
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সারাদেশে জুঁয়াড়ি মাদক ব্যবসায়ী, টেন্ডারবাজদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চললেও চট্টগ্রামে তেমন কার্যক্রর অভিযান নেই বললেই চলে। প্রথম দিকে কয়েকটি ক্লাবে র্যাব অভিযান চালালেও পরে তা থেমে যায়।
ফলে বাণিজ্যিক নগরী ও ব্যবসা বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রামে বহাল তবিয়তে রয়েছে দলীয় প্রভাব খাঁটিয়ে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি এবং অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনকারী সম্রাট, জিকে শামীম, আনিসুর রহমান, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াদের সহযোগীরা।
নগরীর বায়েজিদ থানা এলাকার একাংশের নিয়ন্ত্রক করছে তিন চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের নিয়ে গঠিত সিন্ডিকেট।
বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদল থেকে যুবলীগে ডিগবাজি দেয়া এই তিনজন পাহাড় কাটা, মাদক ব্যবসা, টেন্ডারবাজি চাঁদাবাজি আর জুয়ার আসরের অবৈধ অর্থে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তাদের ভয়ে রীতিমত তটস্থ পশ্চিম বায়েজিদ চন্দ্রনগর, শহীদ নগর, চৌধুরী নগর, গ্রীনভ্যালি, নীলাচল, ডেবার পাড় ও বলবিথীসহ জেড আবাসিক ও গুলশান আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা। তারা তিনজনই সেখানকার হর্তাকর্তা। দিনের আলো কিংবা রাতের আধাঁরে স্ক্যাভেটর দিয়ে পাহাড় কাটা,সরকারী বেসরকারী ভুমি দখল বাণিজ্য,মাদক ব্যবসা আর জুয়ার আসর সবই চলে তাদের নির্দেশে। তারাই যেন সেখানকার সরকার প্রধান।
স্থানীয় সুত্র জানায় বাহার উদ্দিন বাহার, সামসুদ্দিন বাদল ও সোর্স আনোয়ার গত ১১ বছর ধরে পশ্চিম বায়েজিদের অঘোষিত রাজা। ২০০৩ সালেও অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় বাহার উদ্দিন বাহার ছিল বায়েজিদের যুবদল সন্ত্রাসী পেট কাটা বাবরের সহযোগী। তখন থেকেই মুলত তার অপরাধ জগতের যাত্রা শুরু। পেটকাটা বাবরের হয়ে বায়েজিদের চন্দ্রনগর, শহীদ নগর, চৌধুরী নগর, গ্রীনভ্যালি, নীলাচল, ডেবার পাড় ও বলবিথীসহ জেড আবাসিক ও গুলশান আবাসিক এলাকায় পাহাড় কাটা,সরকারী বেসরকারী ভুমি দখল বাণিজ্য,মাদক ব্যবসা আর জুয়ার আসর সবই নিয়ন্ত্রন করত তারা।
র্যাবের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে বাবর মারা যাওয়ার পর এ তিনজনই ঐ এলাকার নিয়ন্ত্রন নেয়। ক্ষমতার পট পরিবর্তন হলে বাহার লেবাস পাল্টিয়ে হয়ে যুবদল থেকে যুবলীগ নেতা। সরকারী বেসরকারী পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি এবং পাহাড় কেটে অন্যকে জায়গা খালি করে দেয়ার কারণে তিনি মাটি বাহার নামে পরিচিতি লাভ করে। পশ্চিম বায়েজিদের যেখানেই পাহাড় কাটা হয় সেখানে বাহার বাদল সিন্ডিকেট। তাদের অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রনের জন্য গড়ে তোলে একটি সিন্ডিকেট বাহিনী। মাটি বাহার,বাদল এবং পুলিশের সোর্স আনোয়ারের ছত্র ছায়ায় সন্ত্রাসী মিঠু, বোম আলম, বাদলের ভাই লিটন, শাহজাহান, সোর্স আনোয়ারের ভাই আবু, বোন জামাই মঈনুদ্দিন, ভাগিনা বাবলু এবং তার প্রধান সহযোগি শুক্কুর গং মিলে গড়ে তোলে ইয়াবার বিশাল সম্রাজ্য
অভিযোগ রয়েছে, কিছুদিন আগে র্যাবের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে শুক্কুর নিহত হওয়ার পর পুরো বাহিনী আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে বায়েজিদ থানার এসআই গোলাম মোহাম্মদ নাসিম,এ এস আই শরীফের সহযোগিতায় তারা আবারো এলাকায় অবস্থান নেয়। এস আই নাসিম ছাত্র জীবনে নগরীর ঝাউতলা এলাকায় ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।
আওয়ামীলীগের প্রথম দফায় ক্ষমতার শেষের দিকে আবুল কাসেমকে সভাপতি ও মো. ইয়াকুবকে সাধারন সম্পাদক করে গঠিত ২নং জালালাবাদ ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের কমিটিতে প্রথমে স্থান না পেলেও পরবর্তীতে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে কমিটির সর্বশেষ সদস্য হিসেবে যুক্ত হন বাহার। এর পর থেকেই মুলত তাদের অপরাধ কর্মকান্ডের দৌরাত্ম্য বাড়তে থাকে।
২০১৪ সালে বায়েজিদে মিরাজ হত্যা মামলার প্রধান আসামী ছিলেন পুলিশের সোর্স আনোয়ার। তাঁর বিরুদ্ধে বর্তমানে হত্যা,অস্ত্র ও মাদক মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। পুলিশের কিছু কর্মকর্তাও সাথে তার উঠাবসার কারণে ডেবার পাড় এলাকার মানুষ তার কাছে জিম্মি। ডেবার পাড় মহল্লা কমিটির পক্ষ থেকে আনোয়ারের ব্যাপারে প্রশাসনকে দফায় দফায় অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পায়নি উল্টো নানা ধরনের হুমকি ধমকির সম্মুখীন হতে হয়। আনোয়ারের বাসা সংলগ্ন বাংলাদেশ ব্যাংক মাঠে চলে বিশাল জুয়ার আসর। এলাকার যুবকদের অনেকেই এই জুয়ার কারণে সর্বশান্ত। স্থানীয় এলাকাবাসী জুয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে আনোয়ার নিজেকে পুলিশের আপন লোক পরিচয়ে তাদেরকে বিভিন্ন মামলায় জড়ানোর ভয়ভীতি দেখায়।
বায়েজিদ থানার এস আই নাসিমসহ কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তার যোগসাজসে গত কিছুদিন আগে নাগিনী পাহাড় চৌধুরী নগরের পাহাড় কেটে ৪ একর জায়গা জবর দখল করে। এ ছাড়া পাহাড়ি কাটার মাটি বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ ভান্ডার গড়ে তোলে। এ দুটি পাহাড় কাটার দায়ে পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করেন।এসব এলাকায় কোন বাসিন্দা প্লট তৈরি কিংবা ভবন নির্মান করতে গেলেও তাদেরকে মোটা অংকের চাঁদা দিতে হয়। তাদের দাবীমতে চাঁদা না দিলে নিজের বাহিনীর লোকজন দিয়ে রাতের আধাঁরে সংশ্লিষ্ট মালিকের নির্মান সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায়।
এ ছাড়াও বায়েজিদের বিস্তীর্ণ এলাকায় সরকারী পাহাড় কেটে বাস্তহারা সমিতি গঠনের নামে ৫ শতাধিক লোকের কাছ থেকে প্রতিমাসে ৩ শত টাকা করে আদায় করে সোর্স আনোয়ার। পাহাড় কাটা শুরু হলে প্রত্যেক লোকের কাছ থেকে আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে প্রতিজনের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেয়। এতে করে কেউ ভাগ্যগুনে প্লট পেলেও আবার অনেকেই অপেক্ষায় থাকে বছরের পর বছর। স্থানীয় কাউন্সিলর সাহেদ ইকবাল বাবুর প্রত্যক্ষ মদদে এসব অপকর্ম চলে আসছে বলে স্থানীয়দের অভিমত। বাদল এবং বাহারের নামে বায়েজিদসহ নগরীর বিভিন্ন থানায় হত্যা,অস্ত্র,পাহাড়কাটাসহ এক ডজনেরও বেশী মামলা রয়েছে। সরকারের চলমান অভিযানেও বাহার-বাদল-আনোয়ার সিন্ডিকেট বহাল তবিয়তে রয়েছে।
হত্যা চাঁদাবাজি পাহাড়কাটাসহ বিভিন্ন অভিযোগে এই সিন্ডিকেট সদস্যদের নামে অসংখ্য মামলা অভিযোগ থাকলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে না।
স্থানীয়দের অভিযোগ পুলিশের ছত্রয়ায়ায় তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকলেও সম্প্রতি র্যাবের কয়েকটি অভিযানের পর এই সিন্ডিকেট সদস্যরা এলাকা থেকে আবাও গা ডাকা দিয়েছে। বন্ধ করে দিয়েছে তাদের সাথে যোগাযোগের সকল মাধ্যম।
এসব সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে জানতে চাইলে সিএমপির বায়োজিদ বোস্তামী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতাউর রহমান খন্দকার পাঠক ডট নিউজকে বলেন, এসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা পলাতক থাকায় গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। তবে পুলিশের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। হত্যা মামলাটি এখন থানায় নাই। এটি আদালতে বিচারধীন। অন্য মামলায় তাদের পেলে গ্রেফতার করা হবে।
পরবর্তী প্রতিবেদন- “রেলের জমিতে মার্কেট করে দোকান বরাদ্দের নামে অর্ধশত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জহির, শাহ আলম ও আয়ুব আলী সিন্ডিকেট”