ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

১/১১’র ইসি’র গোপন এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারঃ অসম্ভকে সম্ভব

.

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

.

সালেহ বিপ্লবঃ

দীর্ঘ রিপোর্টিং জীবনে একটা ছেদ পড়েছিলো, ২০০৭ সালে, সে এক বিশাল ইতিহাস। জয়েন্ট নিউজ এডিটর করা হলো, শিফটে ডে’জ নিউজ এডিটর হিসেবে কাজ করি। এ শিফট ভোর ৬ থেকে দুপুর ২, বি শিফট দুপুর দুই থেকে রাত ১০, সি শিফট রাত ১০ থেকে ভোর ৬। রিপোর্টিং করার অপশন ছিলো, এনার্জি কাভার করতো না। শরীরের না, ঘাটতি ছিলো মনের এনার্জিতে। সন্তোষ মণ্ডল, মাহবুব মতিন আর আমি, তিন যুগ্ম বার্তা সম্পাদক মাঠের উত্তাপ না পেতে পেতে মুটিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনজন একই সাথে পর্দা থেকে আউট। সেই সময়কার ঘটনা।

সিএনই একদিন ডাকলেন। প্রায় অসম্ভব দুটি কাজের কথা তুললেন। জানালেন, রিপোর্টিং টিম চেষ্টা করেছে, পারেনি। আমি পারবো কি না, জানতে চাইলেন। বললাম, পারবো, ইনশাল্লাহ। দুই কাজের একটি, সে সময়কার প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদার একান্ত সাক্ষাৎকার। একদম একা, যাকে বলে এক্সক্লুসিভ। কাজটা কঠিন, সে সময় খুব কঠিন। এক এগারো অধ্যায়, বাড়তি কথা বলতে চান না কোন শীর্ষব্যক্তি। রাগ হল বসের ওপর, আচমকা আমার উপর নজর কেন দিলেন, তাই রাগ। ভয়ও পেলাম, পারবো তো?

শামসুল হুদা সাহেব অত্যন্ত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন জাঁদরেল আমলা, ফোন করলে ধরেন ঠিকই। শিডিউল চাইলে বলেন, আরজুর সাথে কথা বলেন। আরজু ভাই ইসির জনসংযোগ প্রধান। তার সাথে কথা বললে, একা দেখা করার সুযোগ পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। কেন না, সিইসির দপ্তরের নিচেই সাংবাদিকদের নিয়মিত সমাবেশ। নিয়মিত যারা ইলেকশন কমিশন কাভার করেন, তাদেরকে বাদ দিয়ে কেউ একা একা সিইসির সাক্ষাৎকার নেবে, এটা বেমানান। কাউকে সে সুযোগ দিলে আরজু ভাই বাজে পরিস্থিতিতে পড়ে যাবেন। তাহলে কী করে সিইসির দেখা পাবো, একা?

ভয়টা বাড়তে লাগলো, একটা সময় ভয়ের ছিটেফোঁটাও আর পেলাম না। কিছু একটা করব, এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজটা করে ফেলার লাইন নিয়ে ভাবলাম।

এসব ক্ষেত্রে নিয়ম হলো সাবজেক্টের কাছে বা সামনে চলে যাওয়া। তাই করব। কিন্তু ইসি বিটের রিপোর্টার ক্যামেরা পারসনদের ভিড়কে ফাঁকি দিয়ে সিইসি সাহেবের চেম্বারে ঢোকার কোন পথ নেই। কেউ যদি ক্যামেরা নিয়ে উপরে যায়, বাকিরাও ছুটবে।  এই পরিস্থিতিতে আমরা হুদা সাহেবের একান্ত সাক্ষাৎকার নেবো, প্ল্যান করে ফেললাম। আমার প্রধান সহযোগী সোমা ইসলাম, ইসি বিটের রিপোর্টার তিনি। তার কৌশলী সহযগিতা আমাকে সফল হতে সাহায্য করেছে। সেই কাহিনী বলি।

সোমা যথারীতি যথাসময়ে তার টিম নিয়ে চলে গেলেন ইসিতে। ইসি তখন ছিলো পরিকল্পনা কমিশনের ভেতরে। সিইসি সাহেব অফিসে এসেছেন, সোমা ফোনে জানালেন। এবার আমি হাজির হয়ে গেলাম আগারগাও। একা। আমাকে দেখে ইসি বিটের সাংবাদিকরা স্বাগত জানালেন, অনেক দিন মাঠে দেখা হয় না, সে কথা বললেন। তারপর জানতে চাইলেন, কেন গেছি। জানালাম আরজু ভাইর সাথে দেখা করবো। আরজু ভাই অনেক বছর ধরেই জনসংযোগ বিভাগের বস। আমাদের খুব প্রিয় একজন অফিসার। সাথে ক্যামেরা নেই, একা যাচ্ছি। কেউ কোন কিছু ভাবলো না। আমি আরজু ভাইর রুমের ধারে কাছে গেলাম না। বরং উল্টো দিকে সিইসি হুদা সাহেবের চেম্বারের দিকে গেলাম। পারসোনাল অফিসারের রুমে গেলাম, আলাপ-সালাপ জুড়লাম। তারপর কার্ড দিয়ে বললাম, জাস্ট ৫ মিনিট, স্যারের সাথে একটু দেখা করবো। অফিসার বললেন, দেখা পাবেন না বলেই মনে হয়, আগে থেকে না বলে এলে দেখা দেন না। তবে আপনার কার্ডটা আমি স্যারকে দিচ্ছি। পার্সোনাল অফিসারের রুমে ঢুকতেই ডানে দেয়ালের সাথে কয়েকটা সাধারণ চেয়ার। সাধারণ হলেও অনেক অসাধারণ ছিলো আমার জন্য। ওই চেয়ারে বসলে ভেতরের দরজা খুললেই সরাসরি সিইসিকে দেখা যায়, তিনিও দেখেন।

আমি পার্সোনাল অফিসারের টেবিলের সামনে থেকে উঠে এই চেয়ারগুলোর একটিতে বসলাম। অফিসার একটু পর পর স্যারের রুমে ঢোকেন, স্যারকে আমি দেখি, স্যারও আমাকে। চোখে চোখ পড়ছে বারবার। আমি টাই পরা এক সুবেশ যুবক, কত লোক যায় আসে, আমাকে ডাকেন না! লজ্জা লজ্জা লাগতে শুরু করলো। সময় যাচ্ছে, আধা ঘণ্টা কেটে গেলো। এতক্ষণে সিইসি সাহেব আমার উপস্থিতিকে আমল দিতে শুরু করেছেন বলে মনে হলো। এবার আমি চোখাচোখি হতেই সালাম দিলাম। উত্তর দিলেন কিনা দেখার আগেই দরজা বন্ধ। একটু পর ভেতর থেকে এসে পিও সাহেব টেবিল থেকে আমার কার্ডটা নিয়ে আবার ভেতরে গেলেন। সাথে সাথে সোমা ইসলামকে ফোন করলাম। চুক্তি অনুযায়ী তিনি ফোন কেটে দিলেন। মিনিটখানেকের মধ্যে তার সাথে থাকা ক্যামেরাপারসন আমার কাছে হাজির। আর সাথে সাথে সিইসির পিও এসে বললেন, স্যার ডাকছেন। দ্রুত টাই ঠিক করতে করতে গেলাম। সালাম দিলাম। জানালাম এক কাপ চা খাবো, আমরা দুজন। তারপর বিদায়। একটু কথা বলবো এই ফাঁকে।স্যার ক্যামেরার জন্য একটু বিব্রত মনে হলো, তাকে আশ্বস্ত করলাম, অনুমতি ছাড়া রেকর্ড করবো না। চা আসতে আসতে তাকে কনভিন্স করলাম। বললাম, কোন প্রশ্ন নেই। শুধু বিধিবিধান মেনেই আমাদের একটু জানাবেন, আসন্ন নির্বাচন অর্থবহ করার ব্যাপারে কমিশনের আস্থা কতটুকু।

সিইসি কয়েক সেকেন্ড ভাবলেন। তারপর কথা বললেন তিন মিনিট। ব্যস। কেল্লা ফতে। স্যারকে ধন্যবাদ জানিয়ে ক্যামেরার ক্যাসেট খুলে নিজের পকেটে নিলাম। তারপর চুপচাপ নিরীহ ভঙ্গিতে নিচে নামলাম। সোমাকে বললাম, ওনার টিমের গাড়িটা আমায় পৌঁছে দিলে উপকার হয়। মজা করতে করতে সব সাংবাদিকের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি অফিসে রওয়ানা হলাম। সারাদিন কোন আওয়াজ নেই আমাদের। অন্য টিভিগুলোকে একটা ধাক্কা দেবার প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছি। সন্ধ্যা সাতটায় নিউজ টাইম। চ্যানেল আইতে সিইসির একান্ত সাক্ষাৎকার যখন অন এয়ার হলো তখন আর সেদিনের মত সিইসির কাছে যাবার উপায় নেই। অন্যদের ফাঁকি দিয়ে বিশেষ নিউজ করা, টাফ জব। কিন্তু যতই টাফ হোক না কেন, আত্মবিশ্বাস ও কৌশল দিয়ে অনেক দুরূহ কাজ করা যায়, এটা আমরা মানি। সেই সময় আমাদের সিএনই আমাকে আরেকটি প্রায় অসম্ভব কাজ দিয়েছিলেন। সেটা আরেক দিন বলবো।

লেখক : প্রধান বার্তা সম্পাদক, আমাদের নতুন সময়।

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print