
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন একাত্তরের জননী রমা চৌধুরীর মত একজন মহিয়সী নারী মহান মুক্তিযুদ্ধে চরম মূল্য দিয়েও তাঁর জন্য কোন প্রতিদান চাননি। আত্মমর্যাদা বোধকে বিক্রি করে কারো কাছে হাত পাতেন নি। তারপরেও তিনি জীবন যুদ্ধে বিজয়ী একজন অদ্বিতীয়া নারী। তাঁর জীবনাদর্শ আমাদেরকে শুদ্ধাচার হওয়ার প্রেরণা যোগাবে।
তিনি আজ বিকেলে সদ্য প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক একাত্তরের জননী রমা চৌধুরী স্মরণে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট চট্টগ্রাম জেলা শাখা আয়োজিত
শোকসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
নগরীর জেলা শিশু একাডেমী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত শোকসভায় তিনি আরো বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি নির্যাতিত হয়েছিলেন, আত্বীয় পরিজন প্রতিবেশীদের অবজ্ঞা পেয়েছিলেন, বাড়ি ঘর লুণ্ঠিত হয়েছিল, স্বামী পরিত্যক্তা হয়েছিলেন এবং রোগে সন্তানদের হারিয়েছিলেন। তারপরেও এই নিঃস্ব নারীটি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তার এই বাঁচার লড়াইয়ে তিনি একা শুধু বাঁচেননি। নিজের বাড়িতে অনাথদের জন্য আশ্রম খুলেছিলেন। মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে নিজের বই বিক্রি করে নিজে চলেছিলেন এবং অনাথদের মুখে অন্ন তুলে দিয়েছিলেন। এমন নজীর আর দ্বিতীয়টি নেই।
সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী বলেন, আজ আমরা সমাজে যারা ভাল মানুষ হয়ে আছি তাদের মুখ লজ্জায় ঢেকে যাওয়া উচিত। শুধু নিজের জন্য ভাবা বা ভাল থাকা এবং আরো বেশি ভাল থাকার জন্য নানা রকম জোচ্ছুরি করছি তাদের বিরুদ্ধে রমা চৌধুরী একটি সুতীব্র প্রতিবাদ। তিনি মুক্তিযুদ্ধে সর্বস্ব হারিয়েছিলেন এবং বীরাঙ্গনার তিলক কপালে জুটেছিল। কিন্তু তিনি তাঁর এই ত্যাগের কোন প্রতিদান চাননি। মুক্তিযোদ্ধা ভাতার জন্য কামড়া-কামড়ি করেননি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক নাট্যজন সাইফুল আলম বাবু বলেন, রমা চৌধুরী চলে গেছেন ঠিকই কিন্তু তিনি এমন কিছু রেখে গেছেন যা দিয়ে সততা, শুদ্ধতা এবং মানবিকতার সুকৃতিগুলোকে উপলব্ধি করা যায়। বিলাস-লোভ-লালসা মুক্ত বিশুদ্ধ সমাজ নির্মাণে মমতাময়ী রমা চৌধুরীর জীবন ও কর্ম সকলের জন্য পাথেয় হয়ে থাকবে।
সভায় সভাপত্বি করেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট চট্টগ্রাম জেলার সহ-সভাপতি ও চসিক কাউন্সিলর আলহাজ্ব এইচ.এম. সোহেল।
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত শোকসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা শিশু একাডেমীর পরিচালক নার্গিস সুলতানা, ছড়াকার সংসদের সভাপতি আ.ফ.ম মোদাচ্ছের আলী, নগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুমন দেবনাথ, কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এম.এ. মান্নান শিমুল, নগর ছাত্রলীগের সদস্য জালাল আহমেদ রানা, সংস্কৃতিকর্মী আরিফুর রহমান প্রমুখ।
শোকসভার শুরুতে মুক্তিযোদ্ধা ও শুদ্ধাচারী লেখক রমা চৌধুরী’র আত্মার সদ্গতির কামনা করে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়।