
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টা ৩১ মিনিট। বিশ্বের বুকে রচিত হলো নতুন ইতিহাস। পৃথিবীর মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করল আরেকটি দেশ, যার নাম বাংলাদেশ।
১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পরাজয় মেনে নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণের দলিলে সই করেন পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমাণ্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজি। বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন মিত্রবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা।
দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেয় বাঙালি জাতি। দেশের প্রতিটি প্রান্তে শুরু হয় বিজয়ের মিছিল। আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে পুরো বাঙালি জাতি।
আজ ১৬ ডিসেম্বর ২০২১। বিজয় লাভের ৫০ বছর। বাঙালি জাতির গৌরবের দিন, মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর দিন। মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদেরকে আজ সারাদেশে বিশেষভাবে শ্রদ্ধা জানানো হবে। ১৬ কোটি বাঙালি সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করবে দেশের বীর সন্তানদের। যাদের ৯ মাসের সংগ্রাম ও রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি আমাদের লাল সবুজের পতাকা।

মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের স্মরণে নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে ভোর থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলা ও ইউনিয়নে পালিত হবে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি।
অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছরের বিজয়ের গুরুত্ব একটু আলাদা। কারণ এ বছর স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের বিজয় দিবসের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ। ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে গতকাল বুধবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে তিনি ঢাকায় পৌছান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের অংশ হিসেবে আজ বিকেল সাড়ে ৪টায় দেশব্যাপী শপথ পাঠ করাবেন।
দেশের সংস্কৃতি, প্রকৃতি ও পরিবেশ এবং ৫০ বছরের অগ্রগতি তুলে ধরতে দুই দিনের কর্মসূচির পরিকল্পনা করা হয়েছে। উদ্বোধনী দিনের অনুষ্ঠানে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে। এতে ৬টি দেশের সৈন্যরা মার্চ পাস্টে অংশ নেবে। দুই দিনব্যাপী আলোচনা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, ভারতের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ দেবেন।
আজ সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে।
রক্তগঙ্গার বুক চিরে ১৬ ডিসেম্বর ওঠে স্বাধীনতার সূর্য। চেতনার বিজয় নিশান ওরে বাংলার ঘরে ঘরে। বিজয়ের ৫০ বছর বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে সারাদেশে উদযাপন করা হচ্ছে।
বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের বিভিন্নপ্রাপ্ত থেকে পাওয়া খবর-
চট্টগ্রামে বর্ণাঢ্য আয়োজনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মহান বিজয় দিবস। আজ বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে সুর্যোদয়ের সাথে সাথে ৫০ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে বিজয়ের কর্মসূচির সূচিত হয়। এরপর জেলা প্রশাসন কর্তৃক চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
সকাল ৮টায় নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হয়। বাংলাদেশ পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, বিএনসিসি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, কারারক্ষী, নগরীর বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ স্কাউটস, রোভার স্কাউটস, গার্লস গাইড এবং শিশু কিশোর সংগঠন কর্তৃক বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ ও শারীরিক কসরত প্রদর্শনী চলছে চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে।
সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শেখ রাসেল চত্বরে সংবর্ধনা প্রদান করা হবে।
নোয়াখালীতে সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে ৫০টি তোপধ্বনির পর কেন্দ্রীয় শহীদ স্মৃতিফলকে সর্বস্তরের মানুষ পুস্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। ফেনীতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে বিজয় দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়।
বৃহস্পতিবার ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে মেহেরপুর শহরের কলেজমোড়ে শহীদবেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের মানুষ। চুয়াডাঙ্গায় শহীদ হাসান চত্বরে ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্যদিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়।
ঝিনাইদহে নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হচ্ছে গৌরব ও ঐতিহ্যের বিজয়ের ৫০ বছর পুর্তি।
এছাড়া বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে রাজশাহীর শহীদ মিনারে জাতির বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। নাটোরে দিনের শুরুতেই শহরের স্বাধীনতা চত্বরে মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মৃতি সৌধ এলাকায় ৫০ বার তোপধ্বনি করার পর জাতীয় পতাকার আনুষ্ঠানিক উত্তোলন করা হয়।
নরসিংদীতে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। প্রতুষ্যে মোসলেহ উদ্দিন ভূইয়া স্টেডিয়ামে তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের শুভ সূচনা করা হয়। এরপর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের জনতা।
গাজীপুরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ৫০ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। ভাওয়াল রাজবাড়ি মাঠসংলগ্ন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিফলকের শহীদ বেদিতে ফুলদিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
টাঙ্গাইলে সরকারি-বেসরকারি এবং মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এছাড়া ৫০ বার তোপধ্বনি, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ও শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, স্টেডিয়ামে কুচকাওয়াজ এবং শরীরচর্চা প্রদর্শন করা হয়।
প্রথম প্রহরে ৫০ বার তোপধ্বণির মধ্য দিয়ে ময়মনসিংহে বিজয় দিবসের উদ্বোধন করা হয়।
বাগেরহাটে শহরের দশানী মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যে দিয়ে দিনটির শুভ সূচনা হয়। বিজয় দিবস উপলক্ষে হাসপাতাল, শিশু সদন ও কারাগারে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। সব সরকারি, আধা সরকারি ও শায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে আলোকসজ্জ্বা করা হয়েছে।
এছাড়া লক্ষ্মীপুর, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে।