ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

চিকিৎসার জন্য কেন ভারতমূখী বাংলাদেশের রোগীরা?

.

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

.

কামরুল ইসলাম দুলু, ভারতের ভেলুর থেকেঃ

ভারতে কেন বাড়ছে বাংলাদেশী রোগীর সংখ্যা? অনেকের মতে, বিশ্বাস, ব্যবহার আর আচরণ-এ তিন গুণ বাংলাদেশি রোগীদের টেনে নেয় বিদেশে। আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার যে করুণ অবস্থা তা ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে গেলেই অনুমান করা যায়। একসময় খুব বড়লোক না হলে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতেন না। এখন দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশের অনেক গরীব মানুষ ভারতে যাচ্ছে চিকিৎসার জন্য। এর একমাত্র কারন আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর মানুষের আস্থা নেই। আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোতে প্রতিনিয়ত ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা যাচ্ছে।

এছাড়া রোগীর সাথে ডাক্তারের দূর্ব্যহার, নিয়মের চেয়ে ডবল ফি, সময় নিয়ে রোগী না দেখা, এক্সেরের বিভিন্ন রির্পোট ভুলসহ নানাবিধ কারণে আমাদের দেশের চিকিৎসার প্রতি মানুষের আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ভারতের ডাক্তারদের মন-মানসিকতা খুবি উদার। রোগীর প্রতি তাদের দায়িত্ববোধ অত্যন্ত পখর। রোগীর সাথে তাদের আচরণ দেখে, ব্যবহার দেখে রোগী অনেকটা সুস্থ্যতাবোধ করেন। খেয়াল করে দেখলাম ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে যেসব রোগী যায় তা বাংলাদেশের। অন্য কোন দেশের মানুষ ভারতে তেমন চিকিৎসা নিতে যায়না।

.

বিদেশি রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে ভারত যা আয় করে, তার বেশিরভাগটাই বাংলাদেশ থেকে যাওয়া রোগীদের কাছ থেকে পাওয়া। সরকারি এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে বিদেশিদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে ৬২ কোটি ৩ লাখ ১৫ হাজার ডলার আয় করেছে ভারত, যার অর্ধেকের বেশি দিয়েছে বাংলাদেশি রোগীরা।

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত অর্থবছরে দেশটি বাংলাদেশি রোগীদের কাছ থেকে ৩৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার আয় করেছে। ওই সময়ে ভারতের হাসপাতালগুলোতে চার লাখ ৬০ হাজার বিদেশি রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন, যাদের মধ্যে এক লাখ ৬৫ হাজার বাংলাদেশি। অর্থাৎ ওই সময়ে চিকিৎসা নেওয়া বিদেশিদের প্রতি তিন জনের মধ্যে একজন ছিলেন বাংলাদেশি।

এছাড়া ২০১৫ সালে যেখানে ১ লাখ ২০ হাজার ৩৮৮ জন বাংলাদেশি চিকিৎসা নিতে ভারতে এসেছিলেন সেখানে ২০১৭ সালে সেই সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ২,২১,৭৫১ জন। অর্থাৎ গত তিন বছরে মেডিকেল ভিসা নিয়ে আসা বাংলাদেশি পর্যটকদের সংখ্যাটা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

.

গত অর্থবছরে ৫৮ হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে মেডিকেল ভিসা দিয়েছিল ভারত। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে মেডিকেল ছাড়া অন্য ভিসায় ভারতে গিয়েও চিকিৎসা নিয়েছেন অনেকে। চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া এতটাই স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে যে, রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও মেডিকেল ভিসার সুযোগ দিয়েছে দেশটি।

ভারতের ভেলোর এ ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠাত ক্রিশ্চিয়ান হাসপাতার সিএমসিতে গিয়ে যেটা উপলদ্ধি করলাম বাংলাদেশের রোগী ছাড়া আর কোন দেশের রোগী চোখে পড়েনি। তার আরো একটি প্রমাণ পেলাম, ভেলোর এর তামিল নাডুর যে জায়গায় হাসপাতাল সেই বিশাল এলাকার দোকানপাট, মার্কেটগুলোতে হিন্দি ও তামিল নাডুর ভাষার পর সাইনবোর্ডে বাংলাতে লিখা। হাসপাতালেও তাদের রাজ্যের নিজস্ব ভাষার পাশাপাশি বাংলাতে লিখা।

এটাই প্রমাণ করে শুধুমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া অন্যদেশ থেকে ভারতে চিকিৎসার জন্য কেউ যায়না। নিজে ভেলোর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যখন ডাক্তারের সাথে কথা বলছি, ডাক্তার যখন একের পর এক প্রশ্ন করছেন তখন নিজকে ছোট মনে হচ্ছিল। নিজের দেশে সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে তাদের কাছে আসা, ভুল চিকিৎসার কারণে তাদের কাছে আসা একথাগুলো বলতে কেমন যেন নিজের দেশকে অন্য দেশের কাছে ছোট করে চলেছি !

.

ভারতের ডাক্তার আর আমাদের দেশের ডাক্তারদের মধ্যে কেন এত তপাৎ ? চিকিৎসা করতে আসা বেশ কজন রোগী জানান, চিকিৎসার নামে এইদেশে (ভেলোরে) কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়নি। ভুল চিকিৎসার ঘটনাও কম। একই ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা একাধিকবার করানো, রোগীকে সময় কম দেয়া, বাড়তি আয়ের জন্য রোগীকে অতিরিক্ত সময় কেবিন বা বিছানায় রাখার প্রবণতা নেই এখানে। ভুল চিকিৎসার জন্য মাশুল গুনতে হয় দেশগুলোর ডাক্তারদের। অভিযুক্ত ডাক্তারের লাইসেন্স বাতিল বা ফৌজদারি মামলা হয়। কঠোর আইনের মধ্যেই থাকতে হয় ডাক্তারদের। কিন্তু

বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। ভুল চিকিৎসার জন্য রোগীর মৃত্যু ঘটলেও স্বজনরা অসহায়। ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করা যায় না। শুধুমাত্র চিকিৎসার বাবদ প্রতিদিন আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ টাকা চলে যাচ্ছে ভারতে । যদি আমাদের দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো হতো তাহলে এত টাকা নিজের দেশেই থাকতো।

ভারতে কেন চিকিৎসা-এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা থেকে আসা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বলেন, সবচেয়ে বড় ব্যাপার চিকিৎসক ও নার্সদের সুন্দর আচরণ। এ আচরণ ও ব্যবহারের কারণে রোগীরা ৩০ শতাংশ সুস্থ হয়ে যান। তিনি বলেন, একই মানের চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে এ দেশে (ভারতে) পরীক্ষার সঠিক ফল পাওয়া যায়। দেশে একেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একই রোগীর পরীক্ষার একেক ধরনের ফল মিলে। থাকে টাকার ব্যবধানও।

তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার সাথে ভারতে চিকিৎসার ব্যাপক ফারাক। নিজের কাছে লজ্জা লাগে যখন ডাক্তারের কাছে পরিচয় দেয় বাংলাদেশ থেকে এসেছি। মনে হয় তখন আমার দেশকে ছোট করছি আমার দেশের ডাক্তারদের ছোট করছি। জানিনা তারা কি মনে করেন, যখন বলি আমাদের দেশে ভুল চিকিৎসার কারণে এখানে আসতে হয়েছে। সবদিক দিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি কিন্তু চিকিৎসার দিক দিয়ে কেন উন্নতি করতে পারছি না ? আমাদের দেশ থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা ভারতে চলে যাচ্ছে শুধু চিকিৎসার ক্ষেত্রে। কবে পাবো আমরা মান সন্মত চিকিৎসা, কবে দেশের মানুষ অন্তত চিকিৎসার জন্য ভারতমুখী হতে হবে না। এজন্য প্রয়োজন সরকারী উদ্যেগ আর ডাক্তারদের মন মানসিকাতার আমুল পরিবর্তন আর

যতদিন মুনাফার উদগ্র লালসা না কমবে, যতদিন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মাঝে মানবিকতার সৃষ্টি না হবে, ততদিন খাঁটি বাংলাদেশি হওয়া সত্ত্বেও মানুষ ভারতে চিকিৎসার জন্য যেতে বাধ্য হবে।

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print