
‘যে দিন তাঁর পুলিশে চাকরী হলো সে দিন বাবাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে অনেক্ষণ কেঁদেছিলো সে। বাবাকে বলেছিল, তোমার কষ্টের দিন শেষ বাবা। এখন আমিই টানবো সংসারের হাল। তোমাকে আর মানুষের ক্ষেতে হাল টানতে হবে না কখনো!’ কথা গুলো বলছিলেন ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত সিএমপি’র কনেস্টেবল পলি আক্তারের বড় ভাই মো.আরিফ।
আরিফ আরও বলেন, ২০১৫ সালে পলির শরীরে প্রথম ধরাপড়ে এই ব্যাধি। মেরুদন্ডের ওপরে ঘাড়ের ঠিক মাঝখানে ব্রেইনের কাছাকাছি টিউমার ধরাপড়ে এম.আর.আই পরীক্ষায়। তখন পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাও হয় তাঁর। হয় অপারেশনও। এর পর তিনবছর ভালোই ছিলো সে।

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আবারও ঘাড় ও মাথায় ব্যাথা অনুভব করলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ভারতের চেন্নাইয়ে। দ্বিতীয়বার অপারেশন বিপদজনক মনে হওয়ায় চেন্নাইয়ের চিকিৎসকরা অপারেশন না করেই ফিরিয়ে দেন দেশে।
এরপর পলিকে ভর্তি করানো হয় ঢাকার আগারগাও এর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সাইন্স হাসপাতালে গত বছর (২০১৮) ৪ নভেম্বর। ১৭ ডিসেম্বর সেখানে দ্বিতীয়বার অপারেশন হয় তাঁর। রাখা হয় আইসিইউতে।
প্রায় ৫ মাস আইসিওতে রাখার পর অর্থের অভাবে গত ৪ এপ্রিল পলিকে নিয়ে আসা হয় চট্টগ্রামে। ভর্তি করানো হয় চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে। জানান আরিফ।
আরিফ বলেন, চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার মাহবুবুর রহমান স্যারের সহযোগিতা ও চেষ্টায় ইতোমধ্যে সিএমপি থেকে আড়াই লাখ টাকা সাহায্য দেয়া হয়েছে পলিকে। এ ছাড়া পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এককালীন দেয়া হয়েছে আরও দেড় লাখ টাকা।
সর্বশেষ গত ২২ এপ্রিল সোমবার পলিকে দেখতে গিয়ে সিএমপি কমিশনার আরও তিন লাখ টাকা সাহায্য দেয়ার কথা দিয়েছেন। উচ্চতর চিকিৎসার জন্য পলিকে ভারতে নিতে সিএমপি কমিশনার এই আর্থিক সাহায্য করবেন বলেও জানান আরিফ।
২০১৫ সাল থেকে বোনের চিকিৎসা করতে গিয়ে সব কিছু বিক্রি করে এখন প্রায় নিঃস্ব পরিবারটি। সংসার চালানোর একমাত্র সম্বল নিজের দোকানটিও বিক্রি করেছেন বোনের চিকিৎসার জন্য। তারপরও কোনো ভাবেই যেন লড়াই করে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না এই মরণ ব্যধির সাথে!
পলিকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করতে আবারও যেতে হবে ভারতে। সেজন্য প্রয়োজন আরও অর্থ! কিন্তু বেঁচবার মতো আর যে কিছু নেই বাকী! বলেন আরিফ।
২০১৭ সালে পারিবারিক ভাবে পলির বিয়ে হয় রয়েল নামে এক ছেলের সাথে। কিন্তু অসুখের কথা জেনে এক বছরের মাথায় পলিকে ফেলে পালায় সে। পরে ডিভোর্স দেয়।
অনেকক্ষণ কথা বলতে বলতে ধরে আসে আরিফের গলা। কিছুটা ভারী হয়ে আসে। মোবাইলের ওই প্রান্তে হয়তো কাঁদছেন তিনি! কাঁদতে কাঁদতেই হয়তো বলছিলেন কথা গুলো।
পলি আক্তার আমাদের চার ভাইবোনের মধ্যে মেঝো সে। তবুও সংসারের প্রতি দায়বদ্ধতা ছিলো তারই বেশি, বলেন আরিফ।
আরিফ জানান, সংসারের প্রতি দায়বোধটা একটু বেশি অনুভব করতো বলেই হয়তো পলিমাটির মতো আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিলো অসহায় কৃষক বাবার সংসারের দায়িত্ব। পড়ালেখার গন্ডি পেরোনোর আগেই পুলিশ কনেস্টেবল পদে পরীক্ষা দিয়েছিল সে।
২০১২ সালে পুলিশে চাকরী হয় তাঁর। রংপুরে প্রশিক্ষণ শেষে কনেস্টবল পদে যোগদেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে (সিএমপি)। সে থেকেই সিএমপিতেই আছে কনেস্টবল হিসেবে। বলেন আরিফ।
সিএমপি কমিশনারের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই জানিয়ে আরিফ আরও বলেন, আমার বোন তো শুধু পুলিশ না একজন মানুষও। মানুষ হিসেবে মানুষের প্রতি যে দায় সে দায় থেকে পলিকে বাঁচাতে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান তিনি। বলেন,আমার বোন বাঁচতে চায়!
আপনাদের সাহায্যই পারে তাকে সুস্থ করে মানুষের সেবা করার সুযোগ দিতে। বলেন, আরিফ।