
চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকার পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। প্রায় একঘন্টা ধরে পুলিশের সাথে পোশাক শ্রমিকদের তুলুম সংঘর্ষের পর রেয়াজুদ্দিন বাজার নিউ মার্কেটসহ আশে পাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে অন্তত শতাধিক গার্মেন্টস শ্রমিককে আটক করেছে পুলিশ। এর আগে সংর্ঘষে কোতোয়ালী জোনের এসি ও ওসিসহ ১৫ পুলিশ আহত হয়। তবে সংর্ঘষে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছে বলে জানাগেছে।
বুধবার সকালে সাড়ে দশটায় চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট এলাকায় এশিয়ান এ্যাপারেল নামের একটি পোষাক কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।

মঙ্গলবার উক্ত কারখানার মনজু নামের এক শ্রমিককে মারধরের অভিযোগে সকালে ব্যস্ততম নিউ মার্কেট এলাকায় অবরোধ সৃস্টি করে ঐ কাখানার সাধারণ শ্রমিকরা। এসময় নগরীর নিউমার্কেট এলাকার আশপাশের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সকাল ১০ টা থেকে তারা রাস্তায় অবস্থান নিলেও বেলা ১১ টার দিকে পুলিশ তাদেরকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে চাইলে দেখা দেয় বিরোধ। এতে শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে পুলিশের বাধা অতিক্রম করে রাস্তায় গাড়ী ভাংচুর শুরু করে। বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকদেরকে রাস্তা থেকে সরাতে ব্যর্থ হয়ে পুলিশ তাদেরকে লার্টিচার্জ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়।
এসময় শ্রমিকরাও লাটিসোটা ইট পাটকেল নিয়ে পুলিশের উপর চড়াও হয়। একপর্যায়ে শ্রমিকরা পুলিশকে বেপরোয়া লাটিপেটা ও ইটপাটকেল মারতে থাকে। এ সময় বেশ কিছু গাড়ীও ভাংচুর করা হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে একপর্যায়ে পুলিশ পিছু হটে। শ্রমিকদেও ধাওয়া খেয়ে পুলিশ নতুন রেলওয়ে স্টেশনের ভিতওে গিয়ে আশ্রয় নেয়।

এসময় শ্রমিকদের নিক্ষিপ্ত ইটের আঘাতে কোতোয়ালী জোনের এসি রহিম, ওসি জসিম সহ অন্তত পনের নারী ও পুরুষ পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ছাড়া পোশাক শ্রমিকও আহত হয় কমপক্ষে ২৫ জন। এক ঘন্টা উভয় পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার পর দুপুর ১২ টায় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছুড়লে বিক্ষুদ্ধ পোশাক শ্রমিকরা পিছু হটে গার্মেন্টস কারখানার ভিতরে ঢুকে যায়।
এতে এক ঘন্টা ধরে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়ে যায়। পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস, ফাঁকা গুলি, রাবার বুলেট ব্যবহার করে দুপুর ১২টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।

তাছলিমা নামের এক পোশাক শ্রমিক জানান, মালিকপক্ষ বেশ কিছুদিন ধওে তাদের উপর নানা ধরনের অত্যাচার নির্যাতন করেছে। মালিক গত ঈদেও পর হঠাৎ এ কারখানাটি বন্ধ করে দিয়ে সকল শ্রমিককে কাট্টলী এলাকায় নতুন একটি কারখানায় নিয়ে যায়। সেখানে সব সময় তাদেও উপর নানা ধরনের নির্যাতন করে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার স্থানীয় ভাড়াটে মাস্তান দিয়ে মনজুসহ আরো বেশ কয়েকজন নারী এবং পুরুষ শ্রমিককে মারধর করা হয়। মনজু বর্তানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। এর প্রতিবাদে আজকে তারা পূনরায় আগের কারখানার সামনে এসে অবস্থান নেয়। তারা এ ঘটনার বিচার দাবী করে।
কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন জানান, শ্রমিকরা পুলিশের উপর হামলা চালায় এবং ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে কোতয়ালী থানার এসি ও ওসি সহ পনের পুলিশ সদস্য আহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে প্রায় একশ শ্রমিককে আটক করা হয়েছে।

কারখানা মালিক আবদুচ ছালাম জানিয়েছেন, একদিন আগে শ্রমিকরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। এঘটনা নিস্পত্তির জন্য উদ্যোগ নেয়া হলেও শ্রমিকরা রাস্তায় অবস্থান নেয়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে অবরোধ তুলে দেয়ার চেষ্টা করলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সৃস্টি হয়।
নগর পুলিশের কোতোয়ালী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার কামরুল ইসলাম বলেন, মূলত কারখানাটির শ্রমিকদের মধ্যে কর্তৃত্ব নিয়ে দু’গ্রুপে কয়েকদিন আগে মারামারির ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে আমরা মালিক পক্ষসহ বৈঠক করি। কিন্তু শ্রমিকদের অসহযোগিতার কারণে সমঝোতায় পৌছানো সম্ভব হয়নি। আজ বুধবার অসমাপ্ত বৈঠক হওয়া কথা ছিল । কিন্তু তার আগেই শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
এদিকে কারখানাটির গতমাসের বেতন এখনো পরিশোধ করা হয়নি বলে শ্রমিকরা জানায়। তবে ঘটনা চলাকালীন এবং ঘটনার পরেও মালিক পক্ষের কোন লোক সেখানে আসেনি।