
চট্টগ্রাম ফটিকছড়িতে প্রার্থী মনোনয়নে আওয়ামীলীগের পর এবার গৃহবিবাদ শুরু হয়েছে ঐক্য ফ্রন্টের অন্যতম প্রধানদল বিএনপিতে। তৃনমুলের নেতাকর্মীদের মতামতকে উপেক্ষা করে নির্বাচনে অনভিজ্ঞ ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়ায় বিপত্তি দেখা দিয়েছে। ফলে নির্বাচনে মাঠে দলের মনোনিত প্রার্থীর পক্ষে কতটা সক্রিয় হবে
নেতাকর্মীরা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এই কদিনে দেখা যায়নি উল্লেখযোগ্য কোন নেতাকে। বিএনপি’র একাদিক সুত্র জানায়, সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশি ছিল বেশ কয়েকজন। দলীয় মনোনয়ন বোর্ড যে তিনজনকে চিঠি দেন তারা হলেন পেশাজিবী ও ড্যাবের নেতা ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী, ফটিকছড়ি বিএনপির আহবায়ক আলহাজ্ব ছালাহ উদ্দিন ও কর্ণেল (অব) আজিম উল্লাহ বাহার চৌধুরী।
স্থানীয় তৃনমুল বিএনপি নেতাকর্মীদের আশা প্রত্যাশা ছিল প্রথম দু’জনের কোন একজনকে চুড়ান্ত মনোনয়ন দিবেন দলীয় মনোনয়ন বোর্ড। কিন্তু তাদের সে ধারনাকে পাল্টে দিয়ে চুড়ান্ত মনোনয়ন পেয়ে গেলেন কর্ণেল আজিম উল্লাহ বাহার।
এতে করে দলটির উপজেলা বিভিন্ন এলাকার তৃনমুল নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশার পাশাপাশি ক্ষোভ বিরাজ করছে। এমনিতেই অনেক আগ থেকেই ফটিকছড়ি বিএনপিতে দুটি পক্ষ সক্রিয়।
পুরনো বিএনপি নেতারা অভিযোগ করে জানান, ক্ষুদ্র একটি অংশ দলের মনোনীত প্রার্থী কর্ণেল আজিম উল্লাহ বাহার এর পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা প্রশংসামুলক প্রচারনা চালাচ্ছে। অপর দিকে বৃহত্তর একটি তাঁর মনোনয়নে ক্ষুদ্ধ হয়ে দলের হাই কমান্ডের প্রতি বিষোধগার মূলক নানা মন্তব্য করছে।
নিজের পছন্দের প্রার্থীকে মনোনয়ন না দেয়ায় অনেক নেতাকর্মীকে নিরবে কাঁদতেও দেখা গেছে। ফটিকছড়ি বিএনপি’র বেশ কয়েকজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানান, বর্তমান সময়ে নির্বাচনে ফটিকছড়িতে মহাজোটের প্রার্থী নজিবুল বশর এবং আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলামের সাথে তাঁদের দলের প্রার্থী কতটুকু নড়তে পারবে তা প্রশ্নবিদ্ধ। ফটিকছড়ি পৌরসভা বিএনপি নেতা সরোয়ার মফিজ অভিযোগ করে বলেন, দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতাহীন নেতাদের মনোনয়ন দিলে কাংক্ষিত উন্নয়ন ও দল অগ্রগামী হয় না। নির্বাচনের ফলাফলও অন্তসার শূন্য হয় ।
বিএনপি নেতা মো. এমরান বলেন কর্ণেল বাহারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া বিগত সময়ে দলের নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন না তিনি। উড়ে এসে জুড়ে বসে মনোনয়ন পাওয়া যায় নেতাকর্মীদের সমর্থন পাওয়া যায়না।
উপজেলা বিএনপির একাংশের আহ্বায়ক মো. সরোয়ার আলমগীর বলেন, গত উপজেলা নির্বাচনে বর্তমান প্রার্থী কর্ণেল বাহার সহ অনেকের বিরোধিতার কারণে তিনি নির্বাচনে হেরেছেন। তবুও দলের নীতি নির্ধারনী মহল যেহেতু তাঁকে প্রার্থী দিয়েছে দলের এই ক্রান্তিকালে দেশ মাতার মুক্তির সংগ্রাম তরান্বিত করতে কর্নেল বাহারের পক্ষে কাজ করবেন তিনি।
জেলা বিএনপি নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশি আলহাজ্ব ছালাহ উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন থেকে সক্রিয় রাজনীতি করছি। রাজনীতি করতে গিয়ে মামলা হামলার শিকার হয়েছেন তিনি। দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাঁকে মনোনয়ন দেবেন বলে আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেননি। একজন পেশাদার রাজনীতিবিদের জীবনে এর চেয়ে হতাশা এবং দুঃখের আর কি থাকতে পারে। নির্বাচনে কাজ করবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু দলীয় প্রতীক মাঠে তো যেতেই হবে।
অপর মনোনয়ন প্রত্যাশি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক সিভিল সার্জন খুরশিদ জামিল চৌধুরী বলেন, দলের হাই কমান্ড যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা মেনে নিতে হবে।
এ ব্যাপারে কর্ণেল আজিম উল্লাহ বাহার সাংবাদিকদের বলেন, দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে কিছুটা ক্ষোভ থাকবে। তবে সিনিয়র সকল নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা হয়েছে। আশাকরি সব ভেদাভেদ ভুলে দেশ মাতার মুক্তি আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে সবাই কাজ করবে।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী জয়ী হন (যুদ্ধাপরাধের দায়ে পরে ফাঁসির দন্ডে দন্ডিত)।