
ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। ঝড়ের আতঙ্কে এক সপ্তাহ ধরে তেমন একটা পর্যটক আসেননি কক্সবাজারে। যেসব পর্যটক আগে থেকে ছিলেন তারাও তড়িঘড়ি কক্সবাজার ছেড়েছেন। তারপরও ঘূর্ণিঝড়ের সময় সাগরের উত্তাল রূপ দেখতে অল্প কিছু সংখ্যক পর্যটক সেখানে রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
পর্যটন মৌসুম ছাড়া এখন সারা বছরই কমবেশি পর্যটক কক্সবাজার আসেন। তবে ঘূর্ণিঝড় ফণী ও রোজা আসন্ন হওয়ায় পর্যটকের সংখ্যা খুবই কম।
পর্যটক শূন্য কক্সবাজারকক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুখিন খান বলেন, ‘কক্সবাজারে এখন পর্যটক নেই বললেই চলে। ঘূর্ণিঝড় ফণী আঘাত হানতে পারে এই আশঙ্কায় কক্সবাজার ছেড়েছেন পর্যটকরা। তবে কিছু পর্যটক আমার হোটেলে বুকিং দিয়েছেন। বুকিং দেওয়া পর্যটকরা জানিয়েছেন, তারা ঘূর্ণিঝড়ের রূপ দেখবেন। এছাড়াও সামনে রমজান তাই পর্যটক আসা কমে যাচ্ছে।’

কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এমএ হাসিব বাদল বলেন, ‘ফণীর কারণে কক্সবাজারে পর্যটক আসেননি। কক্সবাজারের স্থানীয় পর্যটকরাও নেই।’
পর্যটক শূন্য কক্সবাজার কক্সবাজার ট্যুরিস্ট জোনের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, ‘বিকালে কিছু পর্যটকের দেখা মিলেছিল। তবে হাতেগোনা কয়েকজন। ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় আমার প্রতিনিয়ত মাইকিং করে যাচ্ছি, যাতে তারা সাগরে না নামেন। অন্যান্য সময়ের তুলনায় পর্যটক নেই। পর্যটক না থাকলেও আমাদের নিরাপত্তা এবং ফণীর বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে।’
ফণীর কারণে সব নৌযান চলাচল বন্ধকক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আশরাফুল আফসার জানিয়েছেন, ‘যেসব পর্যটক এখনও কক্সবাজারে অবস্থান করছেন তাদের নিরাপদ স্থানে থাকার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। সমুদ্রসৈকত এলাকা ছাড়াও শহরের বিভিন্ন স্থানে লাল পতাকা টানিয়ে সতর্ক সংকেত দেওয়া হয়েছে। মাইকিংও করা হয়েছে। এছাড়া উপকূলবর্তী এলাকাসমূহে ইতোমধ্যে সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থা কমিটিগুলোকে সতর্ক রাখা হয়েছে। পাশাপাশি উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের কথা বিবেচনা করে কক্সবাজার ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনারের সঙ্গে আলাদাভাবে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এজন্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় কক্সবাজার জেলায় ৪৩০টি ইউনিটের আওতায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপির) ৬ হাজার ৪৫০ জন সদস্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও ১ হাজার ৭০০ জন স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রয়েছে। কক্সবাজার রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির আওতায় ১ হাজার ২০০ জন লোক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এরমধ্যে ৭০০ জনকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায়, অন্যদের জেলার বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে। কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসের পক্ষ থেকে ৮৯টি মেডিকেল টিমসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ সামগ্রী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ৬টি ইউনিটের ৩৬ জন কর্মকর্তার সমন্বয়ে ১৩৮ জন লোক ও বিদ্যুৎ বিভাগের ৬টি টিম কাজ করবে বলে সভায় জানানো হয়েছে। পুরো জেলায় ৫৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় শুকনো খাবারসহ সব ধরনের প্রস্তুতির কথা সভায় জানানো হয়। – বাংলা ট্রিবিউন