ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

কর্মকর্তা ও নেতাদের খুশি করতে সুন্দরীদের ফ্ল্যাটে পাঠাতেন জি কে শামীম

.

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

.

বেপরোয়া টেন্ডারবাজি ও ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে যুবলীগ নেতা জি কে শামীমকে গ্রেফতারের পর অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে। শামীম সরকারি প্রায় সব টেন্ডারে ভাগ বসাতেন। বিভিন্ন কায়দায় তিনি টেন্ডার বাগিয়ে আনতেন। এজন্য মোটা অংকের ঘুষ দিতেন সংশ্লিষ্ট মহলে।

জি কে শামীমের রাজধানীর নিকেতনের অফিসে রাখা হতো বস্তাভর্তি টাকা। ঘুষের কাজ বাকিতে হয় না তাই টাকার ওই বস্তা থেকে প্রভাবশালীদের কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দেয়া হতো।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মুখ খুলতে শুরু করেছেন ‘টেন্ডার কিং’খ্যাত ঠিকাদার জি কে শামীম। তিনি এরই মধ্যে পূর্ত মন্ত্রণালয়ে কর্মরত বেশ কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তার নামও বলেছেন।

যারা মোটা অঙ্কের কমিশনের বিনিময়ে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় শামীমকে অবৈধ পথে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দিতেন। এছাড়া জি কে শামীমের পক্ষে মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পদের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাও বিভিন্ন টেন্ডার সংক্রান্ত ফাইল দেখভাল করতেন।

বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা ছিল তার হাতের মুঠোয়। তিনি বেশ কয়েকজন ঠিকাদার ও তদবিরবাজের সমন্বয়ে পূর্ত মন্ত্রণালয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন।

সূত্র বলছে, অফিস শেষে প্রায় প্রতিদিনই জি কে শামীমের নিকেতনের অফিসে যেতেন পূর্ত মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত কয়েকজন কর্মকর্তা। সেখানে গভীর রাত পর্যন্ত থাকতেন তারা।

যদিও বর্তমান মন্ত্রীর আমলে এখনও তারা সেভাবে সুবিধা করতে পারছেন না। মন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুরু থেকেই একজন খোলামেলা সোচ্চার ব্যক্তি। যে কারণে চক্রটি ভিন্নপথে কাজ হাসিলে সক্রিয়।

সূত্র বলছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে বালিশকাণ্ড প্রকাশিত হওয়ার আগে ২০১৮ সালেই সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়। কিন্তু তখন দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেয়া হয়।

গণমাধ্যমে বালিশকাণ্ড প্রকাশ হয়ে পড়লে দেশজুড়ে তোলপাড় হয়। এই বালিশকাণ্ডের আসল হোতা মূলত জি কে শামীম। কারণ একটি বিশেষ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে শতকোটি টাকার কমিশন বাণিজ্য হয়।

সূত্র বলছে, জি কে শামীমকে অভিনব কৌশলে সুবিধা পাইয়ে দিত পর্দার আড়ালে থাকা একটি চক্র। টেন্ডার পাওয়ার পর ১০ শতাংশ কাজ করে দীর্ঘদিন কাজ ফেলে রাখতেন শামীম। এরপর কয়েক দফা বাড়িয়ে নেয়া হতো টেন্ডারমূল্য।

দাফতরিক ভাষায় এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ভেরিয়েশন। জি কে শামীমের প্রতিটি কাজে শত শত কোটি টাকার ভেরিয়েশন হয়। যার ভাগ পান প্রভাবশালী কর্মকর্তারা।

পূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় রাজস্ববোর্ড ভবন নির্মাণে ভেরিয়েশনের নামে এমন দুর্নীতি হয়। মাত্র ৮০ কোটি টাকার এই ভবন নির্মাণের ব্যয় কয়েক দফা বাড়িয়ে ৩৫০ কোটিতে নিয়ে যাওয়া হয়।

বাড়তি এই টাকার বড় অংশ দুর্নীতিবাজরা নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেন। শুধু ভেরিয়েশন করে নয়, টেন্ডার পেলেই দুর্নীতি করার অবারিত সুযোগের কারণে ঢাকার বাইরের বড় বড় অনেক কাজের টেন্ডার স্থানীয়ভাবে না ডেকে ঢাকায় করা হয়।

সূত্র বলছে, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় এমন জাল-জালিয়াতির আড়ালে মোটা অঙ্কের ঘুষ লেনদেন হয়। কিন্তু ঘুষের কারবার কখনও বাকিতে বা চেকের মাধ্যমে হয় না। সবই করতে হয় নগদে। এ কারণে জি কে শামীম তার অফিসেই সব সময় কয়েক কোটি টাকা নগদ জমা রাখতেন।

যখনই প্রয়োজন হতো নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পছন্দের জায়গায় ঘুষের টাকা পৌঁছে দিতেন।

যুবলীগ নেতা জি কে শামীম সরকারি প্রায় সব টেন্ডারে একা ভাগ বসাতেন। এ জন্য যাকে যা দিয়ে সন্তুষ্ট করা যেত সেটিই অফার করতেন টেন্ডারবাজ শামীম। এ ক্ষেত্রে তার হাতিয়ার ছিল উৎকৃষ্ট মানের উপঢৌকন, দামি প্রসাধনী, কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ও সুন্দরী তরুণী।

শামীম টেন্ডার বাগাতে সুন্দরী নারীদের টোপ হিসেবে ব্যবহার করতেন। তার এই টোপ গিলতে শামীমের ডেরায় অনেক ভিআইপির আনাগোনাও ছিল বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

নাটক, সিনেমার পরিচিত মুখ, নায়িকা ও মডেলকে মনোরঞ্জন থেকে শুরু করে টেন্ডার বাগিয়ে নিতে ব্যবহার করতেন শামীম। উচ্চপদস্থ বিভিন্ন কর্মকর্তার নিয়মিত আবদার ছিল, শুধু টাকা দিলেই হবে না, চাই উঠতি বয়সের নায়িকার সঙ্গ। কর্মকর্তাদের কাছে দীর্ঘ তালিকা পাঠাতেন শামীম।

ছবিসহ সেই তালিকা দেখেই বাছাই করে নিতেন মডেল ও নায়িকাদের। একইভাবে প্রভাবশালী নেতাদের খুশি করতেও মডেল ও নায়িকাদের পাঠানো হতো ফ্ল্যাটে-তারকা হোটেলে। দেশের বাইরেও নিয়ে যাওয়া হতো তাদের। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি পুলিশের কাছে এ বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে জিকে শামীম ও যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া।

শামীম জানান, অনেকেই টাকার সঙ্গে নারীসঙ্গ চাইত। পাঁচতারকা হোটেলে কক্ষের ব্যবস্থাও করতে হতো। শামীমের সঙ্গে সখ্য অর্ধশতাধিক সুন্দরী তরুণীর। এর মধ্যে এক ডজনেরও বেশি পরিচিত নায়িকা ও মডেল। টেন্ডার বাগিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও নেতাদের কাছে পাঠানো হতো তাদের।

শুক্রবার নিকেতনের নিজ কার্যালয়ে অবৈধ অস্ত্রসহ আটক হন যুবলীগ নেতা জিকে শামীম। এ সময় র্যাব বের অভিযানে তার কার্যালয় থেকে বিপুল পরিমাণে টাকা ও এফডিআর উদ্ধার করা হয়।

অভিযান শেষে বিকালেই প্রেস ব্রিফিং করে র্যাব বের নির্বাহী মেজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম জানান, অভিযানে শামীমের কার্যালয় থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ এক কোটি ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৬৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট রেট) জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে তার মায়ের নামে ১৪০ কোটি টাকা ও ২৫ কোটি টাকা তার নামে। এ ছাড়াও ৭টি শটগান, বিদেশি মুদ্রা ও মাদক উদ্ধার করা হয়েছে।

র্যাব বের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জিকে শামীমকে টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগে আটক করা হয়েছে। জিকে শামীম সরকারি টেন্ডারগুলো বাগিয়ে আনতেন। এ জন্য মোটা অঙ্কের ঘুষ দিতেন তিনি।

গ্রেফতারের পর জিকে শামীমের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শনিবার রাতে ঢাকা মহানগর হাকিম মাহমুদা আক্তার এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে তার সাত দেহরক্ষীর প্রত্যেককে অস্ত্র মামলায় চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।

রিমান্ডপ্রাপ্ত জিকে শামীমের দেহরক্ষীরা হলেন- দেলোয়ার হোসেন, মুরাদ হোসেন, জাহিদুল ইসলাম, শহীদুল ইসলাম, কামাল হোসেন, সামসাদ হোসেন ও আমিনুল ইসলাম।

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print