
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে ঘুষের টাকাসহ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে আটক করেছে দুদক।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার সদরের নিজ কার্যালয় থেকে মো. আজিমেল কদর নামে উক্ত শিক্ষা কর্মকর্তাকে আটক করেন দুদক কর্মকর্তারা। এসময় তাঁর অফিসের ড্রয়ার থেকে ঘুষের ১০হাজার টাকাও উদ্ধার করা হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম -০১ এর উপ পরিচালক লুৎফুল কবির চন্দন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তাছলিমা আক্তার নামে এক শিক্ষিকার কাছ থেকে বদলিজনিত বিষয়ে ঘুষের টাকা লেনদেন হচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে দুদক টিম সেখানে অভিযান চালায়।

এসময় উক্ত শিক্ষা কর্মকর্তার টেবিলের ড্রয়ার থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। এর আগেও এই শিক্ষিকার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়েছিলেন তিনি। এ ব্যাপারে মামলা প্রস্তুতি চলছে বলে জানান এ দুদক কর্মকর্তা।
ফটিকছড়ি পাইন্দং বেড়াজালি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যলয়ের সহকারী শিক্ষিকা তাছলিমা আক্তার বলেন, দৌলতপুর পূর্ব ফরহাদাবাদ নুরকাজি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলির জন্য আবেদন করেন তিনি। তাঁকে সেখানে বদলি করতে হলে ঘুষ বাবদ ৩০ হাজার টাকা দাবী করেন শিক্ষা কর্মকর্তা আজিমেল কদর। অন্যথায় বদলির আদেশ দেয়া হবেনা বলে জানান। বার বার অনুরোধ করার পরেও গত ২০ মার্চ ৫ হাজার টাকা দেন তাছলিমা। কিন্তু তাতেও বদলির আদেশ দেননি শিক্ষা কর্মকর্তা। উল্টো বাকী টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন।
তাছলিমা বলেন উপায়ন্তর না দেখে আজকে আরো ১০ হাজার টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবে বিষয়টি তিনি আগ থেকেই দুদককে অবহিত করে রাখেন। বেলা ১টার সময় ১০ হাজার টাকা লেনদেন করতে গেলে দুদক টিম হাতেনাতে টাকাসহ আটক করে আজিমেল কদরকে।
এদিকে দুদকের হাতে ঘুষের টাকাসহ আটকের পর শিক্ষা কর্মকর্তা আজিমেল কদরের নানা অপকর্ম বেরিয়ে আসছে। বদলি বাণিজ্য, ডেপুটেশনবাণিজ্যসহ পিটিআই প্রশিক্ষন করতে গেলে এক এক জন শিক্ষককে নিম্মে ১০হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৬০/৭০হাজার টাকা পর্যন্ত তাঁকে দিতে হয়। এছাড়া মৌখিক ডেপুটেশনের কোন সরকারী নিয়ম না থাকলেও তিনি ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত সুবিধা গ্রহনকারী শিক্ষকের নিকট থেকে নিয়ে অপর শিক্ষককে সে স্কুলে ডেপুটেশনের পাঠান। এ ক্ষেত্রে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি বা কোন সদস্যের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজনও মনে করেননা। এসব বদলি, ডেপুটেশন আর পিটিআই বাণিজ্যে সমন্বয়কের ভুমিকায় রয়েছেন উপজেলার বিভিন্ন স্কুলের বেশকয়েকজন শিক্ষক। এদের মধ্যে রোসাংগিরি স্কুলের আজিম উদ্দিন, হাসেম অন্যতম। বিভিন্ন শিক্ষককে এক স্কুল থেকে অন্যস্কুলে বদলি,ডেপুটেশন এবং পিটিআই ট্রেনিংয়ে পাঠাতে এসব শিক্ষকের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনের কাজটি সম্পন্ন করে থাকেন ।
উপজেলা প্রাইমারী শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আজিমেল কদর ফটিকছড়ি শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করার পর থেকে এ উপজেলার প্রাইমারী শিক্ষার বেহাল দশা। স্কুল গুলোতে নিয়মিত পরিদর্শন করা হয়না। শিক্ষকদের ক্ল্যাস্টার ট্রেনিংগুলো নাম মাত্র করা হয়। ক্ল্যাস্টার ট্রেনিংয়ের অর্ধেক টাকা শিক্ষা কর্মকর্তা আজিমেল কদর আর সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা বশির আহমেদ সরকার মিলে হাতিয়ে নেন। সম্প্রতি উপজেলার আন্তুঃস্কুল বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ২১০টি স্কুলের প্রতিটির ৩হাজার টাকা করে লোপাট করে। এখনো স্কুলকে এসব টাকা বুঝিয়ে দেননি বলে জানান শিক্ষকরা। তাছাড়া উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়টি ঘুষ দুর্নীতির আখড়া বলেও জানান অনেক শিক্ষক। সরকারী চাকুরি এবং বদলির ভয়ে এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করেননা কোন শিক্ষক।