
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘উচ্চ শিক্ষিত জাতিই পারে দারিদ্র ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার। সুশিক্ষিত ছাড়া কোনো জাতি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত হতে পারে না। তাই ১৯৭১ পরবর্তী বাংলাদেশ যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত তখন জাতির জনক শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শনিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (৫০ বছর পূর্তি) সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন। তিনি প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করারও ঘোষণা দেন।
সকাল সাড়ে দশটায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শনিবার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি চাই না। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে অস্ত্রের বদলে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে হবে। অবৈধভাবে ক্ষমতায় যারা আসে তারা দেশের উন্নতি না করে নিজেদের উন্নয়নে ব্যস্ত ছিল বলে একসময় দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে এনেছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা উল্লেখ শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটালাইজশনের ফলে আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ শুভক্ষণে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারছি। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে ২০০টিরও অধিক সেবা দেয়া হচ্ছে। অনলাইনের মাধ্যমে পরীক্ষার ফলাফল থেকে শুরু করে ভর্তির ও চাকরির আবেদন সবই করা যাচ্ছে ।
শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধ্বে সঠিক ইতিহাস জানার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশের রয়েছে এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। বর্তমান প্রজন্মকে এ ইতিহাস জানতে হবে। মিলিটারি প্রশাসকদের জন্য দেশ অন্ধকারে ছিল। তারা ইতিহাসকে বিকৃত করেছে। যার ফলে ৭৫ পরবর্তী একটি প্রজন্ম এ ইতিহাস জানা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী তার আরো বলেন, যে সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, ফাঁসি হয়েছে তাদের একসময় মন্ত্রী করা হয়েছিল, তাদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেওয়া হয়েছিল, রাজনীতি করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু তাদের বিচার শুরু করেছিলেন। আমরা পুনরায় ক্ষমতা এসে তাদের বিচার শেষ করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করছি। প্রতিটি বিভাগে করবো। আগে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। আমরা অনেক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টেক্সটাইল, মেরিন বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। বেসরকারি উদ্যোক্তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন চাইল বলছি, অমুক জায়গায় করলে অনুমোদন পাবেন।
১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সমুদ্রসীমা আইন করেছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা সমুদ্রসীমা নির্ধারণের উদ্যোগ নিই। ২০০৮ সালে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক মামলায় জয়ী হই। এখন আমাদের সমুদ্রসম্পদ কাজে লাগাতে হবে। তাই কক্সবাজারে সমুদ্রগবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছি।
বক্তব্য শেষে সকাল ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এসময় তিনি সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকেট উন্মোচন করেন।
এর আগে অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রফেসর ইমেরেটাস ড. আনিসুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।