
ভদ্রলোকের নাম মহাশতা মুরাসি। এই বৃদ্ধার নাতি-নাতনিরাও কেউ এখন আর বেঁচে নেই। অথচ মৃত্যু তাকে স্পর্শ করেনি। এক প্রকার আক্ষেপ নিয়েই ১৮১ বছরের বৃদ্ধ বলেন, ‘যমে বোধ হয় আমাকে নিতে ভুলে গিয়েছে।’ শুধু ভারত কিংবা বিশ্বেই নয়, সমগ্র মানবজাতিতে ১৮১ বছরের এই বৃদ্ধই নাকি প্রবীণতম! তার নাম রয়েছে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসেও।
তবে এ খবরের সত্যতা কতটা, তা তর্কযোগ্য। ওয়েবসাইটটির আরো দাবি, মুরাসি নাকি এখন দুঃখ করে বলেন, ‘আমার চোখের সামনে আমার নাতি-নাতনিরা মারা গিয়েছে। কিন্তু আমাকে মৃত্যু গ্রাস করেনি। আমি তাই মরার আশা ছেড়ে দিয়েছি।’
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, `আগামী জীবনে তার কোনো চাওয়া পাওয়া ও আশা নেই।`
তবে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে আন্তর্জাতিক ও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেতে চান তিনি। এর পরও সবকিছু মিলে ভালই আছেন বলে জানান তিনি।
যদিও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, গিনেস রেকর্ডে মুরাসির নাম রয়েছে তবে বিশ্বের মধ্যে না, ভারতীয় ইতিহাসের সবচেয়ে বৃদ্ধ ব্যক্তি হিসেবে। তবে এই তথ্যের যর্থাথতাও নিশ্চিত করা যায়নি।
ভারতের সরকারি সূত্র মতে, ৬ জানুয়ারি ১৮৩৫ সালে বেঙ্গালুরু শহরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি এবং বেঙ্গালুরু থেকে ১৯০৩ সালে বারানসিতে এসে মুচির কাজ শুরু করেন মুরাসি। ১৯৫৭ সালে ১২২ বছর বয়সে এ কাজ থেকে অবসরে যান তিনি।
জন্ম সনদ ও ভারতীয় কার্ড থাকলেও তার নেই কোনো মেডিক্যাল সনদ। সর্বশেষ তিনি ১৯৭১ সালে চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন। এর পর আর কোনো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হননি তিনি। এমনকি ১৯৭১ সালে তিনি যে চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন, তিনিও মারা গেছেন। তাই তার বয়সের রহস্য জট খোলা সম্ভব হয়নি।
যৌবনে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন একজন মুচি হিসেবে। এখন বার্ধক্যে অবসর জীবনযাপন করছেন। মূলত শুয়ে-বসে থাকা এবং একমনে ঈশ্বরকে ডাকা ছাড়া আপাতত অন্য কোনও কাজ তিনি করেন না। সেরকম সামর্থ্যও আর নেই তাঁর। মানুষটির এই সাদামাটা পরিচয়ের মধ্যে আগ্রহব্যঞ্জক কিছুই নেই। মুরাসির বিশেষত্ব অন্যত্র।
মুরাসির দাবি, তাঁর জন্ম তারিখ ৬ জানুয়ারি ১৮৩৫। সেই হিসেবে তাঁর বয়স বর্তমানে ১৮১ বছর।
এমন অদ্ভুত দাবিকে এক নজরে অবাস্তব মনে হতে বাধ্য। সেটা বোধ করি মুরাসি নিজেও জানেন। তাই তাঁর বয়স নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুললেই তিনি তাঁর বয়সের প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেন ব্রিটিশ আমলে দেওয়া সরকারি বার্থ সার্টিফিকেট এবং পরিচয়পত্র। তাতে তাঁর জন্ম তারিখ হিসেবে তাঁর দাবি করা তারিখটিই লিপিবদ্ধ রয়েছে। খবর এবলো।
মুসারিকে প্রশ্ন করলে তিনি শোনাতে শুরু করেন তাঁর জীবনকাহিনি। মুসারির জন্ম ভারতের বেঙ্গালুরুতে। তার পর তিনি চলে আসেন বেনারসে। সেখানে তিনি চর্মকার হিসেবে কাজ শুরু করেন।
১৯০৩ সালে তিনি যে বেনারসে উপস্থিত ছিলেন, তারও প্রমাণ রয়েছে তাঁর কাছে। ১৯৫৭ সালে যখন তিনি নিজের পেশা থেকে অবসর নেন তখন তাঁর বয়স ১২২ বছর।
তাঁর দাবি যদি সত্যি হয়, তাহলে হিসেব মতো তিনিই পৃথিবীর প্রবীণতম মানুষ। কেমন লাগে সেটা ভাবলে?
বৃদ্ধ বিরক্ত হয়ে বলেন, ‘‘ভাল না। আমার নাতির ছেলে-পুলেদের মৃত্যু পর্যন্ত আমাকে দেখতে হয়েছে। সকলে একে একে বিদায় নিয়েছে, কিন্তু আমি বেঁচে রয়েছি। আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয়, মৃত্যু আমাকে ভুলেই গেছে। না হলে কেউ ১৮১ বছর বেঁচে থাকে! কী জানি, আমি হয়তো মরবই না কোনওদিন। মানবসমাজে আমিই হয়তো একমাত্র অমর ব্যক্তি।’’
কিন্তু মুরাসির এই দীর্ঘ আয়ুর রহস্য কী? মুরাসির উত্তর, ‘‘সংযম। ছোটবেলায় দারিদ্র্যের কারণে অনাহারে-অর্ধাহারে থাকতে হত। সেই থেকেই অল্প খাওয়া অভ্যাস হয়ে যায়। তার পরেও প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনওদিন খাইনি।’’ -বলে হাসেন ১৮১ বছরের মানুষটি।
কিন্তু তার পরেও থেকে যায় প্রশ্ন, সত্যিই কি কোনও মানুষের পক্ষে ১৮১ বছর জীবিত থাকা সম্ভব? সেক্ষেত্রে এই খবরের সত্যতা ও উৎস যাচাই করতেই হয়।