
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ মারা গেছেন। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অসুস্থ হয়ে পড়লে গুরুতর অবস্থায় তাকে দিল্লির এইমস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ভারতীয় বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১ টার (৬ আগস্ট) দিকে তার মৃত্যুর খবর প্রকাশ করে। ৬৭ বছর বয়সে বিজেপির এই নেত্রীর জীবন প্রদীপ নিভে গেল।
অসুস্থতার কারণে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেনি সুষমা স্বরাজ। দীর্ঘদিন ধরেই হৃদরোগে ভুগছিলেন তিনি।
সুষমা স্বরাজের মৃত্যুতে টুইটারে শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি লিখেছেন, ‘সুষমা একজন অসাধারণ বক্তা এবং সাংসদ ছিলেন। দলের সবাই তাকে সম্মান করতেন। আদর্শ এবং বিজেপির স্বার্থ নিয়ে কখনোই আপস করেননি তিনি। দলের জন্য তার ভূমিকা অপরিসীম।
অন্যদিকে ভারতের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই নেত্রীর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে টুইট করা হয়। টুইট বার্তায় লেখা হয়েছে, সুষমা স্বরাজের অকাল মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। তার পরিবার ও পরিজনদের প্রতি সমবেদনা।
সুষমা স্বরাজের ব্যক্তি ও কর্মময় জীবন :
ভারতীয় রাজনীতিবিদ এবং সুপ্রিম কোর্টের সাবেক আইনজীবী সুষমা স্বরাজের জন্ম ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে। বাবা হারেদে শর্মা মা শ্রীমতী লক্ষ্মী দেবী। বৈবাহিক জীবনে স্বামী স্বরাজ কুশল ও এক কন্যা সন্তানের জননী সুষমা স্বরাজ।
২৬ মে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সাল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন ভারতীয় জনতা পার্টির সিনিয়র এই নেতা ও সাবেক সভাপতি সুষমা স্বরাজ। তিনি সংসদ সদস্য (লোকসভা) হিসেবে সাতবার এবং আইন পরিষদের (বিধানসভা) সদস্য হিসাবে তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন।
১৯৭৭ সালে ২৫ বছর বয়সে তিনি উত্তর ভারতের হরিয়ানা রাজ্যর মন্ত্রীসভার সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী হয়েছিলেন। ১৩ অক্টোবর ১৯৯৮ সাল থেকে ৩ ডিসেম্বর ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তিনি দিল্লীর ৫ম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
সুষমা স্বরাজ আম্বালা ক্যান্টনমেন্টের সনাতন ধর্ম কলেজে পড়াশোনা করেন এবং সংস্কৃত ও রাজনৈতিক বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে চণ্ডীগড়ের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পড়াশোনা করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি ভারতের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে অনুশীলন শুরু করেন।
সুষমা ২০০৩ থেকে ২০০৪ এর সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত সময়ে অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বের সরকারে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন। এই কার্যকালে তিনি ছয়টি অখিল ভারতীয় আয়ুর্বিজ্ঞান সংস্থা গঠন করেন। এগুলো ভোপাল, ভুবনেশ্বর, যোধপুর, পাটনা, রায়পুর এবং ঋষিকেশে অবস্থিত।
২০০৬ সালে হতে ২০০৯ সালের নির্বাচন পর্যন্ত তিনি রাজ্যসভা সাংসদ ছিলেন। এটা ছিল তার ৫ম বারের মত রাজ্যসভার সদস্য হওয়া। প্রায় চার লাখ ভোটের ব্যবধানে মধ্য প্রদেশের বিদিশা কেন্দ্র থেকে বিজয়ের পর লালকৃষ্ণ আদভানীর উত্তরসূরি রূপে লোকসভায় বিরোধী দলনেত্রী নির্বাচিত হন। এই পদে তিনি ২০১৪ সালের নির্বাচন পর্যন্ত বহাল থাকেন।
২০১৪ সালের ভারতীয় সাধারণ নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে মধ্যপ্রদেশে বিদিশা লোকসভা কেন্দ্র জিতে ২৬ মে ২০১৪ সালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী হন। মার্কিন দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল কর্তৃক সুষমা স্বরাজকে ভারতের ‘সর্বাধিক প্রিয় রাজনীতিবিদ’ বলা হয়। ইন্দিরা গান্ধীর পর তিনি দ্বিতীয় ভারতীয় নারী যিনি এই পদে আসীন হন।