
দুবাইগামী বাংলাদেশ বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টায় যে পিস্তল দিয়ে ছিনতাইকারী যাত্রী ও ক্রুদের জিম্মি করেছিল সেটি আসল পিস্তল ছিল না বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
পিস্তলটি ছিল খেলনার পিস্তল।! অথচ বিমানটি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে জরুরী অবতরণের পর পরই হন্তদন্ত হয়ে বিমান থেকে বেরিয়ে আসা যাত্রীগণ চিৎকার করে বলেছিলেন বিমানে ছিনতাইকারী দুই রাউন্ড গুলি করেছিল।
জিম্মি ঘটনার অবসানের পর রবিবার রাতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মাহবুবার রহমান বলেন, যৌথ বাহিনীর হামলায় নিহত ছিনতাইকারীর কাছে যে অস্ত্র পাওয়া গেছে সেটি আসল পিস্তল নয়। এটি একটি খেলনার পিস্তল।
চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুই ঘণ্টার জিম্মি সঙ্কটের অবসানের পর রোববার রাতে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার একথা জানান।

এর আগে বেলা ৩টার পর ১৪৮ আরোহী নিয়ে ঢাকার হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে বিজি-১৪৭ ফ্লাইটটি। উড়োজাহাজটি মাঝ আকাশে গিয়ে সংকটে পড়ে।
বিকেল পৌনে ৬টার দিকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে উড়োজাহাজটি। এসময় ছিনতাইকারী যুবক এবং দুই ক্রু ছাড়া সবাই উড়োজাহাজ থেকে বের হয়ে আসেন।
এর পরপরই নৌবাহিনী সেনা বাহিনী র্যাব পুলিশসহ যৌথ বাহিনী পুরো বিমান বন্দর এবং ছিনতাইকৃত বিমানটি ঘিরে ফেলে। পরে বিমানটিতে কমান্ডো স্টাইলে অভিযান চালিয়ে জিম্মি ঘটনার অবসান ঘটিয়ে আহতবস্থায় ছিনতাইকারী যুবককে আটক করে।
এদিকে অভিযান শেষে রবিবার রাত ৯টার দিকে এক ব্রিফিংয়ে এ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এবং এরিয়া কমান্ডার (চট্টগ্রাম) মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান বলেন, ‘উড়োজাহাজটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করা হয়েছিল। ২৫ থেকে ২৬ বছর বয়সী এক যুবক নিজেকে মাহাদী বলে পরিচয় দিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলে-প্রধানমন্ত্রী ও তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল।কিন্তু আমরা তাকে আত্মসমর্পণ করতে বলেছি।কিন্তু সে এই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে আক্রমণাত্মক হওয়ার চেষ্টা করলে তার ওপর স্বাভাবিক অ্যাকশন যেটা সেটাই হয়েছে। আমাদের সাথে গোলাগুলিতে ছিনতাইকারী প্রথমে আহত এবং পরবর্তীতে নিহত হয়।’
মতিউর রহমান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তার কাছে একটি পিস্তল ছিল। এক পর্যায়ে আমরা কমান্ড অভিযান শুরু করি। সে-ও তখন গুলি করে। গোলাগুলিতে আহত হওয়ার পর তার মৃত্যু হয়েছে।
উড়োজাহাজটিতে ১৪৮ আরোহী ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, কোনও যাত্রী আহত হননি। ছিনতাইকারী কাউকে ক্ষতি করেনি। কি উদ্দেশে সে উড়োজাহাজটি ছিনাইয়ের চেষ্টা করেছিল তা জানা যায়নি।
এক প্রশ্নের উত্তরে মতিউর রহমান বলেন, পাইলট আমাদের প্রথম জানান ছিনতাইকারী বিদেশি। তবে তার সঙ্গে কথা বলে পরে তাকে বাংলাদেশি মনে হয়েছে। তবে তার বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানা যায়নি। বিমানবন্দর স্বাভাবিক হয়েছে। যতদ্রুত সম্ভব উড়োজাহাজাজ চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে বিমানে থাকা একজন যাত্রী ওসমান গণি সাংবাদিকদের বলেছেন, “ঢাকা থেকে বিমানটি রওনা হওয়ার একটু পরেই একজন যাত্রী ককপিটের দিকে যায়। এরপর আমরা কিছু গুলির শব্দ শুনতে পাই। তখন আমরা শুধু আল্লাহ আল্লাহ করছিলাম।”
বিমানটি চট্টগ্রামে অবতরণের ফাঁকে বিমানের পাইলট ওই ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ অব্যাহত রাখেন যাতে সে কারো ক্ষতি না করে।
কর্মকর্তারা বলছেন, বিমানটি ছিনতাই করলেও তিনি সেটিকে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেননি। তার দাবি ছিল, তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলতে চান।
ওই বিমানটির একজন যাত্রী, বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিন খান বাদল বলেছেন, ”বিমানে একজন যাত্রী অস্ত্র নিয়ে বিমানটি হাইজ্যাক করার চেষ্টা করেছিল। সে বাঙ্গালি। সে গুলী করেছে তবে সব যাত্রীকে নিরাপদে নামিয়ে আনা হয়েছে। পাইলট আমার কাছে এসেছিল, সে বলেছে হাইজ্যাকার একজন, সে গুলি করেছে। পাইলট তাকে পারসুয়েড করার চেষ্টা করেছে। হাইজ্যাকার বলেছে, সে শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলতে চায়।”