, রাব্বি, শরীফ ওরফে সুন্দর শরীফ, আলি, বাবুল, সোহাগ ও রেজাউল করিম ওরফে রাজু। হত্যার পর খোকনের লাশ মাটিচাপা দেয়া তারা। খোকনের বাড়ি কুমিল্লায়। পরবর্তীতে নিজেদের মধ্যে গ্রুপিং হলে ২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল বিকেলে কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে ওয়াসার মোড়ে রিকশা থেকে নামিয়ে পৌনে এক কিলোমিটার দূরে বাঘঘোনায় নিয়ে শরীফকেও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত শরীফের বাবা মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে খুলশী থানায় মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ মাঈনুদ্দিন হানিফ, তার ছোট ভাই ওয়াসিম ও সহযোগী আরমানকে শরীফ হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করেছিল। তাদের মুক্তির দাবিতে যুবলীগ আর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ব্যানারে সেই সময় পোস্টারও ছাপানো হয়েছিল।
সেই সময় অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পাঁচলাইশ জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মোবাশ্বের হোসেন। তিনি বর্তমানে নগর গোয়েন্দা পুলিশে কর্মরত রয়েছেন।
এসি মোবাশ্বের জানান, হানিফের পরিকল্পনায় শরীফ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিল। হানিফের ভাই ওয়াসিমের নেতৃত্বে শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় হানিফ, ওয়াসিম দুই সহোদরসহ এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো।
স্থানীয় লোকজন জানান, নবযুগ গোষ্ঠী নামে একটি ক্লাব রয়েছে হানিফের অনুসারীদের। যুবলীগের নাম ভাঙিয়ে হানিফের নেতৃত্বে চানমারী রোডের, কাঁচাবাজার, মাছ বাজারের ছোট ছোট দোকান থেকে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করা হয়। তাদের পক্ষে চাঁদা আদায়ের কাজটি করে পিচ্ছি হানিফের অনুসারী সবুজ। এছাড়া লালখানবাজার ইস্পাহানি মোড়, শহীদনগর স্কুল থেকে ওয়াসা মোড় ফুটপাতের ভাসমান দোকান থেকে প্রতিদিন ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। কোন দোকানদার চাঁদা না দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়। ওই এলাকায় কেউ জায়গা কিনে ভবন নির্মাণ করতে গেলেই তাদের চোখ পড়ে। তারা প্রথমে ভবন নির্মাণের ঠিকাদারী চায়। তাদেরকে কাজ না দিলে ইট বালিসহ নির্মাণসামগ্রীর ট্রাক সেখানে প্রবেশ করতে দেয় না। চালককে মারধর করে। রাতে দলবল নিয়ে এসে নির্মাণসামগ্রী চুরি করে নিয়ে যায়।
অভিযোগ রয়েছে, ইস্পাহানি মোড় এবং আশপাশের সংঘটিত বেশিরভাগ ছিনতাই কাজের সাথে তারা নিজে অথবা তাদের অনুসারীরা জড়িত থাকে। লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিাদরুল আলম মাসুমের সাথে বিভিন্ন সভা–সমাবেশে তাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যায় বলে কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।