
চট্টগ্রাম কেন্দ্রিয় কারাগারে আটক যুবলীগের শীর্ষ সন্ত্রাসী অমিত মহুরী মারা গেছেন। বুধবার রাতে কারাগারের সেলের মধ্যে দুই কয়েদির মারামারিতে ইটের আঘাতে গুরুত্বর আহত হয় সন্ত্রাসী আমিত মুহুরী। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউরোসার্জারী বিভাগে ভর্তি করলে রাত একটার দিকে তার মৃত্যু হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন বলেন, শুনেছি কারাগারে মারামারি করে শীর্ষ সন্ত্রাসী আমিত মুহুরী মারা গেছে। তবে আমাদেরকে কারাকর্তৃপক্ষ এখনো লিখিতভাবে জানায় নি।

তিনি বলেন, নগরীর এনায়েত বাজার রানীর দিঘীতে ড্রামভর্তি লাশ উদ্ধারের ঘটনায় খুনের মামলায় কারাগারে ছিলেন অমিত মূহুরী। তার নামে অন্তত ১৪টি মামলা রয়েছে।
এদিকে হাসপাতালে অমিত মহুরী মারা যাবার খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যায় তার কিছু অনুসারী। তারা রাত ২টার দিকে চমেক হাসপাতালের ২৮ নাম্বার ওয়ার্ডের নিউরোসার্জারী বিভাগে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে। পরে সিএমপির দুই শতাধিক পুলিশ সদস্য হাসপাতালে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) পুলিশ ফাাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, রাত সাড়ে ১২ টার দিকে অমিত মুহুরীকে মাথায় ও শরীরের বিভিন্নস্থানে গুরুতর জখম অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে আসে কারারক্ষীরা। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে ২৮ নং ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেন। পরে রাত ১টার দিকে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
জানাগেছে, নিহত অমিত মুহুরী কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপ-অর্থ সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের অনুসারী। একটি খুনের মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে ছিলেন তিনি।
বুধবার রাতে কারাগারের ৩২ নম্বর সেলে কয়েদি রিপন নাথের সাথে অমিত মহুরীর মারামারি হয়। এসময় রিপন নাথ ইট দিয়ে অমিতের মাথা থেতলে দেয়। রাত ১২টার দিকে কারারক্ষিরা অমিতকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তার মাথায় ৩০টি সেলাই দেয়া হয়। পরে রাত ১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
পুলিশ জানায়, ২০১৭ সালের ১৩ আগস্ট নগরীর কোতোয়ালি থানার এনায়েত বাজার রানীর দিঘী থেকে সিমেন্ট ঢালাই করা ড্রামের ভেতর থেকে এক অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে অনুসন্ধানে জানা যায়। নিহত যুবক রাউজান পৌর সভার রেজাউল করীমের পুত্র ইমরানুল করিম ইমন (২৬)।
পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৩০ আগষ্ট শফিক ও শিশির নামে দুই জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের পর ইমন খুনের রহস্য বেরিয়ে আসে। তারা পুলিশকে জানায়, নিজের স্ত্রীর চৈতীর সাথে পরকিয়া প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে এ সন্দেহ থেকে ৮ আগস্ট ২০১৮ ইং রাতে বাল্যবন্ধু ইমনকে নগরীর নন্দনকাননস্থ নিজ বাসায় ডেকে নিয়ে যায় যুবলীগ সন্ত্রাসী অমিত মহুরী। সেখানে রাতভর নির্যাতনের পর ভোরে দিকে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করে লাশ ড্রামে ঢুকিয়ে রাখে। ৩দিন লাশটি বাথরুমে রেখে ১২ আগষ্ট গভীর রাতে পার্শ্ববর্তি রানীর দিঘিতে ড্রামভর্তি লাশ ফেলে দেয়া হয়।
এ ঘটনার পর অমিত মুহুরী পালিয়ে যায়। ২ সেপ্টেম্বর রাতে কুমিল্লার একটি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে পালিয়ে থাকা অমিত মুহুরীকে গ্রেফতার করে চট্টগ্রাম গোয়েন্দা পুলিশ। তখন থেকে কারাগারে আটক ছিল ভয়ন্কর সন্ত্রাসী অমিত মূহুরী।
সিএমপির কোতোয়ালী থানার তৎকালিন ওসি (বর্তমানে আকবর শাহ থানার ওসি) মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন জানিয়েছিলেন, অমিত মুহুরী নগরীর ভয়ঙ্কর খুনিদের একজন। তার নামে রেলওয়ে টেন্ডারকে কেন্দ্র করে ২০০৩ সাথে সিআরবির জোড়াখুনসহ অন্তত একডজন মামলা রয়েছে।
সন্ত্রাসী অমিত মূহুরীর যত খবর-
*হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিল ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী অমিত মুহুরী
*যুবলীগ নেতা বাবরের সেকেন্ড ইন কমান্ড অমিত মুহুরী গ্রেফতার
*বউয়ের সাথে পরকিয়া সন্দেহঃ ক্যাডার অমিত মুহুরীর বাসায় হত্যা করা হয় ইমনকে