
চট্টগ্রামে থানায় ধরে নিয়ে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ১৫ লাখ টাকা আদায় করার অভিযোগে সিএমপির পতেঙ্গা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (বর্তমান পাঁচলাইশ থানার ওসি) আবুল কাসেম ভূঁইয়া ও ৫ পুলিশসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির ধর্মবিষয়ক সাবেক সহ-সম্পাদক ও ব্যবসায়ী মো. নুরুল আবছার।
আজ সোমবার সকালে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা ও বিশেষ জজ মোহাম্মদ আকবর হোসেন মৃধার আদালতে এ মামলা দায়ের করা হয়।
বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ মোমিনুর রহমান সোমবার এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে দুর্নিতী দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রামের পরিচালককে ঘটনার বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার আসামিরা হলেন, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের পতেঙ্গা থানার সাবেক ওসি আবুল কাসেম ভূঁইয়া, এসআই প্রণয় প্রকাশ, এসআই (নিরস্ত্র) আবদুল মোমিন, এএসআই তরুণ কান্তি শর্মা, এএসআই কামরুজ্জামান ও এএসআই মিহির। আর তিন মাদক বিক্রেতা হলেন, ইলিয়াছ ওরফে গাভী ইলিয়াছ, মো, জসিম ও মো. নুরুল হুদা।
মামলার অভিযোগে নুরুল আবছার উল্লেখ্য করেন,গত বছরের ১ জুন বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে মোবাইলে ফোন করে পতেঙ্গা থানার এসআই প্রণয় প্রকাশ নুরুল আবছারের অবস্থান জানতে চায় এবং বাসা থেকে রাস্তায় এসে দেখা করতে বলেন।
১৫ মিনিট পরই নুরুল আবছার এলে স্থানীয় একটি বেকারিতে গিয়ে দুইজনে নাস্তা করেন। এ নাস্তা করার মধ্যেই সেখানে হাজির হন থানার এএসআই তরুণ কান্তি শর্মা, এসআই আবদুল মোমিন, এএসআই কামরুজ্জামান ও এএসআই মিহির। তারাও সেখানে নাস্তা করেন।
এসময় তারা নুরুল আবছারকে থানায় গিয়ে ওসি আবুল কাসেমের সাথে দেখা করতে বলেন। এরপর এসআই আবদুল মোমিন, এএসআই তরুণ কান্তি শর্মা, কামরুজ্জামান ও মিহির নুরুল আবছারকে সঙ্গে করেই থানায় নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই নুরুল আবছারের কাছ থেকে এএসআই কামরুজ্জামান মোবাইল, গাড়ির চাবি ও টাকা পয়সা নিয়ে নেন।
পরে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করে তাকে একটি কক্ষে আটকে রাখেন।
বাদী নুরুল আবছার বলেন- পরের দিন দুপুরে এসআই আবদুল মোমিন ও এসএসআই মিহির সেই কক্ষে এসে আমাকে বলেন, ‘তুই ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক ব্যবসা করিস। জীবিত থাকতে হলে ৩০ লাখ টাকা দিবি। টাকা দিবি না ৮৮ ধারায় চালান দিবো আর না হয় ইয়াবা দিয়ে ক্রসফায়ারে দিবো।’
এর পর অন্যান্য কর্মকর্তারাও ৩০ লাখ টাকার জন্য আমাকে মানষিকভাবে চাপ দিতে থাকে। এবং ভয়ভীতি দেখায়।
অভিযোগে নুরুল আবছার আরো উল্লেখ করেন, ওই সময় কোনো উপায় না দেখে তিনি ফুফাতো ভাইয়ের মাধ্যমে ১৫ লাখ টাকা আনান এবং এসআই আবদুল মোমিন ও এএসআই কামরুজ্জামান সে টাকা গ্রহণ করেন।
এর পরই এসআই প্রণয় প্রকাশ ও এসআই আবদুল মোমিন ৩০ লাখ টাকার অবশিষ্ট ১৫ লাখ দিতে বলেন। অন্যথায় ক্রসফায়ারে মৃত্যু অথবা প্রদর্শিত ইয়াবা দিয়ে আদালতে চালান দেয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
আর কোনো টাকা না দেওয়ায় থানার এএসআই তরুণ কান্তি শর্মা বাদী হয়ে গত বছরের ৩ জুন পতেঙ্গা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় ৪০ বোতল বিদেশি মদ নিজ হেফাজতে রেখে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে ২৫ (বি) ধারায় অপরাধ করার কথা অভিযোগ উল্লেখ করা হয়। পরে ওই দিন দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
এরপর প্রায় দুই মাস জেল খেটে ২৯ জুলাই জামিনে কারাগার থেকে বের হন ব্যবসায়ী নুরুল আবছার।
এনিয়ে তিনি দুদকেও লিখিত অভিযোগ করেন বলে মামলায় উল্লেখ করেন।