চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর উভয়-পাড় ঘেষে স্থাপিত (সরকারি ও বে-সরকারি) ২ হাজার ১৮১টি অবৈধ স্থাপনা সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রায় পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে দুটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় স্থাপনা অপসারণ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে বলা হয়েছে। নোটিশ প্রদানের ৯০ দিনের মধ্যে এসকল স্থাপনা সরাতে বলা হয়েছে।
তবে আদালত নৌবাহিনীর জেটিসহ সরকারি ছয়টি স্থাপনা আপাতত অপসারণের আওতামুক্ত থাকবে। এসব প্রতিষ্ঠান পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র নিতে বলা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় কার্য ও জনস্বার্থ সংক্রান্ত বিষয়ে এসব প্রতিষ্ঠান ব্যবহৃত হচ্ছে কি না তা দেখবে।
আদালত রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের নদীর তীরে কোনো ধরনের অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। একই সঙ্গে কর্নফুলী নদীর তীরে সরকারি-বেসরকারি সকল স্থাপনা সরাতে হবে। নোটিশ ৯০ দিনের মধ্যে স্থাপনা না সরালে চট্টগ্রামের সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদেরকে তা সরানোর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
পূর্বে জারি করা এ সংক্রান্ত রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি কাশেফা হোসেনের হাইকোর্ট গঠিত এই আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক।
গত সপ্তাহে এ মামলায় রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে রায়ের জন্য মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) দিন ধার্য্য করেছিলেন হাইকোর্ট।
মামলার বিবরণীতে জানা যায়, কর্ণফুলী নদী সংরক্ষণের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেন হিউম্যান রাইটস এন্ড পীস ফর বাংলাদেশের পক্ষে মনজিল মোরসেদ। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ১৮ জুলাই হাইকোর্ট কর্ণফুলী নদী সংরক্ষণ এবং নদী দখল করে গড়ে উঠা স্থাপনা অপসারনের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।
এছাড়া নদীর তীর দখল করে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনার তালিকা আদালতে দাখিল করতে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়। হাইকোর্টের নির্দেশের পর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ২ হাজার ১৮৭টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে। ওই কমিটি কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা ও স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ অব্যাহত রাখা এবং দূষণ রোধকল্পে নদীর ডান তীরবর্তী এলাকার সীমানা চিহ্নিত করে।
এছাড়া কমিটি বি.এস এবং আর.এস জরিপের ম্যাপ অনুযায়ী কর্ণফুলী নদীর অবস্থান, নদীর অংশে ভরাটকৃত জমি ও দখলদারদের অবস্থান পৃথক রং দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
গত বছরের ৮ নভেম্বর জেলা প্রশাসনের ওই তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। এরপর মঙ্গলবার সেই তালিকা থেকে ৬টি স্থাপনা বাদে বাকি স্থাপনা সমূহ সরিয়ে নেওয়ার এ রায় দেন হাইকোর্ট।