
রাজশাহী-ঢাকা রুটের রেল ভ্রমনকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রে এখন নতুন চালু হওয়া বিরতিহীন বনলতা এক্সপ্রেস। এই ট্রেনের টিকেট কাটতে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে লম্বা লাইন দিচ্ছেন যাত্রীরা।
এই ট্রেনের টিকেট ছাড়া হয়েছে ২৭ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত। টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার পর থেকে। শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে মোট ২ হাজার ৪০৩ টি টিকেট। এর মধ্যে ৭৬২টি এসি (স্নিগ্ধা) চেয়ার এবং এক হাজার ৬৪১টি শোভন চেয়ার টিকেট।
শুক্রবার ছুটির দিনেও লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট সংগ্রহ করতে দেখা গেছে যাত্রীদের। টিকেট হাতে পেয়ে উচ্ছ্বসিত ভ্রমনকারীরা। রেলওয়ে স্টেশনে কথা হয় ভ্রমনকারী রাইসুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, পরিবার নিয়ে ২৭ এপ্রিল ঢাকাগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেসের যাত্রী হবার কথা ছিলো তার। আগাম ৫টি টিকেটও কেটেছিলেন তিনি।
কিন্তু ছেলে মেয়েরা বনলতায় যেত চায়। ধুমকেতুর টিকেট ফিরিয়ে দিয়ে বনলতার এক্সপ্রেসের টিকেট নিলেন। বনলতার প্রথম বাণিজ্যিক যাত্রায় সাঙ্গি হতে পেরে উচ্ছ্বসিত রাইসুল ইসলাম।
একই অভিব্যক্তি অন্য ভ্রমনকারীদেরও। তবে বনলতা এক্সপ্রেসর সময়সূচি নিয়ে কথা বলেছেন কেউ কেউ। তারা জানিয়েছেন, সকাল ৭টায় ছেড়ে বনলতা এক্সপ্রেসের ঢাকায় পৌঁছানোর কথা বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে। ঘন্টা দুয়েক সময়সূচি এগিয়ে নিলে রাজশাহী থেকে ঢাকায় অফিসগামী লোকজন বিশেষ সুবিধা পেতেন। বিষয়টি রেল কর্তৃপক্ষকে ভেবে দেখার অনুরোধ জানান যাত্রীরা।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিক্রির জন্য প্রতিদিন শোভন চেয়ারের ৭৭৯টি এবং এসি (স্নিগ্ধা) চেয়ারের ১৬০টি টিকেট ছাড়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫০ টাকা খাবার মূল্য যোগ করে শোভন চেয়ার ৫২৫ টাকা এবং এসি (স্নিগ্ধা) চেয়ারের টিকিটের মূল্য ধরা হয়েছে ৮৭৫ টাকা করে।
স্টেশন কর্তৃপক্ষ আরো জানিয়েছে, ২৭ এপ্রিলের এসি (স্নিগ্ধা) চেয়ারের সবগুলো টিকেট বিক্রি হয়েছে। ওই দিনের শোভন চেয়ারের বিক্রি হয়েছে ৪ শতাধিক। ২৮ এপ্রিলের ১৩৩টি এসি (স্নিগ্ধা) এবং ১৬৬ শোভন চেয়ার টিকেট বিক্রি শেষ। ৭০ টি এসি (স্নিগ্ধা) এবং ৮৫টি শোভন চেয়ার টিকেট বিক্রি হয়েছে ২৯ এপ্রিলের।
এছাড়া ৩০ এপ্রিলের ৫৩টি এসি (স্নিগ্ধা) ও ৬৬টি শোভন চেয়ার, ১ মে’র ৮৫টি এসি (স্নিগ্ধা) , ও ১০৫টি শোভন চেয়ার, ২ মে’র ৬৩টি এসি (স্নিগ্ধা) ও ২২৯টি শোভন চেয়ার, ৩ মে’র ৫০টি এসি (স্নিগ্ধা) ও ২২৫টি শোভন চেয়ার, ৪ মে’র ৯২টি এসি (স্নিগ্ধা) ও ২২৯ শোভন চেয়ার এবং ৫ মে’র ৫৬টি এসি (স্নিগ্ধা) এবং ২১৭টি শোভন চেয়ার টিকেট বিক্রি হয়েছে।
এসকল তথ্য নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী রেলস্টেশন ম্যানেজার আবদুল করিম। তিনি বলেন, প্রথম দিনেই টিকিটের জন্য কাউন্টারে ভ্রমনকারীদের ভিড় উপচে পড়েছে। প্রত্যাশা পুরণ হওয়ায় খুশি এই অঞ্চলের মানুষ। রেল আরামদায়ক ও নিরাপদ হওয়াও মানুষ রেলভ্রমনে আগ্রহী হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
স্টেশন ম্যানেজার আরো বলেন, ২৭ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত এই নয় দিনের টিকেট বিক্রি হচ্ছে কাউন্টারে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা এবং বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত রেলওয়ে স্টেশন কাউন্টার থেকে টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন যে কেউ। অন্যান্য আন্তঃনগর ট্রেনের মতই বনলতা এক্সপ্রেসের টিকেট নিতেও লাগছে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) । যাদের এটি নেই, তারা জন্ম নিবন্ধনপত্র দিয়েও টিকিট নিতে পারবেন। টিকেট বিক্রিতে অনিয়ম ঠেকাতে কর্তৃপক্ষ সজাগ রয়েছে বলেও জানান স্টেশন ম্যানেজার।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই বনলতা এক্সপ্রেসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজশাহী-ঢাকা রুটের প্রথম ও একমাত্র বিরতিহীন এই ট্রেনটি রাজশাহী থেকে সকাল ৭টায় ছেড়ে ঢাকা পৌঁছাবে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে। ঢাকা থেকে ছাড়বে বেলা ১টা ১৫ মিনিটে এবং রাজশাহী পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৬টায়। শুক্রবার বাদে নিয়মিত চলাচল করবে ট্রেনটি।