
বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে প্রেমিকাকে ৮ মাস আটকে রেখে একের পর এক ধর্ষণ এবং গর্ভপাতের ঘটনায় চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় দরবেশহাট এলাকা থেকে প্রেমিক মো. ইমরান ও তার ভাই মো. হারেছকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে এই দু’ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন লোহাগাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ জাকির হোসেন মাহমুদ।
ওসি বলেন, আদালত থেকে ওই দু’জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি হয়েছে। সেই গ্রেফতারী পরোয়ানামূলেই তাদেরকে গ্রেফতার করে আজ শনিবার সকাল দশটার দিকে চট্টগ্রামে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেফতার মো. ইমরান ও মো. হারেছ ওই উপজেলার দরবেশ হাট এলাকার মো. ইছহাকের পুত্র।
এর আগে প্রতারণার শিকার এক তরুনী আদালতে প্রতারক ইমরান তার বড়ভাই মো. হারেছ এবং তাদের মা নূরজাহান বেগমকে বিবাদী করে লোহাগাড়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় তরুনীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ডেকে নিয়ে আটকে রেখে একের পর এক ধর্ষণ, গর্ভপাত, যৌতুক দাবি এবং শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয় ইমরানের বিরুদ্ধে। একইভাবে ইমরানের বড়ভাই হারেছ ও তার মা নূর জাহান বেগমের বিরুদ্ধে ইমরানের অপরাধমূলক এসব কর্মকাণ্ডে সহযোগিতায় অভিযোগ আনা হয়।
প্রতারণার শিকার তরুনীর আইনী পরামর্শক এডভোকেট রওশন আরা ঝরণা বলেন, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ির এই তরুনীর সাথে মোবাইল ক্রসকানেকশনে প্রেম হয় চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার দরবেশহাট এলাকার ইমরানের। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তরুনীকে ভাড়াবাসায় ডেটে নিয়ে আটমাস আটকে রেখে একের এক ধর্ষণ করে প্রেমিক ইমরান। বিয়ে করছি-করবো চলতে থাকে প্রেমিক ইমরানের কাল ক্ষেপন। এরমধ্যে দু’বার অন্ত:সত্ত্বা হওয়ার পর জোরপূর্বক তরুনীর গর্ভপাত ঘটানো হয়। আর এই নিয়ে শুরু হয় দু’জেনর চরম দ্বন্দ্ব। বিষয়টি পাশ্ববর্তিরা জানার পর তাদের দু’জনকে কাজী বাড়ি ডেকে নিয়ে বিয়ে পড়িয়ে দেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার। তবে সেই বিয়ের এক মাস না পেরুতেই তরুনীর গ্রামের বাড়িতে পৌছে দেয়া হয় ডিভোর্স লেটার। এই বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় সমাজপতি, থানা-পুলিশের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও আইনী আশ্রয় না পেয়ে সবশেষে আদালতে মামলা ঠুকেন প্রতারণার শিকার ওই তরুনী। আদালত তরুনীর অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিতের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন’কে (পিবিআই’কে) তদন্তের নির্দেশ দেন।
মামলার অভিযোগ উল্লেখ করা হয়, তরুনী বাড়ি থেকে পালিয়ে ইমরানের কাছে যাওয়ার সময় প্রায় আড়াই লাখ টাকার স্বর্ণালংকার এবং টাকা নিয়ে যায়। সেগুলো আত্মসাত করে ফের ব্যবসার কথা বলে যৌতুক চায় ইমরান। তবে যৌতুকের দিতে না পারায় বেধম মারধরের পর সর্বশেষ গর্ভপাত ঘটিয়ে এক মাসের মধ্যেই এক কাপড়ে বাবার উদ্দেশ্যে তরুনীকে বাসে তুলে দেয়া হয়। একই সময়ে ডাকযোগে পৌছে দেয়া হয় ডিভোর্স লেটার। আদালতে তরুনীর দায়েরকৃত মামলার সূত্রধরে তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে বলে বিবাদিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।